শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিত্যপণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে পারছে না ব্যবসায়ীরা

জি এম কাদের
যাযাদি ডেস্ক
  ১৯ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, সরকারের হাতে টাকা নেই, এলসি খুলতে পারছে না। সরকারের হাতে রিজার্ভ নেই। রিজার্ভের টাকা অন্য খাতে খরচ করা হয়েছে, যা পৃথিবীর ইতিহাসে নেই। রিজার্ভের অর্থ বিদেশিদের ধার দিয়েছে, বিমানে ও পায়রাবন্দের খরচ করা হয়েছে। বিভিন্নভাবে রিজার্ভের ৮ বিলিয়ন খরচ করা হয়েছে। নিত্যপণ্য, ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানির জন্য এলসি খুলতে পারছে না ব্যবসায়ীরা। আর এ কারণেই চাহিদার তুলনায় বাজারে পণ্য সরবরাহ কম। সব জিনিসের দাম বেশি আর রিজার্ভ বর্তমান পরিস্থিতি অস্বাভাবিক। দেশ এখন দেউলিয়াত্বের কাছাকাছি। সরকারের রিজার্ভে যে টাকা আছে দেনা তার চেয়ে বেশি। দেনা পরিশোধ করলে রিজার্ভে কোনো টাকা থাকবে না।

শনিবার দুপুরে গাজীপুর জেলার চান্দনা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ মাঠে মহানগর জাতীয় পার্টি আয়োজিত জনসভায় গোলাম মোহাম্মদ কাদের এসব কথা বলেন। এসময় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী এমএম নিয়াজউদ্দিনকে পরিচয় করিয়ে দেন। দুর্নীতি প্রতিরোধ ও উন্নয়নের স্বার্থে এমএম নিয়াজউদ্দিনকে ভোট দিতে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

জনসভায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরও বলেন, রমজান মাস আসছে, এমনিতেই

জিনিসপত্রের দাম ঊর্ধ্বমুখী। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি, রমজানের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় দ্রব্যমূল্য সহনীয় মাত্রায় রাখতে। মানুষের আয় বাড়েনি, কিন্তু জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলছে। দেশের মানুষ যেন সুন্দরভাবে রোজা রেখে ইবাদত করতে পারে। সরকারকেই এই দায়িত্ব পালন করতে হবে। দেশের মানুষ কষ্টে আছে। তাই, পরিবার ভিত্তিক রেশনিং ব্যবস্থা চালু করুন। অতিদরিদ্র, দরিদ্র, নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত অনুযায়ী রেশন কার্ড দিতে হবে। প্রতি সপ্তাহের জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কমমূল্যে মানুষের মধ্যে বিতরণ করতে হবে। রমজানে নিত্যপণ্যের দাম যেন বাড়াতে না পারে সেজন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। দায়িত্বশীলরা দুর্নীতি মুক্তভাবে দায়িত্ব পালন করলে রমজানে নিত্যপণ্যের দাম কেউ বাড়াতে পারবে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কমমূল্যে দিতে পারলেই মানুষ বাঁচবে।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যন বলেন, এবার বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার হাজি হজ করতে পারবেন। তিনবার সময় বাড়িয়ে এখন পর্যন্ত এক লাখ হাজি নিবন্ধন করেছেন। এখনো ২৭ হাজার কোটা বাকি আছে। হজ প্যাকেজের দাম প্রায় ৭ লাখ টাকা করা হয়েছে। এটা আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের জন্য অসম্ভব। হজের খরচ কমাতে ভর্তুকি দিতে হবে। প্রতিবেশী দেশগুলোয় হজের খরচ কোথাও আমাদের চেয়ে অর্ধেক আবার কোথাও অর্ধেকের চেয়ে কম। বাংলাদেশে কেন হজে যেতে এত টাকা খরচ হবে?

গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ব্যাংকিং খাতে অবাধ লুটপাট হয়েছে। ফলে সরকারি হিসেবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ শতকরা ৮ ভাগ। অথচ, আন্তর্জাতিক মনিটরিং সংস্থাগুলো বলছে বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ শতকরা ২৫ ভাগ। বছরে বিদু্যৎ খাতে ১ বিলিয়ন ডলার লস হচ্ছে সরকারের ভুল সিদ্ধান্তে। মেগা প্রকল্পে যে খরচ হয়েছে তার দায়ভার এখন সাধারণ মানুষের ওপর পড়েছে। সেই দায়ভার মেটানো কঠিন হয়ে পড়বে। বাংলাদেশ থেকে দেদার অর্থ বিদেশে পাচার হচ্ছে। লুটপাটের কারণে সরকারের হাতে টাকা নেই। আন্তর্জাতিক সংস্থা মুডিস বলেছে, বাংলাদেশকে ঋণ দিলে তা আর ফেরত পাওয়া যাবে না। তাই বাংলাদেশকে ধার দেওয়া ঠিক হবে না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সামনে বিশাল রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পরের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। দুটি দলেরই দাবি নিয়ে পিছু হটার সুযোগ নেই। এই দাবিগুলোয় কেউ ছাড় দিলে তারা যেন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তাই সংঘাতময় পরিস্থিতির আশঙ্কায় মানুষের মধ্যে ভিতি বিরাজ করছে। আমরা চাই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হোক। রাজনীতিতে শান্তির সুবাতাস চাই। আমরা রাজনীতির পরিবর্তন চাই। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বারবার ক্ষমতায় গিয়ে দুর্নীতি, লুটপাট, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দলীয়করণ করবে আমরা এর পরিবর্তন চাই। আমরা চাই সরকার সবাইকে সমান চোখে দেখবে। প্রশাসনও সরকারদলীয় অধীন হলে কোনো ভালো কাজ হয় না।

জনসভায় জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, দেশে মেগা প্রকল্প হচ্ছে। যত বড় প্রকল্প ততবড় দুর্নীতি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বারবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মারাত্মক ক্ষতি করেছে। দুর্নীতি, দুঃশাসন আর দলীয়করণ ছাড়া দুটি দল আর কিছুই উপহার দিতে পারেনি। এক মন্ত্রী বলেছেন, দেশর মানুষ নাকি বেহেস্তে আছেন। আসলে শুধু আওয়ামী লীগের কর্মীরাই ভালো আছেন। তারা মানুষের কষ্টও বোঝে না।

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি বলেন, দেশের মানুষের হাতে টাকা নেই। দেশের মানুষ বাজার করতে পারছে না। রমজানে যদি নিত্যপণের দাম বেড়ে যায় তাহলে দেশের মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে। দেশের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। দেশের মানুষ উন্নয়নের আগে পেটে ভাত চায়। দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জাতীয় পার্টির লড়াই চলবে। জাতীয় পার্টি মানুষের সব অধিকার রক্ষা করতেই রাজনীতি করছে।

গাজীপুর মহানগর জাতীয় পার্টির উদ্যোগে জনসভায় মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি ও চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা এম এম নিয়াজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, কো চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য আলহাজ শফিকুল ইসলাম সেন্টু, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ আবদুস সাত্তার মিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান মো. আরিফুর রহমান খান, আহসান আদেলুর রহমান এমপি, গাজীপুর মহানগরের নেতাদের মধ্যে মো. জাকির হোসেন, হানিফ মাস্টার, বারি মাস্টার। মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো. মোশারফ হোসেনের পরিচালনায় এবং সহ-সভাপতি মো. হারুন-অর-রশিদের সঞ্চালনায় জনসভায় শীর্ষ নেতাদের মধ্যে ছিলেন- জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মমতাজ উদ্দিন, ভাইস-চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, যুগ্ম মহাসচিব শামসুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক এনাম জয়নাল আবেদীন, দপ্তর সম্পাদক-২ এমএ রাজ্জাক খান, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক আজাহারুল ইসলাম সরকার, সুজন দে, যুগ্ম কোষাধ্যক্ষ অ্যাডভোকেট আবু তৈয়ব, কেন্দ্রীয় মো. আব্দুস সাত্তার, এমএ হাশেম, নেতা সোলায়মান সামি, মো. মাসুদ, শরিফুল ইসলাম শরিফ, ইঞ্জিনিয়ার এলাহান উদ্দিন, মো. আবুল কালাম, মাহমুদুল হাসান আলাল, আব্দুস সাত্তার, শেখ মাসুদুল আলম টিটু, আনোয়ার হোসেন শান্ত, মোশাররফ হোসেন কাউন্সিলর, মো. শফিকুল ইসলাম স্বপন, শাহীন, স্থানীয় নেতাদের মধ্যে ছিলেন- গাজীপুর জেলা সদস্য সচিব খন্দকার কামরুজ্জামান মন্ডল, রোকসানা পারভীন, অ্যাডভোকেট মনোয়ার হোসেন, হুমায়ূন কবির সিকদার, সাইদুর রহমান মোড়ল, রায়হান মোলস্না, মো. নজরুল ইসলাম, আব্দুল করিম, আবসার উদ্দিন, দুলাল, আল-আমিন সরকার, আব্দুল হান্নান, লেহাজ উদ্দিনসহ প্রমুখ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে