সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ভোটারদের কেন্দ্রবিমুখ করাই বিএনপির চ্যালেঞ্জ

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৭ মে ২০২৪, ০০:০০
ভোটারদের কেন্দ্রবিমুখ করাই বিএনপির চ্যালেঞ্জ

জাতীয় নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনেও ভোটবিমুখতার বিষয়টি ফুটিয়ে তুলতে চায় বিএনপি। তবে জাতীয় নির্বাচনের মতো তৎপরতা নেই দলটির। সেই সময় টানা কর্মসূচির পর নির্বাচনের দিনে হরতাল ছিল। আর চার মাস পরের উপজেলা নির্বাচনে লিফলেট বিতরণ ছাড়া আর তেমন কর্মকান্ডে নেই দলটির। সঙ্গতকারণে ভোটারবিমুখতার লক্ষ্য পূরণ করাই দলটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথম ধাপে ১৪১ উপজেলায় নির্বাচনের ভোটের প্রচার-প্রচারণা এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। নির্বাচনী এলাকাগুলোতে ব্যানার, ফেস্টুন আর পোস্টারে ছেয়ে গেছে। প্রচারণায় প্রার্থীরা যেমন থেমে নেই, তেমনি ভোটারদেরও ভোট দিতে আগ্রহ রয়েছে। শান্তিপূর্ণ ভোটের সব প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন।

বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভোটারদের কেন্দ্রবিমুখ রাখার যে চেষ্টা তার সফলতা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ সর্বশক্তি নিয়োগ করেও অনেক স্থানে বিএনপি নেতাদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখা যায়নি। এসব নেতাদের অনুসারী প্রায় সবাই বিএনপির কর্মী। তারা নির্বাচনের মাঠে থাকবে। এছাড়া স্থানীয় নির্বাচন হওয়ায় সাধারণ ভোটাররা জাতীয় রাজনীতি নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামাবে না। তারা তাদের আত্মীয়স্বজন বা প্রতিবেশী প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবে। এছাড়া বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা নেই এবং উদ্যোগও নেই। বিষয়টি দৃশমান। ফলে আতঙ্কের কারণে কেন্দ্রবিমুখ হবেন না অনেকেই।

বিভিন্ন উপজেলার নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কমাতে বিএনপির উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে লিফলেট বিতরণ ও কেন্দ্রীয় নেতাদের ভোট

বর্জনের আহ্বান। সাংগঠনিক তৎপরতার মধ্যে আছে, দলীয় নির্দেশ অমান্য করায় প্রথম ধাপে ৭৯ এবং দ্বিতীয় ধাপে ৬১ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর পরেও নেতাদের নির্বাচন থেকে বিরত রাখা যায়নি। বহিষ্কারের আগে যে শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছিল সেই নোটিশের জবাব দেননি অধিকাংশ নেতারা।

বিএনপি সূত্রমতে, দলের আগ্রহী প্রার্থীদের ভোট থেকে বিরত রাখতে যেসব নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাদের কার্মকান্ডেও হতাশ বিএনপি। কারণ তাদের কথা অনেকেই শোনেনি। এবার ভোটারদের কেন্দ্র যাওয়া থেকে বিরত রাখতেও তাদের কার্যকর কোনো উদ্যোগও নেই বললেই চলে। বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জেলার শীর্ষ নেতারা উপজেলা নির্বাচনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য নেতা-কর্মীদের আহ্বান করছেন। কেন্দ্রে জানাচ্ছেন, ক্ষমতাসীনদের চাপ ও ফাঁদে পড়ে দলের কেউ কেউ প্রার্থী হয়েছেন। আবার অনেক নেতা গোপনে প্রার্থীদের সহায়তা করছেন। জয়ী হলে দলে ফেরানোর আশ্বাসও দিচ্ছেন।

ভোটারদের কেন্দ্রবিমুখ করার ব্যাপারে বিএনপি নেতাদের আশা দেখাচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ও তাদের নিজেদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত। এর ফলে ভোটাররা কেন্দ্রবিমুখ হবে ধারণা করছেন বিএনপি নেতারা।

বিএনপি নেতাদের মতে, ভোটারদের কেন্দ্রবিমুখ করা গেলে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জোরালো হবে। কূটনৈতিকভাবেও সরকারের ওপর চাপ বাড়বে, যা আগামী দিনে বিএনপির রাজপথের আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

উপজেলা নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রবিমুখ করার জন্য দলের নেওয়া পদক্ষেপের বিষয়ে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সারাম আজাদ বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জনের পাশাপাশি ভোটারদের ভোটবিমুখ করতে দল নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। নির্বাচনের দিন সাধারণ মানুষসহ দলীয় নেতাকর্মী ও দলের সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে যেতে নিরুৎসাহিত করতে গণসংযোগ এবং লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। কেন্দ্রে থেকে লিফলেট ছাপিয়ে উপজেলা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ডগুলোতে পাঠানো হয়েছে। উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও গ্রাম পর্যায়ে কর্মিসভা, মতবিনিময় সভা এবং যৌথ সভাও হয়েছে। এসব কিছু কেন্দ্র থেকে মনিটরিং করা হয়। দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন দিকনির্দেশনাও। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে বিভাগীয় সাংগঠনিক টিম জেলা, উপজেলা, ওয়ার্ড এবং পাড়া, মহলস্নায় সাধারণ জনসাধারণসহ ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন। বিএনপি'র আহ্বানে ভোটারদের নির্বাচন বর্জন করে ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে বাবা-মা, ভাই-বোন, সন্তান, স্বামী-স্ত্রীকে সময় দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, 'দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও'- সেস্নাগান নিয়ে 'দখলদার আওয়ামী সরকারের আসন্ন প্রতারণামূলক ডামি উপজেলা এবং সব স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জন করুন'- শিরোনামে লিফলেট বিতরণ করছে বিএনপি। লিফলেটে 'বর্তমান অবৈধ সরকারের আমলে কখনোই জাতীয় ও স্থানীয় সরকার কোনো নির্বাচনই অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি'সহ ভোটদান থেকে বিরত থাকার আহ্বান করা হয়েছে।

সোমবার রাজধানীতে লিফলেট বিতরণের সময় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে জনগণ যাবে না। কারণ ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের পর ক্ষমতাসীনরা আবার একটি ডামি নির্বাচন করতে যাচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে