নব্বই দশকের জনপ্রিয় নায়িকা শাবনূর। দীর্ঘদিন ধরেই বসবাস করছেন সূদুর অস্ট্রেলিয়ায়। গেল বছর এপ্রিলে এসেছিলেন ঢাকায়, ১৯ এপ্রিল গিয়েছিলেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে ভোট দিতে এফডিসিতে। এর বাইরে শাবনূরের পুরো খবর পাওয়া যায় তার ইউটিউব ও ফেসবুকে। সেখানই নায়িকা জানান, তার সবশেষ কাজ ও ব্যক্তিগত মত। তারই ধারাবাহিকতায় গেল রোববার শাবনূর তার ফেসবুকে কয়েকটি ছবি প্রকাশ করেন। ক্যাপশনে লিখিছেন, 'নতুন বাস্তবতাকে আলিঙ্গন করে হাসিমুখে সামনে এগিয়ে যাওয়া।' নায়িকার এই পোস্টে ইতিবাচক মন্তব্যের পাশাপাশি ছিল নেচিবাচক কথাও। অনেকেই আবার প্রশ্ন তুলেছেন শাবনূরের 'পোশাক বাছাই' নিয়েও। এসব মন্তব্য সহ্য করেননি জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী। জানিয়েছেন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও।
কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যকারীদের 'ভন্ড' সম্বোধন করে একটি ফেসবুক পোস্ট করেছেন শাবনূর। লিখেছেন, 'যারা আমার ওয়ালে এসে বিরূপ মন্তব্য করেন, তারা আবার দেখি আমার নামে অ্যাকাউন্ট খুলে, পেজ চালিয়ে, আমার পোস্ট করা ছবি-ভিডিও নিয়ে ব?্যবসাও করেন। আমাকে পুঁজি করে অনেকেই সামাজিক মাধ?্যমে ভাইরাল হচ্ছেন, রমরমা ব?্যবসা করছেন, করেন, কিন্তু আমার এখানে এসে ভন্ডামি করছেন কেন? কেনইবা সংঘবদ্ধ হয়ে খারাপ মন্তব্য করে যাচ্ছেন?'
তিনি আরও বলেন, 'এদের আবার কেউ কেউ আমাকে আড়ালে চলে যেতে বলেন, হা- হা -হা। এই ডিজিটাল যুগে এসেও মানুষ এসব জ্ঞান দেয়। আমি আড়ালে চলে যাব না প্রকাশ্যে থাকব তা আমি বুঝব।'
'সবার উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলতে চাই' শিরোনামে ওই পোস্টে তিনি আরও লিখেছেন, 'অনেকেই হয়তো জানেন যে, আমি আমার সোশ্যাল মিডিয়া নিজের মতো করে হ্যান্ডেল করি, কোনো অ্যাডমিন নিয়োগ দিইনি। আমার যখন যেটা ভালো লাগে, নিজের ব?্যক্তিগত পছন্দ বা বিশেষ কোন আনন্দ-বেদনার বিষয় থাকলে তা সবার সঙ্গে শেয়ার করতে সোশ্যাল মিডিয়ায় যুক্ত রয়েছি। যে ছবি বা ভিডিও পোস্ট করি, সেগুলো নিয়ে অনেকেই বিভিন্ন মন্তব্য করেন। এমনকি কেউ কেউ আমার ড্রেসআপ নিয়েও উদ্ভট প্রশ্ন তোলেন। অস্ট্রেলিয়ায় আমি সচরাচর ক্যাজুয়াল ড্রেস পরতেই অভ্যস্ত এবং এতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আর কে, কী পরবে সেটা তো তার ব্যক্তিগত পছন্দের ব্যাপার, তাই না!'
শাবনূর আরও বলেন, 'যদি আমার শেয়ারকৃত কোনো কিছু কারো ভালো না লাগে, তবে শালীনতার সঙ্গে গঠনমূলক সমালোচনা করতে পারেন। কিন্তু রিপিটেডলি আজেবাজে মন্তব্য যেন না করেন, তা থেকে বিরত থাকতে সবাইকে বিনীত অনুরোধ করছি। আর একান্তই যদি আমার একটিভিটিস কারো পছন্দ না হয়, তবে আমাকে ফলো না করলেই পারেন।'
সবাইকে শ্রদ্ধাশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি লিখেছেন, 'অন্যের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি, আচার ব্যবহার, কথা বলার ভাষা, এইসব আমাদের পারিবারিক মূল্যবোধ ও পারিবারিক শিক্ষার পরিচয় বহন করে। মন্তব্য করার ক্ষেত্রে আমরা যেন একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই।'
বেশ কয়েক বছর অস্ট্রেলিয়ায় পরিবার নিয়ে স্থায়ী হয়েছেন ঢালিউড অভিনেত্রী শাবনূর। চলচ্চিত্রে হয়ে পড়েছেন অনিয়মিত। বিরতি ভেঙে গত বছর নতুন সিনেমায় যুক্ত হয়েছিলেন তিনি। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে আরাফাত হোসাইনের 'রঙ্গনা' ও চয়নিকা চৌধুরীর 'মাতাল হাওয়া'। একটি সিনেমায় কয়েক দিনের শুটিং করে অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যান তিনি।
শাবনূর তার অভিনয়নৈপুণ্য ও স্বকীয়তা দিয়ে নিজের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছিলেন অনন্য উচ্চতায়। সে সময়ে প্রায় সব নায়কের সঙ্গেই জুটি বেঁধে কাজ করেছেন তিনি। তবে সবচেয়ে বেশি সফল ছিলেন নায়ক সালমান শাহর সঙ্গে জুটি বেঁধে। সহশিল্পীদের মধ্যে প্রয়াত সালমান শাহর সঙ্গে তার জুটি ছিল সবচেয়ে বেশি হিট। সালমানের অকালমৃতু্যর আগ পর্যন্ত মাত্র চার বছরে তিনি ও সালমান সর্বাধিক ১৪টি দর্শকনন্দিত ও ব্যবসাসফল ছবি করেছেন। এ ছাড়া প্রয়াত মান্না ভাই, ওমর সানী, বাপ্পারাজ, আমিন খান, অমিত হাসান, রিয়াজ আহমেদ, ফেরদৌস আহমেদ, শাকিল খান, শাকিব খানের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন তিনি।
শাবনূর মানেই শুধু দুর্দান্ত সিনেমা নয়, তার সঙ্গে ছিল মনে রাখার মতো একাধিক জনপ্রিয় গানও। যেমন- 'কিছু কিছু মানুষের জীবনে', 'তুমি আমার এমনই একজন', 'উত্তরে ভয়ংকর জঙ্গল', 'ও সাথী রে', 'এই বুকে বইছে যমুনা তার অথৈ'সহ একাধিক জনপ্রিয় গান এবং সিনেমা দর্শকের মনে এতটাই জায়গা করে নিয়েছে যে, আজও মনে মনে গুন গুন করেন তারা। বেশ কয়েক বছর পর্দায় না থাকলেও জনপ্রিয়তা কমেনি এই অভিনেত্রীর। দর্শক থেকে ভক্ত-অনুরাগীরা মুখিয়ে রয়েছেন আবারও পর্দায় তার অভিনয় দেখার জন্য।