ভারতীয় বিদু্যৎ উৎপাদন কোম্পানি আদানি পাওয়ার তাদের ঝাড়খন্ড কেন্দ্রের সক্ষমতার পুরো ১৬শ' মেগাওয়াট বিদু্যৎ বাংলাদেশে সরবরাহে সম্মত হয়েছে বলে খবর দিয়েছে রয়টার্স। পিডিবির অনুরোধে তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ভারতীয় ওই কোম্পানি তাদের দেশে যে কর ছাড় পেয়েছে, সেই সুবিধা এবং মূল্যছাড় প্রশ্নে ঢাকার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে।
শীত মৌসুমে চাহিদা কম থাকা ও বকেয়া পরিশোধ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় সাড়ে তিন মাসের বেশি সময় ধরে চুক্তির অর্ধেক পরিমাণ বিদু্যৎ সরবরাহ করছিল আদানি পাওয়ার। ধনকুবের গৌতম আদানির এই কোম্পানি ভারতের পূর্বাঞ্চলে ঝাড়খন্ডের কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র থেকে বিদু্যৎ সরবরাহের জন্য ২০১৭ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে।
১৬শ' মেগাওয়াট ক্ষমতার ওই কেন্দ্রের দুটি ইউনিট থেকে বাংলাদেশে বিদু্যৎ সরবরাহ করছিল আদানি। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮৫ কোটি ডলারের বকেয়া আদায়ে গত ৩১ অক্টোবর বিদু্যৎ সরবরাহ অর্ধেক করে দেয় এই ভারতীয় কোম্পানি।
রয়টার্স লিখেছে, ১ নভেম্বর একটি ইউনিট বন্ধ করে দেওয়া হলে কেন্দ্রের সক্ষমতার ৪২ শতাংশ বিদু্যৎ উৎপাদন হচ্ছিল। পরে বাংলাদেশও আদানিকে অর্ধেক বিদু্যৎই সরবরাহ করতে বলে। তবে গ্রীষ্ম শুরুর আগে ঝাড়খন্ড কেন্দ্রের পুরো ১৬শ' মেগাওয়াট বিদু্যৎ সরবরাহে সম্প্রতি আদানি পাওয়ারকে অনুরোধ করে বাংলাদেশ বিদু্যৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)।
সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে আগামী সপ্তাহ নাগাদ সক্ষমতার পুরো বিদু্যৎ দিতে আদানি রাজি হয়েছে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছে দুটি সূত্র। বিষয়টি সরাসরি জানা থাকলেও সংবাদমাধ্যমে কথা বলার জন্য অনুমতি না থাকায় তারা নাম প্রকাশ করতে চায়নি।
দিলিস্ন ২০১৯ সালে এই বিদু্যৎকেন্দ্রকে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের অংশ ঘোষণা করে। সেই সুবাদে আয়কর এবং অন্যান্য শুল্কের ক্ষেত্রে ছাড় পাচ্ছে আদানি পাওয়ার। রয়টার্স লিখেছে, আদানি যে কর সুবিধা ভারত সরকারের কাছ থেকে পেয়েছে, তা যেন বাংলাদেশের বিদু্যতের দামের ক্ষেত্রে সমন্বয় করা হয়- পিডিবির এই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে ভারতীয় বিদু্যৎ কোম্পানিটি। তাছাড়া, বিদু্যতের মূল্যছাড় অব্যাহত রাখতে পিডিবির অনুরোধও প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
আদানি পাওয়ার গত বছরের মে মাস পর্যন্ত ওই মূল্যছাড় সুবিধা বাংলাদেশকে দিয়েছিল, যাতে বাংলাদেশের প্রায় ১৩ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হয়। ওই সূত্র দুটির বরাতে রয়টার্স লিখেছে, পিডিবির আরও বেশ কয়েকটি দাবি পূরণে রাজি হয়নি আদানি পাওয়ার। মঙ্গলবার উভয়পক্ষের ভার্চুয়াল বৈঠক হয়েছে এবং আরও আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আদানি পাওয়ারের কথা উলেস্নখ করে একটি সূত্র বলেছেন, 'কোনো কিছুতেই ছাড় দিতে চায় না, এমনকি এক মিলিয়ন ডলারও না।
তাদের ভাষ্য, 'আমরা কোনো ছাড় পাইনি। আমরা পারস্পরিক সমঝোতা চাই, তারা বিদু্যৎ ক্রয় চুক্তির কথা টানছে।
এ মতানৈক্যের বিষয়ে রয়টার্স জানতে চাইলে পিডিবি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম তাতে সাড়া দেননি।
তিনি গত সপ্তাহের শুরুতে রয়টার্সকে বলেছিলেন, এখন আদানির সঙ্গে বড় কোনো ঝামেলা নেই। তারা সক্ষমতার পুরো বিদু্যৎ সরবরাহ করবে। এখন প্রতি মাসে সাড়ে আট কোটি ডলার পরিশোধ করা হচ্ছে।
আদানি পাওয়ারের একজন মুখপাত্র তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেননি।
রয়টার্সের মঙ্গলবারের প্রতিবেদনের পর এক বিবৃতিতে কোম্পানিটি বলেছে, 'ক্রেতার চাহিদা মোতাবেক কেন্দ্র থেকে বিদু্যৎ সরবরাহ করা হয়, ক্রেতার চাহিদা পরিবর্তন হতে থাকে।'
এদিকে, গত ডিসেম্বরে আদানির একটি সূত্র দাবি করেছিল, বাংলাদেশের কাছে তাদের পাওনা ৯০ কোটি ডলার। অন্যদিকে, পিডিবি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম তখন বলেছিলেন, তাদের বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৬৫ কোটি ডলার। বিদু্যতের শুল্ক কীভাবে গণনা করা হচ্ছে তা নিয়েই দামের বিরোধ তৈরি হয়। ভারত সরকারের কাছ থেকে পাওয়া কর ছাড় সুবিধা বাংলাদেশের সঙ্গে সমন্বয় করতে এবং গত বছরের মে পর্যন্ত পাওয়া মূল্যছাড় ফের চালু করতে এর আগে চিঠি দিয়েছিল পিডিবি।