মুঘল স্থাপত্যশিল্পের অনন্য নিদর্শন নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা শাহী জামে মসজিদ। মুঘল সম্রাট মুহাম্মদ শাহের রাজত্বকালে ১৭৪১-৪২ খ্রিষ্টাব্দে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। জেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তরে সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা গ্রামে বেগমগঞ্জ-সোনাইমুড়ি সড়কের পশ্চিম পাশে মসজিদটির অবস্থান।
ভারতবর্ষে সোয়া তিনশ বছরের বেশি সময় রাজত্ব করেন দিলিস্নর মোঘল সম্রাটরা। এ দীর্ঘ সময়ে মোঘল সম্রাট ও তাদের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য ইমারত ও মসজিদ নির্মাণ করেন। যা আজও মোগল স্থাপত্য শিল্পের নিদর্শন বহন করছে। দিলিস্নর বিখ্যাত জামে মসজিদের অনুকরণে মোঘলদের অনুগত জমিদার আমান উলস্নাহ খান ১৭৪১ সালে বজরা শাহী মসজিদটি নির্মাণ করেন। যা আজও দেশ-বিদেশের পর্যটকদের নজর কাড়ে।
জমিদার আমান উল্যাহ্ তার বাড়ির সামনে ৩০ একর জমির ওপর উঁচু পাড়ের বিশাল দিঘী খনন করেন। দিঘীর পশ্চিম পাড়ে মনোরম পরিবেশে, আকর্ষণীয় তোরণের প্রায় ১১৬ ফুট দীর্ঘ ৭৪ ফুট প্রস্থ এবং প্রায় ২০ ফুট উঁচু ৩ গম্বুজবিশিষ্ট এই ঐতিহাসিক মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। মসজিদকে মজবুতভাবে তৈরি করতে মাটির প্রায় ২০ ফুট নিচে ভিত তৈরি করা হয়। আর সুদৃশ্য মার্বেল পাথরে বানানো হয় গম্বুজ। মসজিদে প্রবেশের জন্য রয়েছে তিনটি ধনুকাকৃতির দরজা। প্রবেশ পথের ওপর রয়েছে কয়েকটি গম্বুজ। কেবলা দেওয়ালে রয়েছে তিনটি কারুকার্যময় মেহরাব।
১৯১১ থেকে ১৯২৮ সালের মাঝামাঝি সময় বজরার জমিদার খান বাহাদুর আলী আহমদ ও খান বাহাদুর মুজির উদ্দিন আহমদ মসজিদটি মেরামত এবং সিরামিকের মোজাইক দিয়ে সজ্জিত করেন।
মোঘল সম্রাট নাসিরুদ্দিন মোহাম্মদ শাহের বিশেষ অনুরোধে পবিত্র মক্কার বাসিন্দা অন্যতম আলেম হযরত মাওলানা শাহ আবু সিদ্দিকী এই মসজিদের প্রথম ইমাম নিযুক্ত হন। তার বংশধররা আজও এ মসজিদের ইমামের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বর্তমানে তার বংশের সপ্তম পুরুষ ইমাম হাসান সিদ্দিকী ঐতিহাসিক এ মসজিদে ইমামতি করছেন।
২৯ নভেম্বর ১৯৯৮ থেকে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বজরা শাহী মসজিদের ঐতিহ্য রক্ষা এবং দুর্লভ নিদর্শন সংরক্ষণের জন্য কাজ করছে। মসজিদটি দেখতে প্রতিদিনই দেশ বিদেশের অনেক দর্শনার্থী ভিড় জমান।