মিয়ানমারে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের সংঘাত ক্রমেই বাড়ছে। সেই সংঘাত থেকে বাঁচতে আরও অনেক রোহিঙ্গা রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগে থেকেই বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। তাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে এখন পর্যন্ত আশানুরূপ কোনো অগ্রগতি নেই। এ অবস্থায় নতুন করে শরণার্থীদের ঢল নামলে তা বাংলাদেশের ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত শুক্রবার (২১ জুন) বাংলাদেশের এক কর্মকর্তার বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে
\হমিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাত বেড়েছে। এর ফলে সীমান্ত পেরিয়ে বেশ কিছু রোহিঙ্গা হয়তো বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন।
কক্সবাজারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান রয়টার্সকে বলেছেন, সীমান্ত পেরিয়ে আরও রোহিঙ্গা কক্সবাজারে প্রবেশের খবর পেয়েছে তার অফিস।
তিনি বলেন, 'কিছু মানুষ বিভিন্ন উপায়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে এবং বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, কিছু লোককে অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।'
গত বছরের শেষের দিক থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির তীব্র লড়াই চলছে। এরই মধ্যে রাখাইনের নয়টি প্রধান শহর দখল করেছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি। আরও এলাকা দখলের জন্য আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে তারা।
বিদ্রোহীদের এমন সমন্বিত আক্রমণে জান্তা সরকার ২০২১ সালে অভু্যত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে।
গত মে মাসে আরাকান আর্মি জানিয়েছিল, তারা বুথিডাং শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ওই এলাকায় বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা বসবাস করেন।
অভিযোগ উঠেছে, আক্রমণের সময় মুসলিম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদেরও নিশানা করেছিল আরাকান আর্মি। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিদ্রোহীরা।
এছাড়া, সম্প্রতি বুথিডাংয়ের পশ্চিমে অবস্থিত মংডু শহরের বাসিন্দাদের এলাকা ছাড়তে বলেছে আরাকান আর্মি। ওই এলাকায় জান্তা অবস্থান লক্ষ্য করে তীব্র আক্রমণ চালানো হবে বলে জানিয়েছে তারা।
কিন্তু, শহর থেকে বের হওয়ার সব রাস্তা বন্ধ থাকায় মংডুর বাসিন্দাদের পালানোর পথ নেই বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ এবং স্থানীয় একজন রোহিঙ্গা নেতা। শহরটিতে বর্তমানে প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা রয়েছেন।
স্বাভাবিক হয়নি নৌযান চলাচল
এদিকে এখনো স্বাভাবিক হয়নি টেকনাফ-সেন্টমার্টিনের নৌ যোগাযোগ। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের নাইক্যংদিয়া এলাকায় গোলাগুলি বন্ধ না হওয়ায় সেন্টমার্টিনগামী সার্ভিস বোটসহ সবধরনের যান চলাচল থমকে গেছে।
ফলে বিকল্প পথে উত্তাল সাগর ডিঙিয়ে সেন্টমার্টিনে নৌযান চলাচল করছে। যাত্রী ও জরুরি পণ্য আনা-নেওয়ায় নৌযান যাচ্ছে শাহপরীর দ্বীপ হয়ে সেন্টমার্টিন। ফিরছেও একই পথে। তবে, বর্ষায় সাগর উত্তাল থাকায় বিকল্প এ পথটি পাড়ি দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা।
শনিবার সকালেও শাহপরীর দ্বীপ থেকে জরুরি পণ্য এবং কিছু যাত্রী নিয়ে সেন্টমার্টিন গেছে দুটি ট্রলার। একই সঙ্গে সেন্টমার্টিন থেকে রোগীসহ ১৫ যাত্রী নিয়ে শাহপরীর দ্বীপ এসেছে দুটি স্পিডবোট।
স্বাভাবিক রুটের চেয়ে বিকল্প রুটটিতে উত্তাল সাগর পাড়ি দিতে হলেও নৌযান চলাচল করায় কিছুটা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান। তবে টেকনাফ দিয়ে নৌযান চলাচল স্বাভাবিক না হওয়ায় হতাশ দ্বীপের মানুষ।
চেয়ারম্যান মুজিব জানান, শনিবার সকালে শাহপরীর দ্বীপের বদরমোকাম এলাকা হয়ে দুটি ট্রলার সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে যাত্রা করে। ট্রলার দুটি দুপুর ১২টার দিকে দ্বীপে পৌঁছায়। ট্রলার দুটিতে ৩০০ গ্যাস সিলিন্ডার, কিছু খাদ্যপণ্য ও ৩০-৪০ জন যাত্রী ছিল।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুটি ট্রলারযোগে দ্বীপের ৩৫ শিক্ষার্থীসহ ৯২ জন যাত্রী নিয়ে দুটি ট্রলার নিরাপদে শাহপরীর দ্বীপে পৌঁছে। কিন্তু দ্বীপের মানুষ চান, আগের মতো নাফ নদী হয়ে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌযান চলাচল স্বাভাবিক হোক।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ও স্পিডবোট মালিক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম জানান, শনিবার প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে দ্বীপ থেকে রোগীসহ ১৫ যাত্রী নিয়ে দুটি স্পিডবোট উত্তাল ঢেউ পাড়ি দিয়ে নিরাপদে শাহপরীর দ্বীপে পৌঁছে।
মিয়ানমারে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর চলমান সংঘাতের মাঝে গত ১ জুন বিকালে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে যাবার পথে পণ্যসহ ১০ জন যাত্রীর ট্রলারকে নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি করা হয়। একইস্থানে আরও তিনবার একই পথের নৌযানে গুলির ঘটনা ঘটে। ফলে নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে বঙ্গোপসাগর ব্যবহার করে যাত্রীর আসা যাওয়া ও পণ্য নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। সেভাবেই চলছে এখনো।