সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

৮৪ পেরিয়ে অনবদ্য সৈয়দ আব্দুল হাদী

বিনোদন রিপোর্ট
  ০১ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
৮৪ পেরিয়ে অনবদ্য সৈয়দ আব্দুল হাদী
৮৪ পেরিয়ে অনবদ্য সৈয়দ আব্দুল হাদী

বাংলা গানের জীবন্ত এক কিংবদন্তি শিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী। গত ছয় দশক ধরে বাংলা গানকে তিনি সমৃদ্ধ করে যাচ্ছেন। গানের সব শাখাতেই রয়েছে তার অবাধ বিচরণ। বাংলা গানের ভুবনে তিনি অনন্য এক বটবৃক্ষ। যার ছায়াতে বাংলা গান হয়েছে সমৃদ্ধ ও গতিশীল।

১ জুলাই কিংবদন্তি এ গায়কের জন্মদিন। আজ জীবনের ৮৪তম বসন্ত পেরিয়ে ৮৫-তে পা রাখলেন তিনি। ১৯৪০ সালের ১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কসবা উপজেলার শাহপুর গ্রামে তার জন্ম। তবে তার কলেজজীবন কেটেছে রংপুর ও ঢাকায়। ১৯৫৮ সালে সৈয়দ আব্দুল হাদী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

1

সৈয়দ আব্দুল হাদীর বাবা ছিলেন ইপিসিএস (ইস্ট পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস) অফিসার। তিনি গান গাইতেন এবং কলেরগানে গান শুনতে পছন্দ করতেন। বাবার শখের গ্রামোফোন রেকর্ডের গান শুনেই কৈশোরে সংগীত অনুরাগী হয়ে ওঠেন এ শিল্পী। মূলত তখন থেকেই গাইতে গাইতে তিনি গান শিখেছেন।

গুণী এই শিল্পী বিধাতার কাছ থেকে পেয়েছেন একটি ভরাট ও সুরেলা কণ্ঠ। গানের ব্যাকরণ বা ক্লাসিক্যাল দিকগুলোর ওপর গভীর দখল, গানের কাব্য বা লিরিক সম্পর্কে জ্ঞানের অধিকারী সৈয়দ আব্দুল হাদী আমাদের আধুনিক গান এবং সিনেমার গানের ভুবনে এক অনন্য দিকপাল। তার কণ্ঠ শরৎ-আকাশের মতো খোলা। এ শিল্পী দেশাত্মবোধক গানের জন্য বিখ্যাত। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি গান গাইছেন।

১৯৬০ সালে ছাত্রজীবন থেকেই চলচ্চিত্রে গান গাওয়া শুরু। ১৯৬৪ সালে তিনি একক কণ্ঠে প্রথম বাংলা সিনেমায় গান করেন। নাম ছিল 'ডাকবাবু'। মো. মনিরুজ্জামানের রচনায় সংগীত পরিচালক আলী হোসেনের সুরে একটি গানের মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু। আব্দুল হাদীর বেতারে গাওয়া প্রথম জনপ্রিয় গান 'কিছু বলো, এই নির্জন প্রহরের কণাগুলো হৃদয়মাধুরী দিয়ে ভরে তোলো।' সালাউদ্দিন জাকি পরিচালিত 'ঘুড্ডি' চলচ্চিত্রের গানে সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছিলেন লাকী আখ?ন্দ। এই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় গান 'সখি চলনা, সখি চলনা জলসা ঘরে এবার যাই'- গেয়েছেন সৈয়দ আব্দুল হাদী।

১৯৫৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা নিয়ে অনার্স পড়ার সময় সুবল দাস, পি.সি গোমেজ, আবদুল আহাদ, আবদুল লতিফ প্রমুখ তাকে গান শেখার ক্ষেত্রে সহায়তা ও উৎসাহ জোগান।

সৈয়দ আব্দুল হাদী কয়েকটি নজরুল সংগীত গেয়েছেন চমৎকারভাবেই। এর মধ্যে রয়েছে, ' এত জল ও কাজল চোখে পাষাণী আনলে বলো কে', 'আধখানা চাঁদ হাসিছে আকাশে আধখানা চাঁদ নিচে', 'আমায় নহে গো ভালেবাসো শুধু ভালেবাসো মোর গান', 'তুমি আমার সকাল বেলার সুর', 'খেলিছে জলদেবী সুনীল সাগরজলে', 'কেন আনো ফলডোর আজি বিদায়বেলা', 'কে ডাকিলে আমারে আঁখি খুলে' ইত্যাদি। তিনি রবীন্দ্রসংগীতও গেয়েছেন। তার প্রথম রবীন্দ্রসংগীতের অ্যালবাম 'যখন ভাঙলো মিলন মেলা'।

হাদীর কণ্ঠের বিশেষত্ব এই যে, তিনি সব ধরনের গান গাইতে পারেন সাবলীলভাবে এবং সাফল্যের সঙ্গে। বলিউডে যেমন ছিলেন মিউজিকের অল রাউন্ডার মহম্মদ রফি, তেমনি বাংলাদেশে সৈয়দ আব্দুল হাদী। ভারী অথবা চটুল, লোকাঙ্গিক কিংবা রাগপ্রধান, ভক্তিসংগীত অথবা গজল প্রকৃতির রোমান্টিক কিংবা বিপস্নবী; সব ধরনের গানের জন্য উপযুক্ত সৈয়দ আব্দুল হাদীর কণ্ঠ। আর প্রস্তুতিজনিত সব ধরনের সংগীতের ওপর দখলও রয়েছে তার।

অসংখ্য সিনেমা এবং অ্যালবামে বহু কালজয়ী গান উপহার দিয়েছেন সৈয়দ আব্দুল হাদী। তার মধ্যে 'একবার যদি কেউ ভালোবাসতো', 'এই পৃথিবীর পান্থশালায়', 'জন্ম থেকে জ্বলছি', 'চলে যায় যদি কেউ বাঁধন ছিঁড়ে', 'এমনও তো প্রেম হয়', 'কেউ কোনো দিন আমারে তো', 'যেও না সাথী', 'আমি তোমারই প্রেম ভিক্ষারী', 'চক্ষের নজর এমনি কইরা', 'সূর্যোদয়ে তুমি সুর্যাস্তে তুমি', 'যে মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছে', 'তেল গেলে ফুরাইয়া', 'আউল বাউল লালনের দেশে', 'মনে প্রেমের বাত্তি জ্বলে', 'আছেন আমার মোক্তার আছেন আমার বারেস্টার' ছাড়াও রয়েছে অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান।

চলচ্চিত্রে গান গেয়ে সেরা গায়ক ক্যাটাগরিতে সৈয়দ আব্দুল হাদী জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন পাঁচবার। সংগীতে বিশেষ অবদানের জন্য ২০০০ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেয় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক। এছাড়া বিভিন্ন অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান থেকে পেয়েছেন আরও অনেক সম্মাননা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে