শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
শান্ত'র সেঞ্চুরি

লংকায় টাইগারদের স্বপ্নের একদিন

ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ২২ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০
ক্যান্ডির পালেস্নকেলে স্টেডিয়ামে বুধবার শ্রীলংকার বিপক্ষে নাজমুল হোসেন শান্ত (বাঁয়ে) সেঞ্চুরি তুলে নিলেও ১০ রানের আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে তামিম ইকবালকে। প্রথম দিন শেষে ১২৬ রানে অপরাজিত থাকেন শান্ত -ওয়েবসাইট

টেস্টে এমন আধিপত্য বিস্তার করা দিন খুব কমই কাটিয়েছে বাংলাদেশ। তার ওপর বিদেশের মাটিতে। ক্যান্ডিতে শ্রীলংকার বিপক্ষে বুধবার সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম সকালে সবুজ উইকেট দেখে হয়তো অনেকে কল্পনাই করেননি, হতাশার বৃত্তে ঘুরপাক খাওয়া টাইগাররা দিন শেষে এভাবে চওড়া হাসি নিয়ে মাঠ ছাড়বে। প্রথম দিন শেষে প্রথম ইনিংসে মুমিনুল হকের দল করেছে ২ উইকেটে ৩০২ রান।

ব্যাটিংয়ের জন্য সহায়ক কন্ডিশন, প্রতিপক্ষের সাদামাটা বোলিং আক্রমণ মিলিয়ে বাংলাদেশের সামনে ছিল বড় সুযোগের মঞ্চ। তবে এমন কত সুযোগই তো হেলায় হারানোর ইতিহাস আছে। এবার অবশ্য তামিম ইকবালের আগ্রাসী ৯০, নাজমুল হোসেন শান্তর প্রথম সেঞ্চুরি আর টেস্ট দলপতি মুমিনুল হকের ফিফটিতে তা পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছে বাংলাদেশ। স্বাগতিক শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের প্রথম দিনটি বলা যায় টাইগারদের স্বপ্নময় একদিন।

নাজমুল হোসেন শান্তর সেঞ্চুরির দিনে দারুণ খেলেও কাছে গিয়ে না পাওয়ার হতাশায় পুড়লেন তামিম ইকবাল। তবে এই দুজনের সৌজন্যে বাংলাদেশের দিনটি কাটল দারুণ। ক্যান্ডির পালেস্নকেলে আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে সকালে সবুজ উইকেট দেখেও ব্যাটিং নেওয়ার সাহস দেখান মুমিনুল। বলা হচ্ছিল, উইকেট শুরুতে আর্দ্র থাকবে। কিন্তু ধীরে ধীরে ব্যাটিং সহায়ক হয়ে উঠবে। এর পরেও লংকারদের পেস বোলিং আক্রমণ নিয়ে কিছুটা ভয় তো ছিলই।

সঙ্গে ছিল তীব্র গরম। কিন্তু এমন কন্ডিশনে অভ্যস্ত থাকা সেই লংকানরাই পুরোটা দিন হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারলেন না! বরং তিন সেশনেই তাদের ওপর শাসন করে খেলেছেন তামিম ইকবাল, নাজমুল হোসেন ও মুমিনুল হক।

শুরুতে ৮ রানে ওপেনার সাইফ হাসানকে হারিয়ে বিপদে পড়েছিল বাংলাদেশ দল। বিশ্ব ফার্নান্দোর বলে পুরোপুরি পরাস্ত হন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। এলবিডাবিস্নউ হয়ে বিদায় নেন রানের খাতা খোলবার আগেই। সেখান থেকে তামিম তরুণ ব্যাটসম্যান শান্তকে সঙ্গে নিয়েই দলের বিপর্যয় সামাল দিয়েছেন। এই দু'জনের ব্যাটে ভর করে প্রথম সেশনটা নিজেদের করে নেয় সফরকারীরা। তামিম শুরু থেকে আক্রমণাত্মক মেজাজে খেলেছেন। অন্যদিকে শান্ত শুরুতে অস্বস্তিতে ভুগলেও ধীরে ধীরে সেটিও কেটে গেছে। পরে পুরো টেস্ট মেজাজেই খেলতে থাকেন তরুণ এই ব্যাটসম্যান।

তামিম যেভাবে খেলছিলেন তাতে মনে হচ্ছিল হয়তো সেঞ্চুরি তুলে নেবেন। কিন্তু ৯০ রানেই হঠাৎ মনোযোগ হারিয়ে বসেন। লাঞ্চের পর বিশ্ব ফার্নান্দোর বলে খোঁচা মেরে স্স্নিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৯০ রানে। তামিমের ১০১ বলের ইনিংসে ছিল ১৫টি চার! তাতে ভাঙে নাজমুল-তামিমের ১৪৪ রানের বড় এই জুটি। তবে অপরপ্রান্তে নিখুঁত টেস্ট ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী করেছেন শান্ত। অধিনায়ক মুমিনুলকে সঙ্গে নিয়ে পার করেছেন বাকি দুই সেশন। শুধু কি তাই? ১১ ইনিংস পর নাজমুল পেলেন ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। যার সর্বশেষ সর্বোচ্চ ইনিংসটি ছিল ২০২০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। খেলেন ৭১ রানের ঝকঝকে একটি ইনিংস। সঙ্গী মুমিনুল হক ছিলেন না। তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের ১৪তম হাফসেঞ্চুরি।

এমনকি দ্বিতীয় নতুন বল নেওয়ার পরেও লঙ্কানদের সব ধরনের চেষ্টায় জল ঢেলে দেন এই দুই ব্যাটসম্যান। তাদের সেই দৃঢ় প্রত্যয়ে এখন বড় সংগ্রহের দিকেই ছুটছে সফরকারীরা। মুমিনুল ১৫০ বল খেলে ব্যাট করছেন ৬৪ রানে, ২৮৮ বল খেলা শান্ত আছেন ১২৬ রানে। দুজনের জুটিটাও দিনের সর্বোচ্চ- ১৫০ রান। লংকান পেসারদের নেতা সুরাঙ্গা লাকমাল ১৮ ওভার বল করে দিয়েছেন ৫৫ রান। কিন্তু উইকেট পাননি। একই দশা লাহিরু কুমারারও। ১৭ ওভারে ৬১ রান দিয়েছেন। শুধু ১৯ ওভারে ৬৩ রান দিয়ে দুটি উইকেট পেয়েছেন বিশ্ব ফার্নান্দো।

প্রথম টেস্টের প্রথম দিনে শান্তর সঙ্গে মুমিনুলের অবিচ্ছিন্ন জুটির রান ১৫০। দেশের বাইরে তৃতীয় উইকেটে বাংলাদেশের যা সর্বোচ্চ জুটি। প্রথম দিনের চাওয়া আর পাওয়া মিলে গেছে অনেকটুকুই। দ্বিতীয় দিনের চাওয়ার তালিকায় নিশ্চিতভাবেই থাকবে শান্তর আরও বড় ইনিংস, দেশের বাইরে মুমিনুলের প্রথম সেঞ্চুরি, দলের রান পাহাড়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে