হৃদযন্ত্রে 'স্থায়ী পেস মেকার' বসানোর পর সিসিইউতে (করোনারি কেয়ার ইউনিট) ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রেখে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে। সোমবার বিকাল পৌনে ৫টায় তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউর সব সুবিধাযুক্ত কেবিনে নেওয়া হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্রে পেস মেকার স্থাপনের পর সোমবার আরও বেশ কিছু পরীক্ষা করা হয়। সেসব রিপোর্ট মেডিকেল বোর্ড সদস্যরা দেখার পর সবকিছু পর্যালোচনা করে তাকে সিসিইউর সব সুবিধা সংবলিত কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে। এখানে ডাক্তারদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে উনার চিকিৎসা চলছে।
এর আগে গত রোববার বিকালে এভারকেয়ার হাসপাতালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্রে 'স্থায়ী পেস মেকার' সফলভাবে বসানো হয়। এরপর তাকে সিসিইউতে ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। সোমবার দুপুরে অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে গঠিত মেডিকেল বোর্ড বৈঠকে বসে। তারা বিএনপি চেয়ারপারসনের গত ১২ ঘণ্টার রিপোর্টগুলো পর্যালোচনা করেন। এরপর সিসিইউতে খালেদা জিয়াকে বোর্ড সদস্যরা দেখতে যান। এরপর আবার বৈঠক করে তাকে কেবিনে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেন। মেডিকেল বোর্ডের
এই বৈঠকে লন্ডন থেকে খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবায়দা রহমানসহ অষ্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।
এর আগে, গত শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খালেদা জিয়ার হৃদরোগের সমস্যা আগে থেকেই ছিল। হার্টে তিনটি বস্নক ছিল। আগে একটা রিং পরানো হয়েছিল। সবকিছু পর্যালোচনা করে বিদেশি চিকিৎসক ও মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে পেস মেকার বসানো হয়েছে বলে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক জাহিদ জানান। ৭৯ বছর বয়সি খালেদা জিয়া আর্থ্রাইটিস, হৃদ?রোগ, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন।
উলেস্নখ্য, গত ২ মে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওইসময় চিকিৎসকরা তাকে সিসিইউতে রেখে দুই দিন চিকিৎসা দিয়েছিলেন। গত বছরের ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তখন পাঁচ মাসের বেশি সময় চিকিৎসা শেষে গত ১১ জানুয়ারি তিনি বাসায় ফেরেন। সে সময় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নিতে তার পরিবার থেকে সরকারের কাছে আবেদন করা হলেও অনুমতি পাওয়া যায়নি। এমন পরিপ্রেক্ষিতে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত বিএনপির চেয়ারপারসনের রক্তনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয় গত বছরের ২৭ অক্টোবর। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে খালেদা জিয়ার রক্তনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। তার স্বাস্থ্য কিছুটা স্থিতিশীল হলে সে দফায় পাঁচ মাসের বেশি সময় পর তাকে বাসায় নেওয়া হয়েছিল।
৭১ বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতি : সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে তার সুচিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশ পাঠানোর দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৭১ জন বিভিন্ন পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তি। এক যুক্ত বিবৃতিতে নাগরিকরা বলেন, মিথ্যা-বানোয়াট মামলায় সরকারের হয়রানির শিকার হয়ে খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে বন্দি জীবনযাপন করার ফলে নানাবিধ স্বাস্থ্য জটিলতায় আক্রান্ত হয়েছেন যা বর্তমানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। তিনি এখন জীবন-মৃতু্যর সন্ধিক্ষণে। খালেদা জিয়ার প্রতি সরকার অমানবিক ব্যবহার ও আচরণ করছে, যা সাংবিধানিক লঙ্ঘন। খালেদা জিয়াকে বাঁচাতে হলে বিদেশে 'অ্যাডভান্সড সেন্টার'-এ নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া জরুরি। বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী বিশিষ্টজনদের মধ্যে রয়েছেন, বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ, প্রফেসর ড. আনোয়ারউলস্নাহ চৌধুরী, প্রফেসর ড. মাহবুব উলস্নাহ, কবি আল-মুজাহেদী, প্রফেসর ড. দিলারা চৌধুরী, প্রফেসর ড. আ ফ ম ইউসুফ হায়দার চৌধুরী প্রমুখ।