রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক উপ-উপাচার্য এবং বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় আরও ১৪৭ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ অজ্ঞাত ৬০০ জনকে আসামি করা হয়।
রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় করা মামলায় প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহাসহ উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি গোলাম কিবরিয়া।
অভিযোগে বলা হয়, গত বছরের ৫ আগস্ট দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন’-এর কর্মী সিজানের (৩২) নেতৃত্বে প্রায় সাত শতাধিক মানুষ রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড সংলগ্ন মোড় থেকে আওয়ামী সরকারবিরোধী মিছিল শুরু করে। মিছিলটি খরবোনা সাঁকো এলাকায় পৌঁছালে হামলার শিকার হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরমান আলীর কার্যালয়ের সামনে ওঁত পেতে থাকা আসামিরা মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।
এজাহারে অভিযোগ করা হয়, হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা দিয়ে মিছিলকারীদের ‘জীবিত না রাখার’ নির্দেশ দেওয়া হয় এবং ৩ থেকে ৩৯ নম্বর আসামিরা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি চালায়। ৫ নম্বর আসামির কার্যালয়ের সামনে বাদী সিজানের ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো হয়, যার ফলে তিনি গুরুতর আহত হন। তার দুই পায়ের হাঁটুর নিচে এবং বাম কনুইয়ে আঘাত পেয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। তার শরীরে ২২টি সেলাই দেওয়া হয়।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, ৪০ থেকে ১৪৮ নম্বর আসামি এবং অজ্ঞাত অন্যান্য হামলাকারীরা হাত বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় এবং ধারালো অস্ত্র, চাইনিজ কুড়াল, জিআই পাইপ ও লাঠিসোঁটা ব্যবহার করে শান্তিপূর্ণ মিছিলে আক্রমণ চালায়।
ঘটনার প্রায় ৯ মাস পর গত ১২ মে বোয়ালিয়া মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন নগরীর শাহমখুদম থানার পবাপাড়া সুলতান সরদারের ছেলে মো. সিজান (৩২)। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। মামলা দেরিতে দায়ের করার কারণ হিসেবে শারীরিক অসুস্থতা এবং পরিবার ও সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
মো. সিজান জানান, হামলার পর তিনি গুরুতর আহত অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন এবং তার শরীরে ২২টি সেলাই পড়ে। ফলে দীর্ঘ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর পরিবারের সদস্য ও সহকর্মীদের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রায় দুই মাস আগে বোয়ালিয়া থানায় অভিযোগ দেন। গত ১২ মে সেটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে।
বোয়ালিয়া থানার ওসি মোস্তাক আহমেদ বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর প্রাথমিক তদন্ত করে গত ১২ মে মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। এখন আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না এবং মামলার বিষয়েও কিছু জানি না। সম্ভবত কোনো ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে আমার নাম মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’