শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১

বলিউডে বর্ণবাদের শিকার হন সুনীল শেঠি!

বিনোদন ডেস্ক
  ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
বলিউডে বর্ণবাদের শিকার হন সুনীল শেঠি!

নায়ক এবং খলনায়ক- দুই রূপেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন বলিউড অভিনেতা সুনীল শেঠী। তবে ইদানীং তাকে অভিনয়ে আগের মতো দেখা যায় না। নিজ দেশ ভারতেই বর্ণবাদের শিকার হয়েছিলেন বলিউড অভিনেতা সুনীল শেঠি। আর সেটা নিজ কর্মক্ষেত্র 'বলিউড'-এ। তাও নিজেরই সহকর্মীদের কাছ থেকে। গায়ের রং কালো বলে তার সঙ্গে কাজই করতে চাইতেন না বলিউড অভিনেত্রীরা!

সুনীল শেঠিকে এখন বলিউডের সবচেয়ে সফল তারকাদের মধ্যে একজন বলে গণ্য করা হয়েছে। ৩৩ বছরেরও বেশি সময়ের ক্যারিয়ারে সুনীল শেঠি একশ'টিরও বেশি সুপারহিট ছবিতে অভিনয় করেছেন। কিন্তু তার ক্যারিয়ারের প্রথমদিকের দিনগুলোতে তার গায়ের রঙের জন্য বেশ কয়েকটি নায়িকার দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন। নব্বইয়ের দশকের কোনো নায়িকাই তার সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত ছিলেন না।

সুনীল শেঠি ১৯৯২ সালে দিব্যা ভারতীর সঙ্গে অ্যাকশন ফিল্ম 'বলওয়ান' দিয়ে তার অভিনয় জীবন শুরু করেন। কিন্তু এর আগে সুনীল শেঠিকে অনেক নায়িকাই প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কিন্তু নব্বইয়ের দশকের সুন্দরী সুপারস্টার দিব্যা ভারতী তার সঙ্গে একটি ছবি করতে রাজি হন এবং সেখান থেকে সুনীল শেঠি সুপারস্টার হয়ে ওঠেন।

সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই দাবি করেছেন সুনিল শেঠী। ক্যারিয়ারের শুরুতে এমন অবহেলার শিকার হয়েছেন বহুবার। অপবাদও সহ্য করেছেন। সুনীল শেঠি বলেন, তিনি ১৯৯০ সালে নায়ক হওয়ার জন্য বলিউডে এসেছিলেন। সেই সময়ে মানুষের মনে নায়কের ভাবমূর্তি ছিল একেবারেই আলাদা। মানুষ কোনো কালো চামড়ার নায়ক দেখতে চাইত না।

এই কারণে পরিচালকরাও এমন লোককে কাস্ট করেননি। সুনীল শেঠি একবার বলেছিলেন যে, তার কালো চামড়ার কারণে অনেক নায়িকাই তাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তারা খোলাখুলি বলেছিল যে, তারা এমন স্কিন টোনের অভিনেতার সঙ্গে কাজ করবেন না। তবে সুনীল শেঠি হাল ছাড়েননি এবং লড়াই চালিয়ে যান।

সুনিল বলেন, '৯০ দশকের শুরুর দিকে বলিউডে হিরো বলতেই আলাদা কিছুকে বোঝানো হতো। যারা হবে ফর্সা, সুন্দর। শ্যামবর্ণের কেউ হলে তাকে খলনায়কের চরিত্রে ভাবা হতো। নায়িকাদের অনেকে এমন কথা বলতেও ছাড়তেন না যে, তাকে দেখলে তাদের 'বমি' এসে যায়। পরিচালক, নায়িকাসহ সবাই এটাই মনে করতেন। এমন ভাবনার কারণে ক্যারিয়ারে শুরুর দিকে অনেক প্রত্যাখ্যান সহ্য করেছি। কিন্তু হাল ছাড়িনি। দিব্যা ভারতীই আমাকে সহযোগিতা করেছেন। একমাত্র তিনিই আমার গায়ের রংকে প্রাধান্য না দিয়ে কাজকে প্রাধান্য দিয়েছেন। আর তখন থেকেই বলিউডে আমার পথচলা শুরু হয়।'

সুনীল জানান, কঠোর পরিশ্রম করে, বহু প্রত্যাখ্যান সহ্য করার পর 'বলওয়ান' সিনেমায় সুযোগ পান। মুক্তির পর দীপক আনন্দ পরিচালিত এ সিনেমাটি বক্স অফিসে চুটিয়ে ব্যবসা করে। এরপর তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। ক্যারিয়ারে একশ'রও বেশি হিট সিনেমা উপহার দিয়েছেন সুনীল শেঠি।

গোটা নব্বইয়ের দশক জুড়ে সুনীল মূলত মারামারির চলচ্চিত্রে পার্শ্ব চরিত্র খলনায়ক হিসেবে অভিনয় করে দর্শকের নজরে পড়েন। তবে দশকটির শেষের দিকে নায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন তিনি। ২০০০-এর দশকের শুরুর দিকে সুনীল পুরোদস্তুর নায়ক হয়ে গিয়েছিলেন। ২০০১ সালের 'পিয়ার ইশক অর মহাব্বাত' নামের দারুণ রোমান্টিক চলচ্চিত্রটিতে তিনি একেবারেই ভিন্ন লুকে উপস্থিত হন। এটাতে তিনি ইশা কোপিকর এবং অর্জুন রামপাল। ধড়কন চলচ্চিত্রের জন্য সুনীল ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জিতেছিলেন খল অভিনেতা হিসেবে ভালো অভিনয় করার জন্য। সুনীল তিনটি চলচ্চিত্র নিজেই প্রযোজনা করে অভিনয় করেছিলেন, এই সিনেমাগুলো হচ্ছে- 'খেল', 'রক্ত' এবং 'ভাগম ভাগ'।

সুনীল শেঠির প্রথম ছবি, 'বলওয়ান' সুপার হিট হয়েছিল। রাতারাতি তারকা হয়ে যান তিনি। ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন দীপক আনন্দ এবং সহযোগিতায় রাজু মাভানি। ছবিটিতে টিনু আনন্দ এবং ড্যানি ডেনজংপাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি সুনীলকে।

তাকে শেষ দেখা যায় অ্যামাজন ওয়েব সিরিজে। ওয়েব সিরিজটি তৈরি ও পরিচালনা করেছেন প্রিন্স ধিমান এবং অলোক বাত্রা এবং প্রযোজনা করেছেন সারেগামা এবং ইউডলি ফিল্মস। সিরিজটিতে এশা দেওল, বরখা বিস্ত, করণবীর শর্মা এবং রাহুল দেবও প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।

পরবর্তীতে অভিনেতাকে দেখা যাবে অ্যাকশন-অ্যাডভেঞ্চার কমেডি ফিল্ম 'ওয়েলকাম টু দ্য জঙ্গল'-এ। ছবিটি পরিচালনা করেছেন আহমেদ খান এবং প্রযোজনা করেছেন জিও স্টুডিওর ব্যানারে ফিরোজ নাদিয়াদওয়ালা। এটি ওয়েলকাম (২০০৭) এবং ওয়েলকাম ব্যাক (২০১৫)-এর নিজস্ব সিকু্যয়েল এবং ওয়েলকাম সিরিজের তৃতীয় পার্ট। ছবিতে পরেশ রাওয়াল, সঞ্জয় দত্ত, আরশাদ ওয়ারসি, রবিনা ট্যান্ডন, লারা দত্ত, দিশা পাটানি এবং জ্যাকলিন ফার্নান্দেজও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করবেন।

তার অভিনীত সর্বশেষ 'হান্টার টুটেগা নেহি' একটি সিরিজ কিছুদিন আগে মুক্তি পেয়েছে।

তবে এরই মধ্যে গেল বছর গুঞ্জন ছড়িয়েছে, নিজের 'বায়ু' নামের ফুড ডেলিভারির ব্যবসায়িক ব্যস্ততার কারণে সুনীল শেঠি তার চলচ্চিত্রকে 'গুড বাই' জানাতে যাচ্ছেন। যদিও এ নিয়ে এখন পর্যন্ত সরাসরি কোনো মন্তব্যে যাননি বলিউডে অনেক সুপার হিট সিনেমা উপহার দেওয়া এ অভিনেতা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে