উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ হারে পদোন্নতির সম্ভাব্য সুপারিশ 'অযৌক্তিক ও ষড়যন্ত্রমূলক' আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তারা। উপসচিবের শতভাগ পদে প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
বুধবার রাজধানীর ইস্কাটনের বিয়াম ফাউন্ডেশন অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় এ দাবি তুলে ধরেন কর্মকর্তারা। সভায় বিদু্যৎ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব সোহেল রানা বলেন, 'বৈষম্যের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থেকে আমরা এখানে এসেছি। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন উপসচিব পদে ৫০-৫০ বণ্টনের কথা বলা হচ্ছে তা অযৌক্তিক, প্রহসনমূলক ও ষড়যন্ত্রমূলক। প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তারা মাঠে পলিসি বাস্তবায়ন করে সচিবালয়ে পলিসি তৈরিতে সহায়তা করেন।'
এ সময় ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার উদাহরণ তুলে ধরে সোহেল রানা বলেন, '১৯৯৮ সালে ২৫% উপসচিব পদে অন্যায্যভাবে অন্যান্য ক্যাডারদের পদোন্নতির সুযোগ দেওয়া হয়। সেটি বাড়ানোর পাঁয়তারা করা হচ্ছে।'
'জনপ্রশাসন সংস্কারকে ভিন্ন পথে পরিচালিত করে দেশকে অস্থিতিশীল করা ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে' শিরোনামে এই প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে বিসিএস (প্রশাসন) অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বাসা) ও বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ সমবায় সমিতি লিমিটেড। ওই সভায় ১৯৭৩ সাল থেকে ৪১তম বিসিএস পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাচে নিয়োগ পাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা অংশ নেন।
গত ১৭ ডিসেম্বর এক সভায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী 'পরীক্ষার মাধ্যমে' জনপ্রশাসনে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া এবং এ পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের কোটা ৭৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫০ শতাংশ করার সুপারিশ তুলে ধরেন।
বর্তমান বিধিমালা অনুযায়ী, উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের ৭৫ শতাংশ এবং অন্য সব ক্যাডারের ২৫ শতাংশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়।
সংস্কার কমিশনের ওই সুপারিশের প্রতিবাদে সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখান কর্মকর্তারা। তবে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা পড়লে 'সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান' ঘটবে বলে আশা প্রকাশ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
বিদু্যৎ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব রানা বলেন, '২০১০ সালে সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে বলেছেন, উপসচিব প্রশাসন ক্যাডারের সহজাত পদ। একমাত্র প্রশাসন ক্যাডার আইন ও প্রশাসন নামের একটি কোর্স করে। অন্য কোনো ক্যাডার তা করেনি। ১৮৫৭ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রশাসন ক্যাডার সচিবালয় চালিয়েছে। আমাদের ট্রেনিং, মেধা সব বলে উপসচিব প্রশাসন ক্যাডার পদ, তাহলে কেন শতভাগ উপসচিব পদে শতভাগ পদোন্নতি পাবে না প্রশাসন।'
বৈষ্যমের অভিযোগ তুলে ২৯ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা সাইফুল কবির বলেন, 'উপসচিব পদে পদোন্নতিতে এখনই ২৫ শতাংশ কোটা আরোপিত আছে, বৈষম্যটা আরও বড় করার চেষ্টা চলছে। আমরা চাই সেই ২৫ শতাংশও যেন না থাকে। একই প্রশ্নে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে কেউ প্রশাসন ক্যাডারে এসেছে কেউ অন্য ক্যাডারে গিয়েছে। আমি পিএসসিকে চয়েস প্রকাশ করার দাবি জানাই, তাহলে দেখা যাবে কে কোন পদের চয়েস দিয়ে কোন পদে নিয়োগ পেয়েছে।'
ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও ৩০ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা মো. বদরুদ্দোজা শুভ বলেন, 'উপসচিব পদে আসতে চায় শিক্ষা ক্যাডার। তাদের কি প্রশাসনিক প্রশিক্ষণ আছে? তারা ১০-১৫টা কলেজে পড়িয়েছেন। উপসচিব পদে পদোন্নতি পেলে তাদের নতুন করে সব প্রশিক্ষণ নিতে হবে। ব্যাপারটা এমন যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি বিভাগে ভর্তি হয়ে দুই বছর পর বলছি আমি আইন বিভাগে পড়তে চাই।'
সভার সূচনা বক্তব্যে বাসার সভাপতি ও সংসদ সচিবালয়ের সচিব মো. আনোয়ার উলস্ন্যাহ্ বলেন, সংস্কার কমিটি তাদেরকে বৃহস্পতিবার ডেকেছে। আর আগে আপনাদের মতামত শুনতেই এই সভার আয়োজন করা হয়েছে। আপনাদের মতামত ও সুপারিশ কমিশনের কাছে তুলে ধরব।
এতে সভাপতিত্ব করছেন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ড. মো. আনোয়ার উলস্ন্যাহ্। উপস্থিত ছিলেন- বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি এ বি এম আব্দুস সাত্তার ও বাসা মহাসচিব মাহবুবুর রহমান।
আলোচক হিসেবে ছিলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচি ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর নিয়াজ আহমেদ গান, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. এ. বি. এম. ওবায়দুল ইসলাম, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী, বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, ডিইউজে এর প্রেসিডেন্ট শহীদুল ইসলাম, ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ এবং দৈনিক যুগান্তর উপ সম্পাদক বি এম জাহাঙ্গীর।
আরও ছিলেন- বিসিএস ১৯৭৩ ব্যাচের মাহমুদ হোসেন আলমগীর, বিয়াম ফাউন্ডেশন পরিচালনা পর্ষদের উপদেষ্টা ও ১৯৭৯ ব্যাচের এস এম জহরুল ইসলাম, ১৯৮১ ব্যাচের হেলালুজ্জামান, বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি ও ১৯৮২ ব্যাচের এ. বি. এম. আবদুস সাত্তার, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সভাপতি বিজন কান্তি সরকার, প্রত্যাশা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মো. আব্দুল বারী, অফিসার্স ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ এম এ খালেক, ১৯৮৪ ব্যাচের নিয়ামত উলস্নাহ ও শেখ আলাউদ্দিন, বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সম্পাদক মোহাম্মদ মসিউর রহমান, সদস্য মো. তৌহিদুর রহমান, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ, ১৯৮৬ ব্যাচের মো. জাকির হোসেন কামাল, মঞ্জুর মোর্শেদ ও শামীম আল মামুন।