শনিবার, ০৩ মে ২০২৫, ২০ বৈশাখ ১৪৩২
মুঘল সাম্রাজ্য

প্রথম বাহাদুর শাহ

শিক্ষা জগৎ ডেস্ক
  ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
প্রথম বাহাদুর শাহ
প্রথম বাহাদুর শাহ

ময়াজ্জেম বাহাদুর শাহ অষ্টম মুঘল সম্রাট। তিনি শাহ আলম প্রথম নামেও পরিচিত। তার জন্ম ১৬৪৩ সালের ১৪ অক্টোবর, বুরহানপুর (অধুনা মধ্য প্রদেশে; মহারাষ্ট্রের সীমান্তবর্তী) শহরে। ষষ্ঠ মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব ও তার হিন্দু দ্বিতীয় স্ত্রী নওয়াব বাঈ এর দ্বিতীয় সন্তান হিসেবে মোয়াজ্জাম নামে বাহাদুর শাহ-এর জন্ম হয়।

আওরঙ্গজেবের পর মুঘল সম্রাট হিসেবে তিনি ১৭০৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৭১২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ভারতবর্ষ শাসন করেছেন। পিতা আওরঙ্গজেবের শাসনামলে তিনি বেশ কয়েকবার বিদ্রোহ করে সিংহাসনে আরোহণ করার চেষ্টা করেছিলেন। ১৬৬৩ সালে তিনি মারাঠাদের হাতে ৭ বছর বন্দি ছিলেন। সম্রাট হওয়ার পূর্বে তিনি আকবরআবাদ বা বর্তমান আগ্রার কাবুল এবং লাহোরের সুবাদার ছিলেন। তার দাদা শাহজাহানের শাসনামলে, মু'আজম ১৬৫৩ থেকে ১৬৫৯ সাল পর্যন্ত লাহোরের উজির নিযুক্ত হন।

১৬৬৩ সালে শায়েস্তা খানের স্থলাভিষিক্ত হয়ে দাক্ষিণাত্যের গভর্নর হন মু'আজম। শিবাজী মুঘল দাক্ষিণাত্যের রাজধানী ঔরঙ্গাবাদের উপকণ্ঠে অভিযান চালিয়েছিলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আওরঙ্গজেব শিবাজিকে পরাজিত করার জন্য তার সর্বাধিক সক্ষম কমান্ডার রাজা জয় সিংকে প্রেরণ করেন এবং এখানে পুরন্দরের ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

রাজা জয় সিং প্রথম পুরান্দারে শিবাজিকে পরাজিত করার পরে, মুয়াজ্জেমকে ১৬৬৭ সালের মে মাসে দাক্ষিণাত্যের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এবং মহারাজা যশবন্ত সিং তাকে সহায়তা করেছিলেন।

মাত্র ২৪ বছর বয়সে পিতার শাসনকালে তিনি দাক্ষিণাত্যের প্রধান হিসেবে নিয়োজিত হন। অনুগত মেবার রাজ যশোবন্ত সিং হন তার সহকারী। ১৬৭০ সালে পিতাকে ক্ষমতাচুত্য করার প্রচেষ্টা করে বিফল হন। ১৬৮০ সালে পুনরায় একবার রাজপুত ক্ষোভ ফুসলে ক্ষমতাদখল করতে বিফল হন। ১৬৮১ সালে সম্রাট তাকে দিলিস্ন ফিরিয়ে আনেন এবং আগ্রা, লাহোর ও কাবুলের সুবাদার হিসেবে সম্রাটের কড়া পর্যবেক্ষণে ছিলেন।

কোনো প্রকৃত যুবরাজ নির্দিষ্ট না করেই আওরঙ্গজেব ১৭০৭ সালে মৃতু্য বরণ করেন। সেসময় তার জীবিত ৩ সন্তান মোয়াজ্জাম কাবুলের, আজম শাহ (আওরঙ্গজেবের প্রথম স্ত্রী দিলরাস বানু বেগমের পুত্র) গুজরাটের এবং কাম বক্স (আওরঙ্গজেবের কনিষ্ঠ সঙ্গী উদয়পুরী মহলের পুত্র) দাক্ষিণাত্যের সুবাদার ছিলেন। তিন ছেলেই মুকুট জয়ের ইচ্ছা পোষণ করেছিল এবং কাম বখশ তার নামে কয়েন তৈরি করতে শুরু করেছিল। আজম আগ্রার দিকে যাত্রা করতে এবং নিজেকে উত্তরাধিকারী ঘোষণা করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু ১৭০৭ সালের জুনে জাজৌর যুদ্ধে মোয়াজ্জামের কাছে পরাজিত হন। আজম ও তার ছেলে আলী তাবার যুদ্ধে নিহত হন। ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে আজম শাহ দিলিস্ন দখল করেন। মোয়াজ্জাম ও আজমের মধ্যে জাজাও-এর যুদ্ধ (আগ্রার নিকটবর্তী) সংঘটিত হয়। মোয়াজ্জাম জয়ী হয় এবং প্রথম বাহাদুর শাহ হিসেবে ৬৩ বছর বয়সে সম্রাট হন।

তিনি স্বর্ণ, রৌপ্য এবং তামার মুদ্রা জারি করেছিলেন। যদিও তার পূর্বসূরীদের মুদ্রাগুলি সরকারি কর্মকর্তাদের এবং বাণিজ্যে অর্থ প্রদানের জন্যও ব্যবহৃত হত। আওরঙ্গজেবের রাজত্বকাল থেকে তামার মুদ্রাগুলি তার নামের সাথে পুনরায় তৈরি করা হয়েছিল। অন্যান্য মুঘল সম্রাটদের মতো নয়, তার মুদ্রাগুলি একটি যুগলেও তার নাম ব্যবহার করেনি। ব্যক্তিগত জীবননাম, উপাধি এবং বংশউপাধিসহ তার পুরো নাম ছিল 'আবুল নাসর সৈয়দ কুতুব উদ্দিন মুহাম্মদ শাহ আলম বাহাদুর শাহ বাদশাহ। তার মৃতু্যর পর সমসাময়িক ইতিহাসবিদরা তাকে 'খুলদ-মঞ্জিল' (জান্নাতে চলে যাওয়া) নামে ডাকতে শুরু করেন। তিনি একমাত্র মুঘল সম্রাট যিনি সৈয়দ উপাধি পেয়েছিলেন, যা নবী মুহাম্মদের বংশধরদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছিল।

ইতিহাসবিদ উইলিয়াম আরভিনের মতে, সম্রাট ১৭১২ সালের জানুয়ারিতে লাহোরে ছিলেন যখন তার 'স্বাস্থ্য ভেঙ্গে' পড়ে। ২৪ শে ফেব্রম্নয়ারি তিনি তার শেষবারের মতো জনসমক্ষে উপস্থিত হন। ১৭১২ সালের ২৭-২৮ ফেব্রম্নয়ারি রাতে তিনি মারা যান।

মুঘল অভিজাত কামওয়ার খানের মতে, তিনি 'পস্নীহা বৃদ্ধি' এর কারণে মারা যান। ১১ এপ্রিল তাঁর বিধবা স্ত্রী মিহর-পারওয়ার এবং চিন কিলিচ খানের তত্ত্বাবধানে তাঁর দেহ দিলিস্নতে পাঠানো হয়। ১৫ মে মেহরৌলির মোতি মসজিদের (পার্ল মসজিদ) আঙ্গিনায় তাকে সমাহিত করা হয়, যা তিনি কুতুবুদ্দিন বখতিয়ার কাকির দরগার কাছে নির্মাণ করেছিলেন। ১৭১২ সালের সম্রাটের মৃতু্য হলে তার জ্যেষ্ঠ পুত্র জাহানদার শাহ সম্রাট হন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে