শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

টাঙ্গাইলে ট্রেনে কাটা পড়ে পিতাপুত্রসহ নিহত ৩

নাটোরে শোকের মাতম
স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল ও নাটোর প্রতিনিধি
  ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
টাঙ্গাইলে ট্রেনে কাটা পড়ে পিতাপুত্রসহ নিহত ৩

বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব-ঢাকা রেললাইনে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার আনালিয়াবাড়ী এলাকায় শুক্রবার রাতে ট্রেনে কাটা পড়ে পিতা-পুত্রসহ তিন জনের মর্মান্তিক মৃতু্য হয়েছে। তারা হলেন- রাজশাহীর বেলপুকুর থানার মাহিন্দ্রা গ্রামের আলম মন্ডলের ছেলে শরিফ (৪০), নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার মো. আলাউদ্দিনের ছেলে রতন (৩২) ও রতনের শিশুপুত্র সানি (৬)।

স্থানীয় ও রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাতে রাজশাহীগামী দূরপালস্নার একটি বাস আনালিয়াবাড়ী এলাকায় হঠাৎ বিকল হয়ে পড়ে। পরে বাসটি মেরামত করার সময় কিছু যাত্রী নেমে রেললাইনে হাঁটাহাঁটি করছিলেন। এ সময় নীলফামারীগামী চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়ে শিশুসহ ওই তিনজনের মৃতু্য হয়। এ ঘটনায় আরও এক নারী আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে।

বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. তৈয়ব জানান, হতাহতরা বাসযোগে নাটোর থেকে ঢাকায়

\হযাচ্ছিলেন। বাসটি মহাসড়কের আনালিয়াবাড়ী এলাকায় পৌঁছার পর বিকল হয়। মেরামতের সময় তারা বাস থেকে নেমে রেললাইনে অবস্থান করছিলেন। একপর্যায়ে চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই তিনজন মারা যান।

বঙ্গবন্ধ সেতু পূর্ব রেলস্টেশনের বুকিং মাস্টার রেজাউল করিম জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই ওই তিনজনের মর্মান্তিক মৃতু্য হয়েছে। তাদের মধ্যে দু'জন একই পরিবারের সদস্য।

এদিকে দুর্ঘটনায় বুকের ধন (শিশু সন্তান) আর স্বামীকে হারিয়ে নির্বাক হয়ে আছেন উর্মি বেগম। তিনি বিলাপ করে বলেন, 'চোখের সামনেই আমার বুকের ধনকে (শিশুসন্তান) বাঁচাতে গিয়ে ওরা তিনজনই ট্রেনে কাটা পড়ল, আমি এ দৃশ্য ভুলতে পারছি না। আমি এখন কী নিয়ে বাঁচব?' ঊর্মির এই আর্তনাদে চোখ ভিজে উঠছে আশপাশের মানুষেরও।

শনিবার সকালে উপজেলার আদগ্রামে রতন প্রামাণিকের বাড়িতে গিয়ে শত শত মানুষের ভিড় দেখা যায়। ট্রেনে কেটে বিকৃত হওয়ায় আগত কাউকেই বাবা-ছেলের মরদেহ দেখানো হচ্ছে না। কাফনের কাপড়ে ঢেকে পাশাপাশি রাখা ছিল মরদেহ দুটি। অসময়ে বাবা- ছেলের মর্মান্তিক মৃতু্যতে শুধু পরিবারই নয়, আশপাশের মানুষের মধ্যেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

\হশোকে অনেকটা পাথর হয়ে রয়েছেন রতন প্রামাণিকের স্ত্রী ঊর্মি খাতুন। বেশ কিছু সময় পরপর চোখ মেলে চিৎকার করে কাঁদছেন আর বিলাপ করেছেন। স্বজনরা তাঁকে শান্ত করার অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন। বেলা ১১টার দিকে জানাজা শেষে মরদেহ দুটি দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় ডুকরে কেঁদে ওঠেন ঊর্মি। স্বামী-সন্তানের লাশের পেছনে ছোটার চেষ্টা করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এইচএসসি শেষ করে রতন কিছুদিন ছাত্রলীগের রাজনীতি করেন। একই সঙ্গে চাকরির জন্যও চেষ্টা করছিলেন। কিছুদিন আগে ঢাকার একটা গার্মেন্টেসে চাকরির ব্যবস্থা হয়। বৃহস্পতিবার রতন বাড়িতে এসেছিলেন স্ত্রী-ছেলেকে ঢাকায় নিয়ে যেতে।

রতনের ভাই মিনারুল প্রামাণিক বলেন, বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বাসে করে ঢাকায় যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন রতন। বড়াইগ্রাম থানা মোড় এলাকা থেকে বাসে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় রওনা হন। বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে টাঈাইলের আনালিয়াবাড়ী এলাকায় পৌঁছলে বাসটি বিকল হয়ে যায়। স্ত্রীকে বাসে বসিয়ে রেখে শিশুসন্তানকে প্রশ্রাব করানোর জন্য পাশের রেললাইনের কাছে যান। সেখানে সন্তানের পর তিনিও প্রশ্রাব করছিলেন। এ সময় শিশুটি রেললাইনে উঠে পড়ে। তখনই ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেন চলে আসে। শিশুটিকে রক্ষা করতে রতন ও তার সহযাত্রী শরিফ মন্ডল রেললাইনে উঠলে ট্রেনটি তাদের তিনজনকেই চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃতু্য হয়। ট্রেনের আলোয় পুরো ঘটনা দেখেন ঊর্মি খাতুন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে