বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
উপবৃত্তি বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

কেউ সমালোচনা করলেই ভীত হতে হবে, বিশ্বাস করি না

যাযাদি ডেস্ক
  ২৫ জুন ২০২৪, ০০:০০
কেউ সমালোচনা করলেই ভীত হতে হবে, বিশ্বাস করি না
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার ঢাকায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ ২০২৪ এর সেরা মেধাবী পুরস্কার এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্কলার অ্যাওয়ার্ড ২০২৩ প্রাপ্তদের মধ্যে সনদ ও চেক বিতরণ করেন -ফোকাস বাংলা

আত্মমর্যাদাবোধ ও আত্মবিশ্বাস মানুষকে শক্তি দেয় জানিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, 'কেউ সমালোচনা করলেই ভীত হয়ে যেতে হবে, আমি এটা বিশ্বাস করি না। শিক্ষার্থীদের বলব, সবসময় এটাই চিন্তা করতে হবে। কে কী বলল, তার জন্য চোখের পানি ফেলে মুখ লুকাতে হবে তা না। নিজের বিশ্বাস থেকে শিখতে হবে। তাহলে এ দেশকে তোমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।'

সোমবার প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের (পিএমইএটি) অধীনে অসচ্ছল ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

1

শিক্ষাবৃত্তির জন্য অনুদান দিতে বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েন শেখ হাসিনা বলেন, 'আমাদের দেশে অনেক বিত্তবান আছে। কিছু লোকের তো বেশ টাকা-পয়সা হয়ে গেছে। বিত্তবানরা যদি এই ট্রাস্ট ফান্ডে অনুদান দেয় তাহলে আমরা আরও বেশি করে ব্যবহার করতে পারব।'

বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ফান্ড থেকে এই তহবিলে অন্তত দুই কোটি টাকা অনুদান দেওয়ার ঘোষণাও দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমি আমার ছোট বোন শেখ রেহানার সাথে আলোচনা করে এটা দিয়ে দেব। আমরা নিজেরাও বৃত্তি দিচ্ছি। এখানে দিতে পারলে নিজেদের একটু আত্মতৃপ্তি হবে।'

সমাজে ছড়িয়ে থাকা মেধাবীদের উঠিয়ে নিয়ে আসা সরাকারের মূল উদ্দেশ্য জানিয়ে তিনি বলেন, 'সে কারণে ট্রাস্টের মাধ্যমে বৃত্তি দিয়ে যাচ্ছি।'

এবার মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক এবং সমমানের ৬৪ লাখ ৭০ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ২ হাজার ২০৮ কোটি টাকা বিতরণ করা হবে।

একই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী 'বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ' প্রতিযোগিতা-২০২৪ এর ১৫ জন শিক্ষার্থী এবং ২১ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২০২৩ সালের 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্কলার অ্যাওয়ার্ড' বিতরণ করেন।

'বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ'

প্রতিযোগিতায় পুরস্কারপ্রাপ্ত ১৫ শিক্ষার্থীর প্রত্যেকেই দুই লাখ টাকা ও একটি সনদপত্র পেয়েছেন।

'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্কলার অ্যাওয়ার্ড'প্রাপ্ত ২১ শিক্ষার্থীর প্রত্যেকেই একটি সনদপত্র ও তিন লাখ টাকা করে পেয়েছেন।

শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পাঠ্যপুস্তক, পাঠ্যপুস্তকের কার্যপ্রণালি, শিক্ষাক্রম, সবকিছু আমরা পরিবর্তনশীল বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে করছি। সৃজনশীল শিক্ষার ব্যবস্থা, মেধা অন্বেষণ, মেধার মাধ্যমে শিক্ষাকে আরও আপন করে নেওয়া, শিক্ষাকে আনন্দ মুহূর্ত পরিবেশে করা, সেই পদ্ধতিতে আমরা আসতে চাই।'

তিনি বলেন, 'সারাক্ষণ যদি কেউ বলে পড় পড় পড়, এটা কি ভালো লাগে বলো? মোটেই ভালো লাগে না। যা একটু পড়ার ইচ্ছা থাকে সেটাও নষ্ট হয়ে যায়। এটা বাস্তব কথা। সেজন্য এমনভাবে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়েছি যাতে ছেলেমেয়েরা আগ্রহ নিয়ে পড়ে। পড় পড় করতে হবে না। নিজেরাই পড়বে।'

কিছু লোক থাকে তাদের 'কখনো কোনো কিছু ভালো লাগে না', আর 'ভালো হতেও দিতে চায় না' মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'তাদেরকে পাত্তা না দিলেও চলবে। আমরা আমাদের দেশকে নিয়ে এগিয়ে যাব। এ আত্মবিশ্বাস নিয়ে আমাদের চলতে হবে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি এখন আমাদের স্মার্ট বাংলাদেশ করতে হবে।'

বিজ্ঞান, গবেষণা ও প্রযুক্তি জ্ঞান অর্জনেরও তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'এই জ্ঞান ছাড়া কোনো দেশের পক্ষে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা সম্ভব নয়। এক সময়ে কেউ কম্পিউটার ব্যবহার করত না। ফোন সব এনালগ ছিল, ডিজিটাল ফোন ব্যবহার করত না। আমার সব টেলিফোন সিস্টেমকে ডিজিটালাইজ করি। কম্পিউটার শিক্ষার জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দুইটা, তিনটা কম্পিউটার দিয়ে যাত্রা শুরু হয়। ছেলেমেয়েরা যাতে শিক্ষা নিতে পারে তার ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। তাছাড়া আইন পাস করে ১২টা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ কাজ শুরু করি।'

সরকার গবেষণায় জোর দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, '৭৫-পরবর্তীতে যারা ক্ষমতায় ছিল তারা গবেষণায় কোনো বরাদ্দ দেয়নি। আমাদের প্রথম বাজেট অল্প ছিল। সেখান থেকেও গবেষণার জন্য টাকা দিয়ে দিই। পরবর্তীতে যখন বাজেট দেয় তখন ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিলাম। সেটা ছিল কম্পিউটার শিক্ষা এবং গবেষণার। আমাদের শুধু একটা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। আমি আরও কয়েকটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করে দেই। সেই সাথে ১৬টি বেসরকারির বিশ্ববিদ্যালয়, নভো থিয়েটার প্রতিষ্ঠা, সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট, বায়ু টেকনোলজি ইনস্টিটিউট আমরা করেছি।'

বিএনপির সমালোচনা করে সরকারপ্রধান বলেন, 'জাতীয় শিক্ষা নীতি যেটা আমরা করে গিয়েছিলাম, ২০০১ সালে বিএনপি সেটা বাতিল করে দেয়। ২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করি তখন আমাদের সুযোগ আসে আরও কাজ করার, শিক্ষা ও গবেষণা কাজে আমরা আরও বরাদ্দ বৃদ্ধি করি।'

২০১০ সালে আওয়ামী সরকার যখন বিনা মূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছিল, সেই অনেকের কাছে 'অসম্ভব' মনে হয়েছিল বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ''আমরা সে 'অসম্ভব' কাজকে সম্ভব করেছি। ২০১০ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ৪শত ৬৪ লাখ ২৯ হাজার ৮৮৩ কোটি পাঠ্যপুস্তক আমরা বিনা মূল্যে বিতরণ করেছি। ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত ৩০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ৫৪টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। এর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হলো- কৃষি, ভেটেরিনারি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, চিকিৎসা, ডিজিটাল, ইসলামি আরবি, এভিয়েশন, অ্যারো স্পেইস, বেসরকারি খাতে ফ্যাশন ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিটি উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করে দিচ্ছি। কারিগরি শিক্ষা আমাদের কম ছিল সেটা আমরা বাড়িয়েছি। বাজেটে শিক্ষা খাতেই সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়।''

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক উপদেষ্টা কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী শামসুন্নাহার চাঁপা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে