আজ আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস। নৃত্যকলা পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন শিল্পমাধ্যম। ১৯৮২ সাল থেকে প্রতি বছর ২৯ এপ্রিলকে সারা পৃথিবীতে আন্তর্জাতিক নৃত্যদিবস হিসেবে পালন করা হয়। এ দিবসটি কেন্দ্র করে প্রতি বছরই নৃত্য শিল্পীদের নূপুরের ঝংকারে আন্দোলিত হয়ে আসছে বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো। তবে গত দু'বছর ধরে করোনার ছোবলে সবকিছুই তছনছ। বৈষয়িক ও বিনোদনের অন্যান্য মাধ্যমের মতো নাচের মঞ্চও এই করোনার ছোঁয়া থেকে রেহাই পায়নি। গত দু'বছর ধরে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই এই দিবসটি যথারীতি উদ্যাপনে আগের সেই জৌলুস হারিয়ে বসে। তবে আশার কথা, এবার বিশ্বের অনেক দেশই করোনার মরণঘাতী প্রভাব অনেকটাই লঘু হয়ে এসেছে। বাংলাদেশের পরিস্থিতিও আগের চেয়ে অনেক উন্নতির দিকে। সেক্ষেত্রে দেশটিতে আন্তর্জাতিক নৃত্যদিবসের উদ্যাপন যথারীতিই হওয়ার কথা। কিন্তু এ দিবসটিতে মুসলমান সম্প্রদায়ের সংযমের মাস হিসেবে রমজানের কারণে সেভাবে আড়ম্ভরপূর্ণ নৃত্যানুষ্ঠান হচ্ছে না এটা এখন ধরে নেওয়াই যায়। কারণ, এ বছরই বাঙালির প্রাণের মাস প্রাণের দিন পহেলা বৈশাখ রোজা পড়াতে সরকারিভাবেই দিবসটির যাবতীয় অনুষ্ঠান বেলা আড়াইটা পর্যন্ত সীমিত করে দেওয়া হয়। এমনকি দেশীয় পর্যায়েও পহেলা বৈশাখের উদ্যাপন ছিল একেবারেই নিষ্প্রভ ও জৌলুসহীন। ছিল না পান্তা ও ইলিশের জন্য কোনো হুড়োহুড়ি। কাজেই করোনা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলেও রোজার কারণে এবারের আন্তর্জাতিক নৃত্যদিবসটিও বাংলাদেশে প্রাণ পাচ্ছে না সেটা ধরেই নেওয়া যায়। অথচ বিশ্বের অন্যসব দেশের মতো এই নৃত্য বাঙালিরও প্রাণের সংস্কৃতি। বাঙালির জীবন ও যাপনের গল্পও ধরা দেয় এই নৃত্যে। নৃত্যশিল্পীরা তাদের নাচের ছন্দে ছন্দে তুলে ধরেন সমাজের চলমান প্রতিচ্ছবি। নাচের ভাষা মূর্ত হয়ে ওঠে নূপুরের ঝংকারে। দোলা দিয়ে যায় মানুষের অনাবিল মনে। অশান্ত মনও শান্ত প্রশান্ত হয়ে যায় তার নূপুরের মায়ায়। হাজার বছর ধরে কত্থক, মনিপুরী, ওডিসি, গৌড়ীয় কিংবা লোকনৃত্যের মতে বার্ণীল সব নৃত্যধারার চর্চা করে চলেছেন বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের নৃত্যশিল্পীরা। উপমহাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এর জীবনছবি ও আলেখ্য তুলে ধরার জন্য রয়েছে অসংখ্য নৃত্য সংগঠন। তবে নৃত্যশিল্পীদের আক্ষেপ, দেশে দিন দিন বাড়ছে নৃত্যশিল্পীর সংখ্যা। বাড়েনি পর্যাপ্ত রিহার্সালের জায়গা। নেই কোনো পৃষ্ঠপোষকতাও। তার ওপর ভিন দেশি সংস্কৃতির চর্চা প্রসারের ফলে বাংলার ঐতিহ্যময় নৃত্যধারাগুলোও হারিয়ে যাচ্ছে। এরকম নানা প্রতিকূলতার মুখে নৃত্যচর্চা চলছে শুধুই প্রাণের টানে। দেশে এতগুলো টিভি চ্যানেল অথচ তারপরও তারা সীমিত পরিসরেই নৃত্যানুষ্ঠানের সুযোগ রেখেছেন। তাদের আরও অভিযোগ দিবসটিকে সামনে রেখে শিল্পকলা একাডেমিও যে আয়োজন করে সেটাও সীমিত পরিসরে। এবারে তো অনুষ্ঠানেরও সুযোগ রাখা হয়নি। গতবার করোনাকালে অনুষ্ঠান যেমনই হোক আন্তর্জাতিক নৃত্যদিবস উপলক্ষে বাংলাদেশে তবু এর প্রতিপাদ্য করা হয়েছিল 'আমার নূপুরের ধ্বনি/ছড়াক মানবতার বাণী'। কিন্তু এবারে অনুষ্ঠান তো দূরের কথা কোনো প্রতিপাদ্যও রাখা হয়েছে কিনা তাও জানা যায়নি। এ বিষয়ে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি। অন্যদিকে পরিচালক আফসানা মিমি ফোন রিসিভ করলেও এবারের নৃত্যদিবস উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমিতে কোনো আয়োজন করছে কিনা কিংবা এ বিষয়ে কোনো প্রতিপাদ্য করা হয়েছে কিনা জানতে চাওয়া মাত্র তিনি বলে ওঠেন, 'ভাইয়া, আমি এখন হাসপাতালে এ বিষয়ে আমি একদমই কথা বলতে পারব না।'