চীনের দক্ষিণ উপকূলের গুয়াংঝু শিপইয়ার্ডে এমন কিছু অদ্ভুত ধরনের জাহাজ তৈরি শুরু হয়েছে যেগুলো একই সঙ্গে বার্জ ও ব্রিজ বা সেতু হিসেবে কাজ করে।
সম্প্রতি এই সংকর নৌযানগুলোর ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। যেখানে দেখা যায় নৌযানগুলোর এমন ‘পা’আছে, যা নামিয়ে এগুলোকে অগভীর পানিতেও স্থিতিশীল রাখা যায়।
আবার এগুলোর সামনের অংশ থেকে প্রায় ১০০ মিটার লম্বা একটি সেতু বের করে সৈকতের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা যায়।
এই জাহাজগুলোর সেতুর মতো বর্ধিত অংশ একসঙ্গে যুক্ত হয়ে বিশাল আকারের সংযোগ সেতু তৈরি করে।
কিন্তু যে আশঙ্কা করা হচ্ছে তা হালো, কোনো এক সময় এগুলোকে তাইওয়ান উপকূলে সৈন্য ও ট্যাংক নামানোর কাজে ব্যবহার করতে পারে চীন।
কেননা, অতীতে, চীনা সমর পরিকল্পনাবিদদের কাছে তাদের সশস্ত্র বাহিনীকে তাইওয়ান উপকূলে নামানোর দুটি প্রধান বিকল্প ছিল।
তারা হয় ফেরি ব্যবহার করে সরাসরি তাইওয়ানের বন্দরে সৈন্য ও ট্যাংক খালাস করতে পারত অথবা ‘রো র ‘ ফেরি ব্যবহার করে সামরিক বাহিনীর উভচর যানগুলো অগভীর সমুদ্রে নামাত।
কিন্তু অবসরপ্রাপ্ত আমেরিকান নৌ কর্মকর্তা টম শুগার্ট বলেন, ‘এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগসূত্র অনুপস্থিত ছিল।’
আর সেটি হলো—বন্দর বা বিশেষ উভচর যান ছাড়াও তো অন্যান্য সমরযানকে পৌঁছাতে হবে।
এ ক্ষেত্রে সাধারণ ফেরিগুলো কীভাবে অ-উভচর যান ও ট্রাকগুলোকে সরাসরি তাইওয়ানের সৈকতে পাঠাবে?
২০২১ সালের স্যাটেলাইট ছবিতে চীনা বন্দরগুলোতে ভাসমান সেতু দেখা গেলেও সেগুলো যথেষ্ট সুবিধাজনক ছিল না।
সাবেক মার্কিন নৌ গোয়েন্দা কর্মকর্তা মাইক ডাহম বলছেন, ২০২০ সালে এই নতুন বার্জগুলোর জন্য পেটেন্ট দাখিল করে চীন ।
এগুলো ১৯৪৪ সালে নরম্যান্ডিতে মিত্রবাহিনীর আক্রমণে ব্যবহৃত ‘মালবেরি হারবারের’ মতো, তবে আরও বেশি বহুমুখী।
এই বার্জগুলোকে একত্র করে একটি বিশাল সেতু তৈরি করা যায়, যা আরও বড় জাহাজগুলোকে উপকূল থেকে দূরে থাকা বার্জগুলোতে সৈন্য ও ট্যাংক নামাতে সাহায্য করে।’
যখন এই বার্জগুলো সংযুক্ত হয়, তখন মনে হয় একসঙ্গে চারটি রো রো ফেরি সেখানে নোঙর করতে পারবে।
এর অর্থ, প্রায় ১ হাজার ২০০ যান এবং ৬ হাজার লোক নামানো সম্ভব, যা একটি ব্রিগেডের সমতুল্য।
অবাক ব্যাপার হলো, এই জাহাজগুলো চীনের ৬০টিরও বেশি যানবাহী জাহাজের পূর্ণ বহনক্ষমতাসম্পন্ন।
ব্রিটিশ থিংক ট্যাংক রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউট বা রুসির বিশ্লেষক সিদ্ধার্থ কৌশল অবশ্য মনে করেন,
যেকোনো আক্রমণের প্রথম পর্যায়ে এই বিশাল ও মাইন-আর্টিলারির প্রতি দুর্বল অদ্ভুতদর্শন নৌযানগুলো ব্যবহারের সম্ভাবনা কম।
তবে, চীন সৈকতে প্রাথমিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারলে এগুলো পরবর্তী বাহিনী ও সরবরাহের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে।
শুগার্টের মতে, চীনের সম্ভবত সাতটি নতুন বার্জ-সেতু নৌযান রয়েছে। স্বস্তির খবর হলো, তাইওয়ান আক্রমণের জন্য এই সংখ্যা সম্ভবত যথেষ্ট নয়। কিন্তু খারাপ খবর হলো—চীন অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে জাহাজ নির্মাণ করে।