বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫, ২৫ বৈশাখ ১৪৩২

ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী

হাবিবুর রহমান বাপ্পা, সহকারী শিক্ষক, শহীদ বীর-উত্তম লে. আনোয়ার গার্লস কলেজ, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট
  ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী
ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী

অষ্টম অধ্যায়

গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক

যে তাপমাত্রায় কোনো কঠিন পদার্থ তার অবস্থা পরিবর্তন করে তরল পদার্থে পরিণত হয়, সেই তাপমাত্রাকে ওই কঠিন পদার্থের গলনাঙ্ক বলে। আবার যে তাপমাত্রায় একটি তরল পদার্থ তার অবস্থা পরিবর্তন করে কঠিন পদার্থে পরিণত হয় তাকে হিমাঙ্ক বলে। প্রকৃতপক্ষে গলনাঙ্ক এবং হিমাঙ্ক আসলে একই তাপমাত্রা। উদাহরণ দেওয়ার জন্য বলা যায় পানির তাপমাত্রা কমাতে কমাতে যখন ০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়, তখন সেটি জমে বরফ হতে শুরু করে। আবার জমাট বাধা বরফের তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে যখন সেটি ০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়, তখন সেটি গলে পানি হতে শুরু করে।

মোমের গলনাঙ্ক ৫৭ক্কঈ। তুমি কিভাবে সেটি বের করবে? অথবা এটা দিয়ে কী বোঝায়? এটি বের করতে হলে তাপমাত্রা মাপার জন্য একটি থার্মোমিটার প্রয়োজন। যেহেতু জ্বর মাপার থার্মোমিটার শুধু তোমার শরীরের তাপমাত্রার কাছাকাছি তাপমাত্রা মাপতে পারে, কাজেই তোমাকে ০ ডিগ্রি থেকে ১০০ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা মাপতে পারে সেরকম একটি থার্মোমিটার প্রয়োজন। এ ব্যাপারে তোমার শিক্ষক তোমাকে সাহায্য করতে পারেন এবং স্কুলের ল্যাবরেটরিতে তোমাদের পরীক্ষাটি করে দেখাতে পারেন। যেহেতু গলনাঙ্ক এবং হিমাঙ্ক একই তাপমাত্রা কাজেই এই পরীক্ষায় একই সঙ্গে গলনাঙ্ক এবং হিমাঙ্ক বের করা হবে। যদি দুটির মধ্যে একটু খানি পার্থক্য পাওয়া যায় তাহলে সেগুলোর গড় নিলে প্রকৃত তাপমাত্রার কাছাকাছি ফলাফল পাওয়া যাবে।

কাজ

১। একটি টেস্টটিউবে কিছু মোমের ছোট টুকরো নাও।

২। একটি বিকারে বা অন্য কোনো পাতে খানিকটা পানি নাও এবং তারজানি ব্যবহার করে থাকে ছবিতে যেভাবে দেখানো হয়েছে সেভাবে স্পিরিট ল্যাম্পের বা ভাগ দেওয়ার উপযোগী অন্য কিছুর ওপরে বসা।

৩। একটি দন্ডের সাহায্যে মোমসহ টেস্টটিউবটি পানিতে নিমজ্জিত কারো এবং একটি থার্মোমিটার টেস্ট টিউবে প্রবেশ করাও।

৪। স্পিরিট ল্যাম্পের সাহায্যে বিকারের তলদেশে ভাগ।

৫। থার্মোমিটারের পাঠ পর্যবেক্ষণ করে এ টেস্টটিউবে থাকা মোমের অবস্থার পরিবর্তন লক্ষ করো। তুমি দেখবে যে থার্মোমিটারের ভাপমাত্রার পাঠ বৃদ্ধি পাচ্ছে। থার্মোমিটারের সিয়ানের তাছাকাছি পৌঁছালে রোমের অবস্থা সাবধানতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করো।

৬। মোম যখন পেতে শুরু করবে, থার্মোমিটারের লক্ষ করো। এটি মোমের গলনাঙ্ক এবং এর মান ৫৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি হওয়ার কথা। তবে মনে রাখো, বস্তুর মধ্যে যে তাপমাত্রা থাকে তার উপর নির্ভর করে একটু বেশি কিংবা কম হতে পারে।

৭। পুরো মোমটি গলে যাওয়ার পর গলিত মোমে তাপমাত্রা আবার বাড়তে শুরু করবে।

৮। থার্মোমিটারসহ টেস্টটিউবটির নিচ থেকে বিকার, তারজালি এবং ল্যাম্প সরিয়ে নাও।।

৯। এবারে গণিত মোমের তাপমাত্রা কমতে থাকবে। থার্মোমিটারের তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করো, লক্ষ্য করো কোন তাপমাত্রার মোম জমাট বাধতে শুরু করেছে।

১০। যে তাপমাত্রা মোম জমতে শুরু করবে, সেটি হচ্ছে মোমের হিম। আলাদা আলাদাভাবে বের করা এবং হিমাঙ্কের গড় নিয়ে তোমার ফলাফলটি নিরধারণ করো।

স্ফুটনাঙ্ক

যে তাপমাত্রায় একটি তরল তার অবস্থার পরিবর্তন করে গ্যাসে পরিণত হয় তাকে ফুটনাঙ্ক বলে। তোমরা নিশ্চয়ই রান্নাঘরে কেতলিতে বা অন্য কোনো পাত্রে পানি ফুটাতে দেখেছ, তখন পানি বাষ্পে পরিণত হতে থাকে। যে তাপমাত্রায় পানি বাষ্পে পরিণত হতে শুরু করে বা ফুটতে শুরু করে সেই তাপমাত্রাকে পানির বাষ্পীকরণ বিন্দু বা স্ফুটনাঙ্ক বলে। পানির স্ফুটনাঙ্ক হলো ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পানির মতোই প্রতিটি তরল পদার্থেরই একটি নির্দিষ্ট স্ফুটনাঙ্ক রয়েছে।

প্রশ্ন: পদার্থ কী?

উত্তর : যা জায়গা দখল করে, যার ওজন আছে এবং বল প্রয়োগে বাধা প্রদান করে তাকেই পদার্থ বলে।

প্রশ্ন: পদার্থের কয় অবস্থা ও কী কী?

উত্তর : পদার্থের তিন অবস্থা। যথা: কঠিন, তরল ও বায়বীয়।

প্রশ্ন: গলনাঙ্ক কী?

উত্তর : স্বাভাবিক চাপে (১ ধঃস) যে তাপমাত্রায় কোনো কঠিন পদার্থ তরলে পরিণত হয় সেই তাপমাত্রাকে সেই পদার্থের গলনাঙ্ক বলে।

প্রশ্ন: স্ফুটনাঙ্ক কী?

উত্তর : যে তাপমাত্রায় কোনো তরল পদার্থ ফুটতে শুরু করে এবং বাষ্পে পরিণত হয় সেই তাপমাত্রাকে ঐ তরল পদার্থের স্ফুটনাঙ্ক বলে।

প্রশ্ন: আয়তন কী?

উত্তর : কোনো বস্তু যতটুকু জায়গা দখল করে তাকেই সেই বস্তুর আয়তন বলে।

প্রশ্ন: ঘনীভবন কাকে বলে? ঘনীভবনের উদাহরণ

উত্তর : বাষ্পীয় পদার্থকে ঠান্ডা করে তরলে পরিণত করাকে ঘনীভবন বলে। যেমনু জলীয় বাষ্প তাপশক্তি নির্গত করে ঠান্ডা হয়ে পানিতে পরিণত হয়।

প্রশ্ন: শীতলীকরণ কাকে বলে?

উত্তর : যে প্রক্রিয়ায় কোনো পদার্থকে গ্যাসীয় অবস্থা থেকে তরলে বা তরল থেকে কঠিনে রূপান্তরিত করা হয় তাকে শীতলীকরণ বলে।

প্রশ্ন: হাইড্রোজেন কোন ধরনের পদার্থ?

উত্তর : হাইড্রোজেন এক ধরনের গ্যাসীয় পদার্থ।

প্রশ্ন: সাধারণ লবণের গলনাঙ্ক কত?

উত্তর : সাধারণ লবণের গলনাঙ্ক ৮০১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

প্রশ্ন: পানি কয়টি অবস্থায় থাকতে পারে?

উত্তর : পানি তিন অবস্থায় থাকতে পারে।

প্রশ্ন: পানির গলনাঙ্ক কত?

উত্তর : পানির গলনাঙ্ক শূন্য (০) ডিগ্রি সেলসিয়াস।

প্রশ্ন: বিদু্যৎ পরিবাহী ও অপরিবাহী পদার্থের নাম লিখ।

উত্তর :

১. বিদু্যৎ পরিবাহী পদার্থের নাম : অ্যালুমিনিয়াম, সোনা, তামা।

২. বিদু্যৎ অপরিবাহী পদার্থের নাম : হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন।

প্রশ্ন: অধাতু বলতে কী বুঝায়?

উত্তর : অধাতু বলতে এমন পদার্থকে বোঝায় যা বিদু্যৎ ও তাপ সুপরিবাহী নয় ওজনে হালকা এবং অনুজ্জ্বল। অধাতুকে আঘাত করলে ঝনঝন শব্দ হয় না। এছাড়া এরা ঘাতসহ ও নমনীয় নয়। যেমন- হাইড্রোজেন, অক্সিজেন ইত্যাদি।

প্রশ্ন: শব্দ পদার্থ নয় কেন?

উত্তর : আমরা জানি, যা জায়গা দখল করে এবং যার ওজন আছে তাই পদার্থ। শব্দ জায়গা দখল করে না এবং শব্দের ওজন নেই। তাই শব্দ এক প্রকার শক্তি, পদার্থ নয়।

প্রশ্ন: বায়ুকে মিশ্র পদার্থ বলা হয় কেন?

উত্তর : বায়ু একটি মিশ্র পদার্থ। কারণ, বায়ুতে নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, জলীয় বাষ্পসহ বিভিন্ন ধরনের মৌলিক ও যৌগিক পদার্থ থাকে। বায়ুর এ উপাদানগুলো একে অপরের সাথে বিক্রিয়া না করে অবস্থান করে। বায়ুর এই বৈশিষ্ট্যগুলো মিশ্র পদার্থের বৈশিষ্ট্যের অনুরূপ। তাই বায়ুকে মিশ্র পদার্থ বলা হয়।

প্রশ্ন: ধাতু ও অধাতুর বৈশিষ্ট্য লেখ।

উত্তর : নিচে এদের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলোু

ধাতুর বৈশিষ্ট্য :

-ধাতু সাধারণত উজ্জ্বল।

-ধাতু সাধারণত শক্ত ও ওজনে ভারী।

-ধাতুকে আঘাত করলে ঝনঝন শব্দ হয়।

-ধাতুর মধ্য দিয়ে তাপ ও বিদু্যৎ চলাচল করতে পারে।

-ধাতু ঘাতসহ ও নমনীয়। একে পিটিয়ে পাতলা পাতে ও সরু তারে পরিণত করা যায়।

-ধাতু সাধারণত উচ্চ তাপে গলে।

হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে