শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

মিল্টন সমাদ্দারের সব ভিডিও সরিয়ে ফেলার নির্দেশ

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৫ মে ২০২৪, ০০:০০
মিল্টন সমাদ্দার

মিল্টন সমাদ্দারের কর্মকান্ডের বিষয়ে আন্তর্জাতিকমানের তদন্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয় থেকে। এমন নির্দেশনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে মিল্টন সমাদ্দারের সব ভিডিও সরিয়ে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বিটিআরটিকে (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন)। বিটিআরসির পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাইবার বিভাগগুলো এ ব্যাপারে কাজ করছে। মিল্টনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার প্রক্রিয়া চলছে। একই সঙ্গে সার্বিক বিষয়ে জানতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রোববার ডিবি কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে মিল্টনের স্ত্রীকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সরকারের একটি উচ্চ পর্যায়ের সূত্রে জানা গেছে, মিল্টন সমাদ্দার মানবতার নামে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন করেছেন। কারণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে মিল্টন সমাদ্দারের মানবতার সেবা সংশ্লিষ্ট নানা ধরনের ভিডিও। এতে দানশীল দেশের দানশীল ব্যক্তি ছাড়াও বিদেশি ব্যক্তি ও দাতা এবং সাহায্য সংস্থার তরফ থেকে মিল্টন সামাদ্দারের প্রতিষ্ঠিত 'চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার' আশ্রমের নামে অর্থসহ নানাভাবে সহায়তা করার তথ্য পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তারের পর মিল্টন সমাদ্দারের বিতর্কিত কর্মকান্ডের বিষয়ে দেশ-বিদেশে নানা প্রশ্ন উঠেছে। বিভিন্ন দেশের দূতাবাসেও ইসু্যটি আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এজন্য খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয় থেকে মিল্টন সমাদ্দারের যাবতীয় কর্মকান্ডের আন্তর্জাতিকমানের তদন্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রিত ন্যাশনাল টেলিকম মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান

যায়যায়দিনকে বলেন, মানবসেবী হিসেবে মিল্টন সমাদ্দারের তৈরি করা শত শত ভিডিও কনটেন্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রয়েছে। যা দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। পরে বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্য মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার হলে স্বাভাবিক কারণেই দেশ-বিদেশে ঘটনাটি সমালোচিত হচ্ছে। যা বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন্ন হয়েছে। এ ধরনের বিতর্কিত মানুষের জন্য দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন্ন হওয়ার বিষয়টি মোটেই কাম্য নয়। তাই ঘটনাটির আন্তর্জাতিকমানের তদন্ত হওয়া প্রয়োজনীয়তার নির্দেশনা এসেছে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে।

তিনি আরও বলেন, সেই নির্দেশনা অনুযায়ী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিল্টন সমাদ্দারের ছড়িয়ে পড়া ভিডিও কনটেন্ট দ্রম্নততার সঙ্গে বন্ধ করার বা মুছে ফেলতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে বিটিআরসিকে। যাতে আর কোনো দেশি বা বিদেশি ব্যক্তি বা দাতা সংস্থা বা সাহায্য সংস্থা মিল্টন সমাদ্দারের আশ্রমের নামে অর্থ পাঠিয়ে প্রতারিত না হয়। এ ব্যাপারে কূটনৈতিক তৎপরতাও অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে বিটিআরসি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাইবার বিভাগ এ ব্যাপারে সম্মিলিতভাবে কাজ শুরু করেছে বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) মানিলন্ডারিং ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, মিল্টন সমাদ্দারের ব্যক্তিগত, তার স্ত্রী ও পরিবারের সদস্য এবং আশ্রমটির নামে থাকা সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে। মিল্টন সমাদ্দার মানিলন্ডারিংয়ে জড়িত কিনা সে বিষয়ে সিআইডির পাশাপাশি প্রয়োজনে তদন্তে যুক্ত করা হতে পারে দুর্নীতি দমন কমিশনকেও (দুদক)। মিল্টন সমাদ্দারের স্থাবর-অস্থাবর সহায় সম্পত্তির বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।

এদিকে শনিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ সাংবাদিকদের জানান, অত্যন্ত গভীরভাবে মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার তদন্ত চলছে। কারণ এর সঙ্গে নানা বিষয়াদি জড়িত। যদিও মিল্টন সমাদ্দার তিন দিনের রিমান্ডে রয়েছে ডিবির কাছে। রিমান্ডে মিল্টন সমাদ্দার সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য জানার চেষ্টা চলছে। আর তথ্য জানতে আশ্রমটির চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারের স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রোববার ডিবি কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে।

ডিআইজি হারুন-অর-রশীদ বলেন, যিনি নিজের পিতাকে পিটিয়ে গ্রামছাড়া করতে পারেন, তিনি কিভাবে ঢাকায় এসে মানবতার ফেরিওয়ালা হলেন সেটি অত্যন্ত গভীরভাবে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে আসা সব অভিযোগ সম্পর্কে মিল্টন সমাদ্দারের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। তার কিভাবে উত্থান হয়েছে, তার অর্থের উৎস কি, কিভাবে তিনি দরিদ্র মানুষ সংগ্রহ করতেন এবং কেনই বা তিনি টর্চার সেলে নিয়ে ওইসব মানুষকে পেটাতেন সেসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে মিল্টন ও তার স্ত্রীকে।

ডিবিপ্রধান আরও বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে কিভাবে মিল্টন সমাদ্দার অর্থ উপার্জন করতেন, সেটি জানার চেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে তাকে নানাভাবে সহায়তাকারীদের শনাক্ত করার কাজ অব্যাহত আছে। মিল্টন সমাদ্দারের ৩ থেকে ৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। ওইসব অ্যাকাউন্টে কারা টাকা পাঠাতেন এবং কোথা থেকে অর্থ আসত সেসব বিষয়েও গভীর তদন্ত অব্যাহত আছে।

ডিবি সূত্রে জানা গেছে, জাল মৃতু্য সনদ তৈরি করায় বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। এতে মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে তার আশ্রমে নিহতদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রির গুরুতর অভিযোগ আরও জোরালো হয়েছে। এজন্য আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে সবশেষ কবর দেওয়া লাশ তুলে পোস্টমর্টেম করার প্রক্রিয়া শুরু চলছে। এখন পর্যন্ত আশ্রমে ঠিক কতজনের মৃতু্য হয়েছে, তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান জানাতে পারেননি রিমান্ডে থাকা মিল্টন সমাদ্দার।

তদন্তকারী সূত্রে জানা গেছে, নিহত বা মৃতু্য হওয়া কাউকেই কোনো সরকারি বা সরকার অনুমোদিত কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। এতে নিহতদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রির অভিযোগ গভীর সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। যে দু'তলা বাড়িটি ভাড়া নিয়ে মিল্টন সমাদ্দার ২০১৪ সালে আশ্রমটি গড়ে তোলেন, সেই বাড়ির মালিক ইকবাল হোসেনের সন্ধান করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত ১ মে রাতে ঢাকার মিরপুর মডেল থানাধীন দক্ষিণ পাইকপাড়ার ৮ নম্বর সড়কের ৪৬২ নম্বর দু'তলা বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত 'চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার' সেন্টার থেকে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেপ্তারের পর পরই তার বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় ৩টি মামলা হয়। যার মধ্যে একটি মামলার বাদী পুলিশ। অপর দুটি মামলার বাদী ভুক্তভোগী দুইজনের পরিবার।

গত ২ মে বৃহস্পতিবার মিল্টন সমাদ্দারকে ঢাকার সিএমএম আদালতে সোপর্দ করে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির মিরপুর জোনাল টিমের উপপরিদর্শক (এসআই) কামাল হোসেন। ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. তোফাজ্জল হোসেন শুনানি শেষে আসামিকে ৩ দিনের রিমান্ডে পাঠান। রিমান্ডের আবেদনে বলা হয়, আসামির আশ্রমে থাকাকালে মৃতু্যবরণ করা ৫০ ব্যক্তির জাল মৃতু্য সনদ তৈরি করেছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে