মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে দেওয়া বরাদ্দের অর্থ খরচ করতে না পারায় সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি) ১৮ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে। কাটছাঁটের পর আরএডিপির আকার দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। যেখানে মূল এডিপির ছিল দুই লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা।

মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় সংশোধিত এডিপি অনুমোদন দেওয়া হয়। অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী। সভায় বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগকে (আইএমইডি) উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশনা দেন তিনি।

কমিশন সূত্র জানায়, সব মন্ত্রণালয় সময়মতো বরাদ্দকৃত অর্থ খরচ করতে পারছে না। ফলে এডিপির বাস্তবায়নে প্রত্যেকবারই ব্যয় কমানো হচ্ছে। মোট সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) সর্বোচ্চ ২৫ দশমিক ৮২ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে পরিবহণ ও যোগাযোগ খাতে, যা টাকার হ পৃষ্ঠা ১৫ কলাম ৪

অঙ্কে ৬৩ হাজার ২৬৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এরপরই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বিদু্যৎ খাতে ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ, যা টাকার অঙ্কে ৩৭ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা।

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে নিজস্ব অর্থায়ন কমছে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা। এডিপিতে নিজস্ব অর্থায়ন ছিল এক লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা। যা কমে হচ্ছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া, বিদেশি সহায়তা থেকে বরাদ্দ কমছে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা। এতে সংশোধিত এডিপিতে বিদেশি সহায়তার পরিমাণ দাঁড়াবে ৮৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এছাড়া চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে ৩৩০টি প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে বলেও সভায় আলোচনা হয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা এ বিষেয়ে প্রতিশ্রম্নতিও দিয়েছেন। এজন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করা হয়েছে।

এনইসি সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম ও প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার সংবাদ সম্মেলনে বৈঠকের বিষয়ে বিস্তারিত সাংবাদিকদের অবহিত করেন। এ সময় পরিকল্পনা বিভাগের সচিব সত্যজিৎ কর্মকারও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, সংশোধিত এডিপিতে নতুন করে যোগ হয়েছে অন্তত শ' খানেক নতুন প্রকল্প। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কমানোর কারণ হিসেবে কর্মকর্তাদের অদক্ষতাই দায়ী। এ জন্য কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়াতে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে মন্ত্রী আব্দুস সালাম বলেন, যেসব চলমান প্রকল্প অল্প বরাদ্দ দিয়ে চলছে, বরাদ্দ বাড়ানো হলে দ্রম্নত সমাপ্ত করা সম্ভব হবে, সেসব প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। উন্নয়ন প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়ন করতে আরও নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশনা দেন তিনি। এছাড়া অগ্রাধিকার চিহ্নিত করে জনগণের কল্যাণে গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্প হাতে নেওয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

পরিকল্পনা সচিব সত্যজিৎ কর্মকার জানান, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মূল এডিপিতে ৩৪৬টি প্রকল্প সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত ছিল। এর মধ্যে বিনিয়োগ ২৮৭টি, সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ১৭টি, কারিগরি সহায়তা ৩২টি এবং স্বঅর্থায়ন ১০টি প্রকল্প রয়েছে।

সংশোধিত এডিপিতে ৩৩২টি প্রকল্প সমাপ্তির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিনিয়োগ ২৭১টি, সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ১৯টি, কারিগরি সহায়তা ২৯টি, স্বঅর্থায়নে ১৩টি প্রকল্প রয়েছে। তবে এর মধ্যে ৩৩০টি প্রকল্প শেষ করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা কথা দিয়েছেন। এ জন্য এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন জুনের মধ্যে শেষ করতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

সচিব বলেন, এই ৩৩০টি প্রকল্পের ফলাফল যথাসময়ে পেতে এবং আর্থিক ও উন্নয়ন পরিকল্পনার শৃঙ্খলা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে প্রকল্পগুলোর আবশ্যিকভাবে জুনের মধ্যে সমাপ্ত করতে হবে। তা ছাড়া গত বছরের ১১ মে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এডিপি অনুমোদনের জন্য অনুষ্ঠিত এনইসি সভায় গত বছরের জুনের মধ্যে ২৪টি প্রকল্প সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ওই সময়ে ২৪টি প্রকল্প সমাপ্ত করতে না পারায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দসহ পুনরায় অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।

সর্বশেষ অনুমোদিত প্রাক্কলিত ব্যয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রকল্পগুলো আবশ্যিকভাবে সমাপ্ত করতে হবে বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে ২৪টি প্রকল্পের মধ্যে সাতটি প্রকল্প ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত সংশোধিত এডিপিতে সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত তালিকায় রাখা হয়নি। অর্থাৎ প্রকল্পগুলো ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা হচ্ছে।