শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

ভালোবাসার তারকা দম্পতি

শোবিজে ভালোবেসে বিয়ে হয় অনেক তারকার। আবার খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে ভাঙনের সুরও শোনা যায়। প্রেম, বিয়ে ও বিচ্ছেদ নিয়মিত খবরে পরিণত হয়েছে শোবিজ অঙ্গনে। অথচ এই জগতেই এমন অনেক তারকা জুটি আছেন যারা ভালোবেসে আগে বিয়ে করে এখনো সুখে ঘর-সংসার করছেন। তেমনি কিছু ভালোবেসে বিয়ে করা তারকা দম্পতিকে নিয়ে এবারের আয়োজন। লিখেছেন মাসুদুর রহমান
  ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০
ভালোবাসার তারকা দম্পতি
ভালোবাসার তারকা দম্পতি

আলমগীর-রুনা লায়লা

দুই জগতের দুই কিংবদন্তি নায়ক আলমগীর ও সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা। সত্তর, আশি ও নব্বইয়ের দশকের সাড়া জাগানো অভিনেতা আলমগীর এখনও চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন মাঝে-মধ্যে। অন্যদিকে সত্তরের দশক থেকে মিষ্টি সুরের জাদুতে সব শ্রেণির মানুষকে বিমোহিত করে রেখেছেন কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা। সেই হিসেবে তাদেরকে কিংবদন্তি দম্পতি বললেও ভুল হবে না। ১৯৭৩ সালে গীতিকার খোশনুর আলমগীরকে প্রথমে বিয়ে করেন আলমগীর। সে ঘরে জন্ম হয় একমাত্র কন্যা আঁখি আলমগীরের। খোশনুরের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের পর ১৯৯৯ সালে রুনা লায়লাকে বিয়ে করেন আলমগীর। গত ১৮ বছর ধরে সুখেই সংসার করছেন কিংবদন্তি এ তারকা দম্পতি। আলমগীর ও রুনা লায়লা দুজনে জুটি বেঁধে অভিনয় করেন 'শিল্পী' চলচ্চিত্রে।

শহীদুজ্জামান সেলিম-রোজী সেলিম

বাংলাদেশি শোবিজের সফল তারকা দম্পতিদের মধ্যে অন্যতম শহীদুজ্জামান সেলিম ও রোজী সেলিম। একসঙ্গে কাজের সূত্র ধরে তাদের মধ্যে পরিচয় হয়, তারপর ভালো লাগা থেকে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হন দুজন। এরপর ভালোবাসার স্বীকৃতি দিতেই একসঙ্গে ঘর বাঁধেন তারা। বিয়ের পর থেকেই তাদের বোঝাপড়াটা বেশ ভালো। সুখেই চলছে তাদের সংসার। কাজের ফাঁকে বছরে দু-একবার তারা বেরিয়ে পড়েন ঘুরে বেড়াতে। রোজীর ভাষ্যে, 'বছরে অন্তত দু'বার করে হানিমুনে যাই আমরা।' এমনকি হানিমুন নিয়ে রোজী জানালেন মজার এক তথ্যও। বিয়ের রাতেই নাকি সেলিমের কাছে রোজীর বায়না ছিল সমগ্র ভারত ঘুরে দেখানোর। আর এই শর্ত পূরণ করতে সেলিম রাজি হয়েছিলেন এই শর্তে যে, রোজী কোনোদিন মশারি টানাতে পারবে না। এমনই মজার শর্ত আর দুষ্টামিমাখা ভালোবাসার সুতোয় অপূর্ব এক দাম্পত্য জীবনের বুনন শুরু হয়েছিল দুই দশক আগে। বিয়ের প্রথম দিনটি থেকে আজ অবধি ভালোবাসার এতটুকু কমতি নেই তাদের কাছে।

জাহিদ হাসান-সাদিয়া ইসলাম মৌ

হানিফ সংকেতের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান 'ইত্যাদি'র মাধ্যমেই পরিচয় হয়েছিল অভিনেতা জাহিদ হাসান ও মডেল-অভিনেত্রী মৌয়ের সঙ্গে। এ অনুষ্ঠানে 'আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে' গানটির মিউজিক ভিডিওর শুটিংয়ে তাদের প্রথম দেখা। প্রথম দেখাতেই জাহিদ হাসান, মৌকে বলেছিলেন, 'আপনাকে আমার ভালো লেগেছে। আপনাকে আমি বিয়ে করতে চাই।' প্রথম পরিচয়ে এমন কথা শুনে মৌ এত বেশি আশ্চর্য হয়েছিলেন যে, মুহূর্তের মধ্যেই তিনি জাহিদের সামনে থেকে হাওয়া। অবশ্য পরে তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দুই বছর প্রেমের পর তারা বিয়ে করে সুখের সংসার শুরু করেন। ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ তাদের সেই সুখের সংসার আজও মধুময় হয়ে আছে। ব্যস্ততার মাঝেও একটুখানি অবসর মিললেই দু'জনে কাছাকাছি থাকেন, চেষ্টা করেন একে অপরকে ভালোবেসে মুগ্ধ করতে। জাহিদ হাসান মৌয়ের স্বভাব নিয়ে বলেন, 'মৌ অনেক গুণী নারী। ও যখন যে কাজটি করে ভালো করে করার চেষ্টা করে। মৌ যেমন একজন আদর্শ স্ত্রী, তেমনি আদর্শ মা।' মৌ বলেন, 'জাহিদ স্পষ্টবাদী একজন মানুষ। ওর মাঝে কোনো ভনিতা নেই। কাজের প্রতি সে অনেক সৎ। একজন আদর্শ স্বামী ও বাবা। তবে ওর সবচাইতে বড় গুণ ও ভালোবাসতে জানে, অন্যকেও ভালোবাসাতে পারে।'

তৌকীর আহমেদ-বিপাশা হায়াত

অভিনয় জগতের আরেক অন্যতম সুখী দম্পতি তৌকীর আহমেদ ও বিপাশা হায়াত। দুজনেই নাট্যজগতের বাসিন্দা। নাটকেই তাদের পরিচয়। তৌকীর-বিপাশা জুটি এক সময় টিভি নাটকের আলোচিত জুটি ছিল। এক সময় তাদের দুজনের মধ্যে মন দেয়া-নেয়া চলে। অভিনয় জগতের জুটি, জুটি বাঁধেন জীবন সংসারেও। তাদের বিয়ে হয় ১৯৯৯ সালে। অভিনেতা আবুল হায়াতের বড় মেয়ে বিপাশা হায়াত।

বিয়ের পর বিপাশা অভিনয়ে অনিয়মিত হয়ে পড়েন। মনোযোগী হন সংসারে। কিন্তু তৌকীর অভিনয়ে থেকে যান। তবে বর্তমানে তৌকীর আহমেদ চলচ্চিত্র নির্মাণ নিয়েই বেশি ব্যস্ত। 'রূপকথার গল্প', 'জয়যাত্রা', 'দারুচিনি দ্বীপ', 'অজ্ঞাতনামা' ও 'হালদা', 'ফাগুন হাওয়ায়'র মতো আলোচিত চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন তিনি। পারিবারিক জীবনে গত ১৮ বছর ধরে যথেষ্ট সুখে আছেন তৌকীর-বিপাশা। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ে আরিশা আহমেদ ও ছেলে আরীব আহমেদ।

ওমর সানী-মৌসুমী

দুজনেই রুপালি পর্দার মানুষ। একসঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয়ও করেছেন বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় ছবিতে। দুজনেই অভিনয়ে আসেন একই সময়ে। ৯০ দশকে। তখনকার সময়ে সালমান শাহ-শাবনূর এবং মৌসুমী-ওমর সানী জুটির ছবি মুক্তি পেলে সমর্থক গোষ্ঠীর মাঝে যুদ্ধের দামামা বেজে যেত। ১৯৯৪ সালে 'দোলা' ছবিতে অভিনয় করার সময় এ জুটির মধ্যে সখ্য গড়ে ওঠে। সেখান থেকে প্রেম, প্রেম থেকে বিয়ে হয় ১৯৯৬ সালে। ২১ বছরের বৈবাহিক জীবনে পুত্র ফারদিন এহসান স্বাধীন ও কন্যা ফাইজাকে নিয়ে এখনো সুখের সংসার মৌসুমী-সানীর। এখনো দুজনে চলচ্চিত্রে নিয়মিত অভিনয় করছেন।

শাবনাজ-নাঈম

'৯০-এর দশকের রুপালি পর্দার সাড়া জাগানো জুটি শাবনাজ-নাঈম। চলচ্চিত্রে তাদের অভিষেক একই সঙ্গে একই চলচ্চিত্রে। ১৯৯০ সালে প্রবীণ পরিচালক এহতেশামের 'চাঁদনী' চলচ্চিত্রে একই সঙ্গে অভিষেক হয় এ জুটির। এ চলচ্চিত্রের ব্যবসা সফলের পর নাঈম-শাবনাজ জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন ২০টির মতো চলচ্চিত্রে। যার প্রতিটিই সুপারহিট। অভিনয়ের সুবাদেই তারা ভালোবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। ক্যারিয়ারের সফল সময়ে ১৯৯৬ সালে হঠাৎ বিয়ে করে ফেলেন নাঈম-শাবনাজ। সংসারে মনোনিবেশ করায় আস্তে আস্তে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই চলচ্চিত্র জগৎ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেন। দীর্ঘ ২১ বছরের বৈবাহিক জীবনে আজও তারা অন্যতম সুখী তারকা দম্পতি হিসেবে পরিচিত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে