বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১

নানা সংকটে মঞ্চনাটক

সাজু আহমেদ
  ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
দ্রোহ প্রেম নারী নাটকের একটি দৃশ্য

দেশের সামগ্রিক সংস্কৃতির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম মঞ্চনাটক। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে একাধিক নাট্যদল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী ধারা মঞ্চনাটককে এগিয়ে নেন তৎকালীন কতিপয় তরুণ নাট্য ও সংস্কতি কর্মীরা। নাট্যচর্চাকে বেগবান করতে এক দশক পর গড়ে তোলা হয় বাংলাদেশ গ্রম্নপ থিয়েটার ফেডারেশন। এছাড়া তারও এক দশক পর নব্বই দশকের গোড়ার দিকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনকে অনেকটাই বেগবান করে মঞ্চনাটক। এই সময়ে পথনাটক বিশেষ ভূমিকা পালন করে। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের মঞ্চনাটকের শুধু বিকাশই হয়েছে। প্রতি বছর অসংখ্য নতুন নাটক মঞ্চে এনেছেন নাট্যদল ও নাট্যকর্মীরা। নাট্যচর্চার গতিকে বাড়াতে নাট্য আন্দোলন হিসেবে নিয়ে সারা দেশে একে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে বিভিন্ন দল। তবে করোনা-পরবর্তী সময়ে নানা সংকটে পড়েছে মঞ্চনাটক। বিশেষ করে নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর পেশার এই মানুষগুলো অনেকটাই ধাক্কা এই চর্চার গতিপথ থেকে অনেকটাই ছিটকে পড়েন। ফলে করোনা-পরবর্তী সময়ের ঢাকা শহর এবং ঢাকার বাইরের কতিপয় শহরের কিছু কিছু নাট্যদল নিভু নিভুভাবে নাট্যচর্চা করে চলেছেন বটে, তবে আগের সেই গতি আর ফিরে আসেনি। এর নানা কারণ রয়েছে বলে মনে করেন নাট্যকর্মীরা। তার মধ্যে অন্যতম কারণ মঞ্চনাটক বা থিয়েটার চর্চা পেশা হিসেবে নিতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা, বা পেশাদারিত্ব গড়ে ওঠেনি। মঞ্চনাটকের মান উন্নয়ন এবং এর ধারাবাহিকতা রাখতে পর্যাপ্ত সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকা, বেসরকারিভাবে সহযোগিতা না পাওয়া সর্বোপরি এই পেশায় সংশ্লিষ্টদের আর্থিক নিরপত্তা না থাকায় গুরুত্বপূর্ণ এই মাধ্যম থেকে সরে গেছেন অনেক কর্মী। অনেক নাট্যদলের কার্যক্রম প্রায় থেমে গেছে। ফলে নাট্য আন্দোলনের অন্যতম উদ্দেশ্য দিনকে

দিন ব্যাহত হচ্ছে। বিগত বছরগুলোর তুলনায় নতুন মঞ্চনাটকের সংখ্যাও দিন দিন কমে যাচ্ছে। যাও আছে তাও দর্শক খরায় ভুগছে নাট্য সংগঠনগুলো। যদিও এ বছর বেশকিছু ভালো নাটক মঞ্চে এসেছে। তবে নতুন দর্শক তৈরি হয়নি।

নতুন মঞ্চে প্রযোজনা কমার কারণ কি, নাট্যকর্মীরা আসলে কি ভাবছেন- এ বিষয়ে দেশের বিশিষ্ট নাট্যকার, অভিনেতা, নির্দেশক, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্য শিক্ষক আনন জামান বলেন, 'করোনার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারেননি নাট্যকর্মীরা। ফলে তারা অর্থনৈতিক সংকটের কারণে নাট্যচর্চা থেকে সরে গেছে। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন শহরের নাট্যদলের কর্মীরা নাট্যচর্চার ক্ষেত্রে সংকটে পড়েছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন রাজধানীর বাইরের দলগুলো। অনেক নাট্যদলই কর্র্মী সংকটের কারণে নতুন প্রযোজনা মঞ্চে আনতে পারছেই না বরং পুরাতন প্রযোজনাগুলোরও প্রদর্শনী করা যাচ্ছে না।'

নাট্যকার নির্দেশক ও অভিনেতা, অনুস্বর নাট্যদলের প্রধান ডক্টর মোহাম্মদ বারী বলেন, 'আমি বিষয়টির সঙ্গে একমত নই। বরং করোনা পরিস্থিতির ফলে মঞ্চনাটকের লাইভ শো করার একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। করোনাকালীনও অনেকেই একাধিক প্রযোজনা মঞ্চে এনেছেন, আমি নিজেও 'মূল্য অমূল্য' নামে একটি প্রযোজনা মঞ্চে এনেছি। আরও অনেকেই করেছেন। তবে মূল বিষয় হলো করোনার পরবর্তী সময়ে মানুষ সামাজিকভাবে কিছুটা হলেও পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে ভালো নাট্য প্রযোজনা সত্ত্বেও আমরা প্রত্যাশিত নাট্য দর্শক পাইনি। এ অবস্থায় আমার মতামত হলো নাটককে দর্শকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। বিশেষ করে গুলশান-বনানী-ধানমন্ডি এসব জায়গায় প্রযোজনাগুলো নিয়ে যেতে হবে। দর্শকদের কাছে নাটক পের্র্ৗঁছাতে হবে। সেই বিষয়টি ভাববার অবকাশ রয়েছে বলে আমি মনে করি। আরেকটি বিষয় হতে পারে একটি নতুন নাটক বা ভালো নাটক মঞ্চায়নের ক্ষেত্রে একই স্থানে বা হলে একাধিক দিন মঞ্চায়নের ব্যবস্থা করতে হবে এবং এই বিষয়টি একটু আগে থেকেই প্রচার করতে হবে, তাহলে দর্শক আগেই নাটক মঞ্চায়নের তথ্য জেনে যাবে, তারা নাটক দেখতে আসবে। এক্ষেত্রে শিল্পকলা একাডেমির ভূমিকা রয়েছে। তারা একাধিক দিন একাধারে নাটক মঞ্চায়নের সুযোগ দিতে পারে। সব মিলিয়ে আমি বলব করোনা-পরবর্তী সময়ে নাট্য প্রযোজনার সুযোগ তৈরি হয়েছে। সেই সুযোগটাকে আরও এগিয়ে নিতে হবে।'

তরুণ নাট্যকর্মী, নাট্যকার নাট্য নির্দেশক এইচ আর অনিক বলেন, 'বিগত সময়ের নতুন মঞ্চনাট্য প্রযোজনা কমার কারণ অবশ্যই নাটকের পেশাদারিত্ব গড়ে না ওঠা। এর সবচেয়ে বড় কারণ করোনা-পরবর্তী সময়ে অন্যান্য পেশার মানুষের মতোই নাট্যকর্মীরাও তাদের অনেকেই কর্ম হারিয়েছেন, জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় নাট্যকর্মীদের অন্য পেশা বেছে নিতে হয়েছে, দলগুলো কর্মী সংকটে পড়েছে ফলে নতুন প্রযোজনা মঞ্চে আনতে দলগুলো হিমশিম খাচ্ছে।' সরকার এ বিষয়ে আন্তরিকতার পরিচয় দিলেও দলের কর্মীদের নানামুখী সংকটের কারণে নতুন প্রযোজনার সংখ্যা তুলনামূলক হারে কমেছে বলে মনে করেন এইচ আর অনিক।

এদিকে আগামী ৬ অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে বহুল আলোচিত 'গঙ্গা যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব ২০২৩'। এই উৎসবকে ঘিরে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির একাধিক মঞ্চ সরগরম থাকে। এবারও একই চিত্র আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে