রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

৯৬তম অস্কার পুরস্কার জেতা সেরা ২৫

মাতিয়ার রাফায়েল
  ১২ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

চলচ্চিত্র ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জমকালো আয়োজন অস্কার। সেই আসরের ৯৬তম আসরে এবারের সেরা উপহার পারমাণবিক বোমা আবিষ্কারকের ওপর বায়োপিক 'ওপেনহাইমার'। 'পারমাণবিক বোমার জনক' জে রবার্ট ওপেনহাইমারকে নিয়ে তৈরি হয়েছে এই ছবি। তবে এটি আক্ষরিক অর্থে বায়োপিকও নয়, এটি আসলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিতে তৈরি একটি সিনেমা। আর এটিই সেরা চলচ্চিত্র, সেরা পরিচালক, সেরা অভিনেতা ও সেরা পার্শ্ব অভিনেতাসহ সাতটি বিভাগে পুরস্কার জিতে নিয়েছে। 'ওপেনহাইমার' নির্মাণের জন্য সেরা চলচ্চিত্র নির্মাতার পুরস্কারও পেয়েছেন ক্রিস্টোফার নোলান। এছাড়াও ৯৬তম অস্কার আসরে সেরা অভিনেতার পুরস্কার উঠেছে কিলিয়ান মারফির হাতে। যিনি সদ্যই ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক ইয়ান ফ্লেমিংয়ের সৃষ্ট বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় গোয়েন্দা চলচ্চিত্র সিরিজ জেমস বন্ড সিনেমার নতুন 'জেমস বন্ড' হিসেবে আলোচিত হয়েছেন। কে হবে পরবর্তী স্পাই গোয়েন্দা 'জেমস বন্ড' এর মনোনয়ন দৌড়ে তিনিই বর্তমানে শীর্ষে অবস্থান করছেন। 'ওপেনহাইমার' ছবির জন্য এই পুরস্কার জিতেছেন মারফি। এটি তার প্রথম অস্কার এবং তিনিই প্রথম আইরিশ অভিনেতা যিনি এই পুরস্কার জিতেছেন।

বিশ্ব চলচ্চিত্রের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আয়োজন অস্কার পুরস্কার। সেখানে জড়ো হয় হলিউড তো বটেই সেইসঙ্গে বিশ্বের বিনোদন জগতের নামি-দামি সব তারকাও। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় ১০ মার্চ রাতে এবং বাংলাদেশের স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার ভোরে (১১ মার্চ ভোর ৫টা) যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় লস অ্যাঞ্জেলসের হলিউড অ্যান্ড হাইল্যান্ড সেন্টারের ডলবি থিয়েটারে জমকালো আয়োজনে অস্কারের ৯৬তম আসরে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। এবারের অনুষ্ঠানে প্রথমে ২৩টি শাখায় সর্বমোট ২৫ বিজয়ীর নাম ঘোষণা করেছে অস্কার কর্তৃপক্ষ। এরপর শুরু হয় পুরস্কার বিতরণ। চলচ্চিত্রে ২০২৩ সালের সেরা কাজগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এবারের অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসে। এবারের অনুষ্ঠানে ২৩টি শাখায় পুরস্কার দিয়েছে অ্যাকাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস। সংস্থাটির প্রায় ১১ হাজার ভোটার মিলে বিজয়ীদের নির্বাচন করেছেন। গত বছরের মতো এবারও জাঁকজমকপূর্ণ অস্কার সঞ্চালনা করেছেন আমেরিকান টিভি তারকা জিমি কিমেল। এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো এই দায়িত্বে দেখা গেছে তাকে। ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানির মালিকানাধীন এবিসি টেলিভিশন নেটওয়ার্ক বাংলাদেশসহ ২০০টিরও বেশি দেশে সরাসরি সম্প্রচার করেছে অনুষ্ঠানটি।

অস্কার পুরস্কার এমন এক মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার যে পুরস্কারকে চলচ্চিত্রের জন্য 'নোবেল' পুরস্কারের সমতুল্য বিবেচনা করা হয়ে থাকে। যে কারণে চলচ্চিত্র দুনিয়ার সবাই এ পুরস্কারের দিকে মুখিয়ে থাকেন। কে অস্কার জিতল সে খবর পড়েন, অনেকের কাছে অস্কারের মনোনয়ন পাওয়াই যেন আরাধ্য স্বপ্ন ছোঁয়ার সমান। শিল্পীদের কাছে এটিও অনেক বড় অর্জন। যেমন নোবেল পুরস্কারের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, যারা নোবেল পুরস্কারের জন্য প্রথম ১০০ জনের তালিকায় থাকেন তাদের বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। অস্কার দৌড়েও প্রতিবার বহু মানুষের নাম উঠে আসে। কারও হাতে উঠে অস্কার পুরস্কার। কেউ বা মনোনয়ন পাওয়া নিয়েই খুশি থাকেন।

যারা এই মনোনয়ন পান, তারাও খালি হাতে ফিরে আসেন না। পুরস্কার না জিতলেও প্রায় দেড় কোটি টাকার উপহার নিয়ে বাড়ি ফেরেন তারা। সবার কাছে এটি যেন প্যান্ডোরাস বক্স। প্রতি বছর ভেতরে থাকা উপহারের তালিকা পাল্টে যায়।

৯৬তম অস্কার আসরে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার উঠেছে এমা স্টোনের হাতে। 'পুওর থিংস' ছবির জন্য এই পুরস্কার জিতেছেন তিনি। এটি তার দ্বিতীয় অস্কার।

'পুওর থিংস' সিনেমাতে একজন ব্রিটিশ মহিলার চরিত্রে অভিনয় করেছেন এমা যিনি একটি শিশুর মস্তিষ্ক প্রতিস্থাপনের পরে পুনরুজ্জীবিত হয়েছেন। এমা স্টোন ছাড়াও সেরা অভিনেত্রী বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছেন অ্যানেট বেনিং (নায়াড), লিলি গস্ন্যাডস্টন (কিলারস অব দ্য ফ্লাওয়ার মুন), সান্দ্রা হলার (অ্যানাটমি অব আ ফল) এবং কেরি ম্যালিগান (মায়েস্ত্রো)।

এবারের অস্কারে অন্যতম আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে অভিনেতা জন সিনাকে নিয়ে। ৯৬তম অস্কারে 'সেরা কস্টিউম ডিজাইন' পুরস্কার ঘোষণা করতে গিয়ে নগ্ন অবস্থায় মঞ্চে ওঠেন রেসলার-অভিনেতা জন সিনা।

সেরা কস্টিউম পুরস্কার ঘোষণা করতে গিয়ে মঞ্চে জন সিনাকে ডেকে নেন উপস্থাপক জিমি কিমেল। তখনই বিবস্ত্র অবস্থায় মঞ্চে আসেন জন। লজ্জা নিবারণের জন্য হাতে ছিল এক টুকরো কাগজ। পুরো শরীরে কোথাও একটা সুতাও ছিল না।

নিজের শরীরের একটি অংশ খাম দিয়ে ঢেকে রেখে জন বলে ওঠেন, 'পোশাক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস!' এরপরই অভিনেতার জন্য কয়েকজন সহকারী একটি চমৎকার গাউন নিয়ে আসেন।

এ সময় জন সিনা মজা করে জানান, যে তিনি নগ্ন হয়ে কুস্তি করেন না, এখন যতটা করেছেন। পাশ থেকে কিমেল বলে ওঠেন, 'আসলেই কস্টিউম খুবই গুরুত্বপূর্ণ!' তাদের এমন কান্ডে দর্শকরা অট্টহাসিতে ফেটে পড়েন। দর্শকসারি থেকেও বিভিন্ন মন্তব্যে জমে ওঠে অস্কারের সেই মুহূর্ত।

১৯৭৪ এ রবার্ট ওপেল নামে পরিচিত একজন 'স্ট্রিকার' একাডেমি অ্যাওয়ার্ডের মঞ্চজুড়ে শান্তির চিহ্ন ফ্ল্যাশ করার সময় এভাবেই দৌড়েছিলেন। সেটারই পুনরাবৃত্তি ঘটল চলতি আসরে। মূলত কস্টিউমের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতেই এ কান্ডটি করেন জন সিনা। এবার সেরা কস্টিউমের পুরস্কার পেয়েছে মার্টিন স্করসেসি, 'পুওর থিংস'।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে