বাংলাদেশে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার সাবেক কর্তৃত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলের গুমের ঘটনা তদন্তে একটি কমিশন গঠন করেছে। পাশাপাশি তার আমলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংস্কার ও জবাবদিহির প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছে। কিন্তু নির্যাতন বন্ধে বাংলাদেশে স্থায়ী সংস্কার প্রয়োজন। ব্যাপক প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও আন্তর্জাতিক সমর্থন না পেলে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর অগ্রগতি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডবিস্নউ) ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট ২০২৫-এ এসব কথা বলা হয়েছে। এইচআরডবিস্নউর এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেছেন, 'বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য উলেস্নখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু ব্যাপক প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও আন্তর্জাতিক সমর্থন না পেলে এসব পদক্ষেপের অগ্রগতি হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে পারে।'
মীনাক্ষী বলেন, 'অন্তর্বর্তী সরকারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সুরক্ষা দেওয়া, গুম নিয়ে বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত ও ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর বেসামরিক তদারকির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।'
এইচআরডবিস্নউর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী অধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত রেখেছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অধিকারকর্মীরা। এসব মানবাধিকার
লঙ্ঘনের ঘটনার মধ্যে বিরোধী সমর্থক ও সাংবাদিকদের নির্বিচারে গ্রেপ্তারও রয়েছে। তাদের যথাযথ প্রক্রিয়া ও আইনি পরামর্শের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
অন্তর্বর্তী সরকার জাতিসংঘের গুমবিষয়ক কনভেনশনে সম্মতি দিলেও নিরাপত্তা বাহিনী অবৈধভাবে আটক ব্যক্তিদের মুক্তি দিতে বা তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, সে সম্পর্কে তাদের পরিবারকে জবাব দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরে সশস্ত্রগোষ্ঠীর হাতে সহিংসতার ঝুঁঁকিতে রয়েছেন। অনিবন্ধিত শরণার্থীরা ক্ষুধার ঝুঁঁকিতে রয়েছেন। তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হতে পারে, এই ভয়ে তারা স্বাস্থ্যসেবা নেন না।
অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারের কাজ জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার অফিসের সহায়তায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদন্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে করা উচিত বলে মনে করে এইচআরডবিস্নউ। একই সঙ্গে তারা বিতর্কিতর্ যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্(যাব) বিলুপ্ত করা, স্বাধীন তদারকি ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা বাহিনীর সংস্কার করা এবং গুমের শিকার ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের জন্য ন্যায়বিচার অনুসরণ করা উচিত।
এইচআরডবিস্নউর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদের অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিবন্ধনের জন্য জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারের সঙ্গে কাজ করতে হবে, যাতে তারা সুরক্ষা, চিকিৎসাসেবা ও খাদ্য রেশন পায়।
এইচআরডবিস্নউর ৫৪৬ পৃষ্ঠার ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট ২০২৫-এ ১০০টির বেশি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়েছে। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক তিরানা হাসান প্রতিবেদনটির সূচনা প্রবন্ধে লিখেছেন, গত বছর বিশ্বের অধিকাংশ দেশের সরকার রাজনৈতিক বিরোধী, কর্মী ও সাংবাদিকদের অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার ও কারারুদ্ধ করেছে। সশস্ত্রগোষ্ঠী ও সরকারি বাহিনী বেআইনিভাবে বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছে। অনেককে তাদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত করেছে এবং মানবিক সহায়তা পাওয়ার পথ বন্ধ করে দিয়েছে।
সূচনা প্রবন্ধে আরও বলা হয়, ২০২৪ সালে ৭০টির বেশি দেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব দেশের বেশির ভাগেই কর্তৃত্ববাদী নেতারা তাদের বৈষম্যমূলক বাগাড়ম্বরপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে ও নীতির কথা বলে নিজেদের অবস্থানকে সংহত করেছেন।