সম্প্র্রতি ভারতের পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে। রোববার রাজ্যগুলোতে ভোট গণনা শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে চার রাজ্যের ভোট গণনা প্রায় শেষের পথে। বাকি একটির ভোট গণনা হবে আজ সোমবার। ২০২৪ সালে দেশটির লোকসভা নির্বাচনের আগে এই নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ভোটের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ে জয় নিশ্চিত করে ফেলেছে ভারতের বর্তমান ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। অন্যদিকে শুধু তেলেঙ্গানায় সফল কংগ্রেস।
এদিন সকাল সাতটা থেকে চার রাজ্যের ভোট গণনা শুরু হয়। গণনায় দেখা গেছে, মধ্যপ্রদেশে সরকার গঠন করতে যেখানে দরকার ১১৬ আসন। সেখানে বিজেপি পেয়েছে ১৬৭টি এবং কংগ্রেস পেয়েছে ৬২ আসন। অন্যদিকে রাজস্থানও হাতছাড়া হয়েছে কংগ্রেসের। সেখানে বিজেপি পেয়েছে ১১৫ আসন আর কংগ্রেস পেয়েছে ৬৯ আসন। এই রাজ্যে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ১০১ আসন।
একইভাবে ৫৪টি আসনে জয় পেয়ে ছত্তিসগড়েও জয় নিশ্চিত করেছে বিজেপি, যেখানে কংগ্রেস পেয়েছে ৩৬ আসন। রাজ্যটিতে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ৪৬ আসন।
যদিও তেলেঙ্গানায় জয় নিশ্চিত করেছে কংগ্রেস। সেখানে সরকার গঠন করতে প্রয়োজন ৬০ আসন। কিন্তু কংগ্রেস পেয়েছে ৬৩ আসন ও বিজেপে পেয়েছে ২ আসন। এখানে কংগ্রেসের সঙ্গে তুমুল লড়াই হয়েছে স্থানীয় একটি রাজনৈতিক দল বিআরএসের সঙ্গে, যারা পেয়েছে ৪০ আসন। অন্যদিকে আজ যে আসনটিতে ভোট গণনা হবে সেটি হলো মিজোরাম।
এদিকে, ভারতীয় রাজনীতিতে বহুল প্রচলিত এবং প্রমাণিত সত্য প্রবাদ হলো- 'উত্তরপ্রদেশ যার, দিলিস্ন তার'। তবে শুধু উত্তরপ্রদেশ নয়, গোটা উত্তর
ভারতের সমর্থন সঙ্গে নিয়েই কংগ্রেস একদা রাজত্ব করেছে দেশে। কিন্তু সেই সব রাজ্যেই এখন ক্রমে ক্ষমতাহীন হয়ে চলেছে ১৩৭ বছরের প্রাচীন দল। অন্যদিকে, ১৯৮০ সালে জন্ম নেওয়া বিজেপি সেই পুরনো পথেই বসেছে দিলিস্নর মসনদে। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে তাই চার রাজ্যের ফল বিজেপিকে 'বাড়তি অক্সিজেন' জোগাবে।
অন্যদিকে, ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা লোকসভা ভোটের আগে পাঁচ রাজ্যের এই ভোটকে বলছে সেমিফাইনাল। প্রতিটি রাজ্যেই বিজেপির প্রচারের মুখ ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রাথমিক ফল শেষ পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকলে বোঝা যাবে, হিন্দি বলয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আকর্ষণ এখনো অটুট। উত্তর ও পশ্চিম ভারতের জনসমর্থনের ওপর নির্ভর করেই মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি ১০ বছর ধরে ভারতের শাসন ক্ষমতায়। এই ফলের প্রাথমিক গতিপ্রকৃতি বোঝাচ্ছে হিন্দি বলয়ে মোদির প্রতি সেই আস্থা-ভরসা এখনো অপরিবর্তিত।
পাশাপাশি এটাও বোঝা যাচ্ছে, দক্ষিণ ভারতে বিজেপি সেভাবে শক্তি সঞ্চয় করতে পারছে না। কর্ণাটকে পরাস্ত হওয়ার পর তেলেঙ্গানাতেও তারা তেমন কিছু করতে পারল না। দক্ষিণে বিজেপির উপস্থিতি শুধু কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পুডুচেরিতে। এটাও বোঝাচ্ছে, ভারত জোড়ো যাত্রা দক্ষিণে কংগ্রেসকে শক্তি জোগালেও হিন্দি বলয়ে সেভাবে পায়ের তলায় জমি শক্ত করতে পারেনি।
এই পাঁচ রাজ্যের ভোটে বিরোধী জোট 'ইন্ডিয়া' বিজেপির মোকাবিলা করতে পারেনি। লোকসভা ভোটে 'ইন্ডিয়া' জোটবদ্ধ হয়ে বিজেপির মোকাবিলা করতে পারবে কি? এই ফলাফলের পর সেই প্রশ্ন প্রাসঙ্গিকতা পাবে।