বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
নতুন বছরেও সংকটের শঙ্কা

দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে ভাটা

চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক জুলাই-সেপ্টেম্বরে বিনিয়োগ কমেছে ১৫ শতাংশ
সাখাওয়াত হোসেন
  ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে ভাটা
দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে ভাটা

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পাঁচ মাস পার হতে চললেও দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাভাবিক পরিবেশ এখনও ফেরেনি। বরং সংস্কার ও নির্বাচনসহ নানা ইসু্যতে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতায় এ খাতে নানা ধরণের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এতে ব্যবসায়ী-শিল্পপতি ও উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়েছে। অর্থনৈতিক মন্দায় কেউ কেউ পুরানো ব্যবসা-বাণিজ্যও গুটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।

এদিকে বিদেশি বিনিয়োগও গত কয়েক মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে কমছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক জুলাই-সেপ্টেম্বরে বিনিয়োগ কমেছে ১৫ শতাংশ। অক্টোবর-ডিসেম্বরেও নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না এলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। এ জন্য ব্যবসার পরিবেশ তৈরি ও আস্থা অর্জন করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন তারা।

1

ব্যবসায়ী ও বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষমতার পটপরিবর্তনে অনেক ব্যবসায়ী আত্মগোপনে চলে গেছেন। কিছু ব্যবসায়ী কারাগারে। নানা ধরনের মামলা জালে জড়িয়ে আওয়ামী ঘরনার বিপুল সংখ্যক ব্যবসায়ী নিজ ব্যবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের ধারকাছে ঘেঁষতে পারছেন না। দেখভালের অভাবে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে লোকশানের চাপে বাড়ছে। শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়েছে। তারা কবে আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে এসে ব্যবসার হাল ধরতে পারবেন তা এখন অনিশ্চিত। ফলে তারা নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নতুন করে কোনো বিনিয়োগ করছেন না। বরং সুযোগ পেলে আগের বিনিয়োগকৃত মূলধন তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ পরিস্থিতিতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েও অন্তর্বর্তী সরকার অনিশ্চয়তার ক্ষেত্রগুলো দূর করে ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরি করতে পারছে না। ফলে বিনিয়োগ অনিশ্চয়তা দীর্ঘমেয়াদী হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

এদিকে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আস্থাশীল হতে পারছে না। এ দেশে বিনিয়োগ করে প্রাপ্ত লভ্যাংশ বিদেশে নিয়ে যেতে পারবেন কিনা তা নিয়েও আস্থার সংকট রয়েছে। তাই বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে হলে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানো জরুরি। অথচ নতুন বছরেও এ সংকট কাটবে এমন সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কেননা, অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, ২০২৫ সালের শেষভাগে কিংবা ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হতে পারে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এ সময় দেশি বিদেশি বিনিয়োগে ভাটার টান থাকবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্বাচনের বছর স্বাভাবিকভাবে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে ধীরগতি দেখা যায়। এতে ব্যক্তি খাতের ভোগ ব্যয় ও বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ শ্লথ হয়ে আসে। এর মূল কারণ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। এছাড়া উন্নয়ন প্রকল্পের গতিও কমে যায়। ফলে সরকারি বিনিয়োগে গতি কমে আসে। এগুলোর প্রভাবে আমদানি প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাওয়া স্বাভাবিক।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বিনিয়োগকারী সুসময়ের অপেক্ষায় থাকে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে তারা নতুন কোনো বিনিয়োগ, কারখানা কিংবা প্রোডাক্ট লাইন খোলার ভরসা পান না। এখন ব্যবসায়ীরা ভাবছেন, আকাশ এত বেশি মেঘাচ্ছন্ন, পাল উড়াবেন কীভাবে। ফলে তারা নোঙর ফেলে বসে থাকছেন। উত্তরণের উপায় হিসেবে তিনি বলেন, দিন শেষে সব দায় সরকারের ওপরই আসে। তাই ভালো পরিকল্পনা নিতে হবে। হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে অবস্থা উত্তপ্ত করা যাবে না। এখন প্রধান কাজ হবে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনা।

রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশের ব্যবসা-বিনিয়োগের স্থবিরতা তৈরির শঙ্কা করেছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশে বিনিয়োগে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি করে অনেকে এখন পলাতক। দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও ব্যাংক ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। একদিকে বেসরকারি খাতেও নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না, অন্যদিকে সরকারের উন্নয়ন ব্যয়ও যদি না বাড়ে; তা হলে তো একটা অর্থনৈতিক মন্দা অবস্থা তৈরি হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমেই ধাক্কা খায় দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরী পোশাক। দুর্বৃত্তের হামলা ও শ্রমিক অসন্তোষে অনেকটা স্থবির হয়ে যায় উৎপাদন। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও তাতে আশানুরুপ সুফল মেলেনি। বরং তলে তলে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়েছে। এর উপর গ্যাস ও বিদু্যৎ সংকট 'মরার উপর খাঁড়ার ঘা' হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সরকারের নীতি নির্ধারকরাও বিনিয়োগে স্থবিরতার আশঙ্কা করছেন।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে নিট এফডিআই বা সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ৩০ কোটি ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৩৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার। অর্থাৎ তিন মাসে এফডিআই কমেছে ১৫ শতাংশ।

এ নিয়ে ফরেন ইনভেস্টর চেম্বারের সভাপতি জাবেদ আখতার বলেন, এ পরিস্থিতিতে শিগগিরই নতুন বিনিয়োগ না আসার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে তা এখনও কেউ কোনো অনুমান করতে পারছে না। তাই নতুন করে কেউ এ সময়ে ঝুঁকি নিতে চাইবেন না-সেটাই স্বাভাবিক।

এদিকে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে গড়ে তোলা ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চলেও কাঙ্খিত বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সেবার পরিধি বাড়ানো ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিশ্চিত করা না গেলে কাঙ্খিত বিনিয়োগ আসবে না।

বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার তথ্যমতে, দেশের এফডিআই এখনো জিডিপির ১ শতাংশের কম। উন্নত দেশের লক্ষ্য পূরণে যা আরও বাড়াতে হবে। এজন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি নীতি সহায়তা বাড়ানোর তাগিদ গবেষকদের।

তারা বলেছেন, রাজনীতি ও অর্থনীতি একই সূত্রে গাঁথা হওয়ায় দুটিই সমানতালে চলে। তাই রাজনীতির আকাশে মেঘ থাকলে তা অর্থনীতিকে মেঘাচ্ছন্ন করে। তাই রাজনীতিতে অস্থিরতা চলতে থাকলে বিনিয়োগ আসবে না। বিনিয়োগ না বাড়লে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও ত্বরান্বিত হবে না- সেটাই স্বাভাবিক।

অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি নিঃসন্দেহে বড় ধরনের সমস্যার মধ্যে রয়েছে। সরকারের আয়-ব্যয় ও ঘাটতি, বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য, সব হিসাবেই সমস্যা রয়েছে। সময়মতো মোকাবিলা করা না গেলে অর্থনীতিতে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে বড় ধরনের চাপ আগামীতেও থাকতে পারে। এর ধারাবাহিকতায় বাড়তে পারে টাকার অবমূল্যায়ন, যা সামগ্রিক অর্থনীতিকে ঠেলে দেবে আরও বড় অনিশ্চয়তার মুখে।

সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, মূল্যস্ফীতি বাড়ায় চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৫ এর ঘরের নিচে আটকে থাকতে পারে, যা সরকারি প্রাক্কলনের চেয়ে অনেক কম।

প্রসঙ্গত, রাষ্ট্র পরিচালনায় সাম্প্রতিক পরিবর্তনের পর আর্থিক সংকট, ব্যবসায়িক স্থবিরতা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর আগে এ হার ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ ধরা হয়েছিল।

এদিকে অক্টোবর থেকে মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কে অবস্থান করছে। আশা করা হয়েছিল, বছরের শেষ দু'মাসে এটি কমে এক অংকের ঘরে নামবে। তবে বাস্তবে তা না হলে মূল্যস্ফীতির ধারা আরও উর্ধ্বমুখী হয়েছে। গত নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি প্রায় ১৪ শতাংশে এসে ঠেকে। ডিসেম্বরেও এ ধারার তেমন পরিবর্তন হয়নি। এ পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমার শঙ্কা রয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিনিয়োগ কমবে এবং অর্থনীতির সংকট বাড়বে এটা স্বাভাবিক। আর নির্বাচনের বছর রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাবে- এটা ধরেই নেওয়া যায়।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতা বলেন, স্বাধীনত্তোর বাংলাদেশে প্রায় প্রতিবারই সংসদ নির্বাচনের আগে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা গেছে। আর এতে বেসরকারি খাত সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাজনৈতিক সহিংসতায় অনেক সময় দীর্ঘদিন কারখানা বন্ধ রাখতে হয়েছে। সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে না পারায় বিদেশি ক্রেতার অর্ডার বাতিল হয়েছে। এ শঙ্কা থেকে অনেক সময় ক্রেতারা আগেভাগেই তাদেও অর্ডার কমিয়ে দিয়েছে। এতে রপ্তানি আয় কমেছে। এসব তিক্ত অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে উদ্যোগতারা নির্বাচনী বছরে বিনিয়োগে ঝুঁকি নিতে চান না। এবারও একই ধরণের সংকট সৃষ্টি হবে তারা তা অনেকটা ধরেই নিয়েছেন। তাই নতুন বছরে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে আরও মন্দাভাবে দেখা দেওয়ার যৌক্তিক শঙ্কা রয়েছে।

অর্থনৈতিক খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের অধীনে রাষ্ট্র মেরামতের উদ্দেশ্যে যাবতীয় সংস্কারের বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার ফলে অনেক অজানা বা লুকায়িত তথ্য-উপাত্ত-পরিসংখ্যান জনসম্মুখে উন্মোচিত হচ্ছে। যতটুকু ধারণা করা হয়েছিল, তার চেয়ে অনেকগুণ বেশি দুর্নীতি-লুটপাটের চিত্র উঠে এসেছে। সেতু, জ্বালানি-অবকাঠামো ও অন্যান্য খাতে মেগা প্রকল্প গ্রহণের পেছনে ভয়াবহ দুর্নীতির তথ্য সবাই অবগত হচ্ছে। বিভিন্ন এক্সপ্রেসওয়ে-টানেল নির্মাণ, বন্দর উন্নয়ন ইত্যাদি লুটপাটের উদ্দেশ্যেই করা হয়েছিল বলে প্রতিবেদনে উলেস্নখ করা হয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্রমাবনতি লক্ষণীয়। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের নামে যা কিছু হয়েছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা অন্তঃসারশূন্য বলে প্রতীয়মান।

এদিকে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ সময় ধরে বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ছিল হতাশাব্যঞ্জক। বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জিডিপির বিপরীতে বাংলাদেশ অনেক রাষ্ট্র থেকে পিছিয়ে ছিল। ২০২৩ সালে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল ৩ বিলিয়ন ডলার। যদিও বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জিডিপির বিপরীতে বাংলাদেশে এ বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ দেড় শতাংশেরও কম। অথচ বিগত সময়ে চরম অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক সংকটে দেউলিয়া হওয়া শ্রীলংকায় বিদেশি বিনিয়োগ জিডিপির ২০ শতাংশেরও বেশি। বিনিয়োগকারীদের আয় ফেরত আনার ভোগান্তি, অস্থিতিশীল বৈদেশিক মুদ্রা পরিস্থিতি এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে আগের বছরের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে নেট বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন মতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে নেট বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে ১ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার; ২০২২-২০২৩ অর্থবছর শেষে যা ছিল ১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ১৪২ মিলিয়ন ডলার।

এ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি বিদেশি বিনিয়োগ আসা পোশাক ও বস্ত্র খাতেও গত অর্থবছরে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ১৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। ওই সময়ে খাতটিতে বৈদেশিক বিনিয়োগ এসেছে ৪৪ কোটি ডলার। এরপর ব্যাংক খাতে ২৩ কোটি, রাসায়নিক ও ওষুধ শিল্পে ১২ কোটি, গ্যাস ও পেট্রোলিয়ামে ১২ কোটি, টেলিকমিউনিকেশনে ১০ কোটি, কৃষি ও মৎস্য আহরণে ৬ কোটি এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে ৫ কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। তন্মধ্যে রাসায়নিক ও ওষুধ, কৃষি ও মৎস্য আহরণ ছাড়া প্রায় সব খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আগের অর্থবছরের তুলনায় কমেছে। তাছাড়া সামগ্রিকভাবে এফডিআই কমে যাওয়ায় কমেছে নতুন বিনিয়োগ (ইকু্যইটি) ও পুনর্বিনিয়োগও। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ১৪৬ কোটি ডলারের বিনিয়োগের মধ্যে ৪৫ শতাংশ বা ৬৭ কোটি ডলার হচ্ছে নতুন বিনিয়োগ। নতুন বিনিয়োগ আসার হারও গত দুই অর্থবছর ধরেই কমছে। পক্ষান্তরে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭৯ কোটি ডলারের পুনর্বিনিয়োগের বিপরীতে গত অর্থবছরে পুনর্বিনিয়োগ হয়েছে ৬১ কোটি ডলার।

এদিকে শিল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, অন্তর্বতী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রায় ৫ মাস অতিবাহিত হতে চললেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আশানুরুপ উন্নতি হয়নি। এ সুযোগে শিল্পাঞ্চলগুলোয়, বিশেষ করে গার্মেন্ট শিল্পে অরাজকতা আস্থার চরম সংকট তৈরি করেছে। বিগত সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকেই পোশাক কারখানা অধু্যষিত এলাকায় শ্রমিক অসন্তোষের কারণে অসংখ্য কারখানার উৎপাদন ও বিপণন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। বহু কারখানা ভাঙচুরের পাশাপাশি দেওয়া হয় আগুন। ফলে কঠিন হুমকির মুখোমুখি দেশের পোশাক খাত। পোশাক খাতসংশ্লিষ্টদের অভিমত, ইতোমধ্যেই এ শিল্পে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। শিল্পাঞ্চলে এ শ্রমিক অসন্তোষের অবসান না ঘটলে দেশের রপ্তানি ও বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। শ্রমিক অসন্তোষের পাশাপাশি তীব্র জ্বালানি সংকটে নিপতিত অধিকাংশ কারখানা। কারখানা মালিকদের দাবি, বেশি দামে গ্যাসের মূল্য পরিশোধ করেও তারা চাহিদার মাত্র ৩০ শতাংশ গ্যাস পাচ্ছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনেক বিনিয়োগ পাইপলাইনে থাকলেও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অনেকেই বাংলাদেশে এ মুহূর্তে বিনিয়োগবিমুখ হতে পারেন বলে সতর্ক করেছেন অনেক বিশ্লেষক। ###############

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে