বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
সা ক্ষা ৎ কা র

আনন্দ নিয়ে বাঁচতে চাই

কুমার বিশ্বজিৎ- বাংলাদেশের বরেণ্য এক সঙ্গীতশিল্পী। ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি আলাদা এক টান ছিল একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হওয়া এই গায়কের। বহুল জনপ্রিয় 'তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে' গানটি দিয়েই সঙ্গীত ভুবনে আলোড়ন তোলেন। এরপর আর পেছনের দিকে একবারও তাকাতে হয়নি চিরসবুজ খ্যাত এই তারকাকে। সঙ্গীত জীবনে তিনি অসংখ্য জনপ্রিয় গান গেয়েছেন। তার গাওয়া অনেক গানই এ প্রজন্মের কণ্ঠশিল্পীদের গাইতে দেখা যায়। এরই মধ্যে ক্যারিয়ারের চার দশক পার করেছেন কুমার বিশ্বজিৎ। চলমান ব্যস্ততা, নতুন বছরের ভাবনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন জাহাঙ্গীর বিপস্নব
নতুনধারা
  ২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
কুমার বিশ্বজিৎ

ভালোই কাটছে চলমান সময়...

বর্তমান সময়ে বেশ সুস্থ আছি- এটাই বিধাতার বড় নেয়ামত। তার প্রতি কৃতজ্ঞ, এখনো তিনি আমাকে এবং আমার কণ্ঠকে ভালো রেখেছেন; যার সুবাদে চার দশক শ্রোতাদের গান শোনাতে পেরেছি। আগামীতে আরও ভালো ভালো গান শ্রোতাদের উপহার দিতে চাই। সে লক্ষ্যেই বছরের শুরু থেকেই ব্যস্ততার মধ্যে কাটাচ্ছি। বলা চলে, বছরের শুরুটা ভালোই কাটছে।

প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলাতে হবে...

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছু পাল্টে যাচ্ছে। বিশ্বায়নের এই যুগে প্রযুক্তি এগিয়ে যাচ্ছে দ্রম্নতগতিকে। এই প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। নিজেদের আবেগ হারানো চলবে না। নতুন বছরে আমাদের পরিকল্পনা হওয়া উচিত-নিজেদের সংস্কৃতি, নিজেদের ঐতিহ্য নিয়ে আরও বেশি কাজ করা। নতুন প্রজন্মকে আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত করা, সম্পৃক্ত করা। একটা কথা মনে রাখতে হবে, অন্যের সংস্কৃতিকে ধারণ করে সমৃদ্ধ হওয়া যায় না। তাই নিজেদের সংস্কৃতি, নিজেদের শিল্পী, নিজেদের সঙ্গীতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

ফেলে আসা দিন অভিজ্ঞ করেছে...

বিগত বছরগুলোর দিকে নজর দিলে খেয়াল করবেন, আমাদের দেশীয় সঙ্গীত বা আঞ্চলিক গান, ফোক গানগুলোই বেশি জনপ্রিয় হয়েছে। পুরনো গানগুলোই বারবার নতুন করে বেজেছে। ফেলে আসা দিনগুলো আমাদের অভিজ্ঞ করেছে। তাই নতুন বছরটা হবে আরও পরিকল্পনামাফিক, আরও সমৃদ্ধ।

স্টেজ শো নিয়েই বেশি ব্যস্ততা...

সব গানই গাওয়া হচ্ছে। তবে গত বছরের শেষের দিক থেকে স্টেজ শো নিয়েই বেশি ব্যস্ত। এই সময়টাকে স্টেজ শোর সিজন বলা হয়। যদিও মাঝখানে করোনার কারণে দুই-তিন বছর সবকিছু স্থবির ছিল। এখন আবার প্রাণ খুলে গান গাইতে পারছি। নতুন বছরে গত ২০ জানুয়ারি কক্সবাজারে, ২১ জানুয়ারি গুলশান ক্লাবে শো'তে পারফর্ম করলাম। আবার আগামী ২৭ জানুয়ারি রাজধানীর ১০০ ফিট-এ, ১০ ফেব্রম্নয়ারি কুমিলস্না ক্যাডেট কলেজ'সহ টানা মার্চ পর্যন্ত স্টেজ শো নিয়ে ব্যস্ত থাকবে।

এটা আমার প্রত্যাশাও বলতে পারেন...

আমার কাছে মনে হয় এদেশের বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব যারা চলে গেছেন, তাদের আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে কিংবদন্তি বলি। আমাদের যারা বেঁচে আছেন এবং দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে একটি অবস্থানে এসেছেন, নিজের নামকে তার কাজের মধ্যদিয়ে ব্যান্ডে পরিণত করেছেন তাদের জীবন্ত কিংবদন্তি না বলে আমরা তাকে কিংজীবন্তি বলি। একটা নতুন সুন্দর বিশেষণের যাত্রা শুরু হোক- এটা আমার প্রত্যাশাও বলতে পারেন।

ব্যক্তিজীবন বলে কিছু থাকে না...

এই দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অনেক প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি রয়েছে। পাশাপাশি বিরক্তিও এসেছে। কারণ আমি মনে করি একজন সত্যিকার শিল্পীর ব্যক্তিগত জীবন বলে কিছু থাকে না। আমি এখন সত্যি সত্যি নিজের পরিবারকে সময় দিতে চাই, ভীষণভাবে পরিবারের সঙ্গে যুক্ত থাকতে চাই। শুধু মিউজিশিয়ানদের চিয়ারআপ রাখতে, ইন্ডাস্ট্রির মানুষের চিয়ারআপ রাখতে, নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের অনুপ্রেরণা দিতে এখন কাজ করে যাচ্ছি। গান করছি, স্টেজ শো করছি। কারণ এটা পরম সত্যি, স্টেজ শো'তে পারফর্ম করতে প্রচন্ড প্রস্তুতি লাগে। যা এই সময়ে এসে নিতে খুউব বেশি ভালো লাগে না।

আনন্দ নিয়ে বাঁচতে চাই...

যদিও আমি ১৯৭৭ সাল থেকে স্টেজে গান করি, তবে ১৯৮২ সালে 'তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে' গানটি দিয়েই পেশাদার সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে যাত্রা শুরু আমার। এরপর চার দশক পূর্ণ হয়েছে। গত বছরই ক্যারিয়ারে চার দশক পূর্তি উপলক্ষে বিশেষ এক উদ্যোগ নিয়েছি। তা হলো, সঙ্গীত জীবনের সর্বাধিক শ্রোতাপ্রিয় আট/দশটি গান নতুন করে তৈরি করব। অচিরেই বিশেষ আয়োজনের মধ্যদিয়ে আমার সঙ্গীত জীবনের সফল এ যাত্রা উদযাপন করব। এরই মধ্যে কাজ অনেকটাই এগিয়ে গেছে। জানিনা সঙ্গীত জীবনের হাফ সেঞ্চুরি বা সুবর্ণজয়ন্তী পাব কী না। চার দশক পেয়েছি, এটাই না হয় আপাতত আনন্দ নিয়ে উদযাপন করি। জীবন তো আসলে ক্ষণিকের। জীবনে যতটা দিন বাঁচি, আনন্দ নিয়ে বাঁচতে চাই। সবার জন্য আরও কিছু ভালো গান উপহার দিয়ে যেতে চাই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে