যে কেউ দেখলে নদী তা বিশ্বাস করতে চায় না। অনেকে হয়তো বলবে এটি বড় খাল-কিংবা ছোট খাল। আবার কোথাও সমতলও হয়েছে। তাই এখন কোথাও পানি আছে, আবার কোথাও শুকনা অবস্থায় রয়েছে। তবে মাঝে ব্রিজগুলো দেখলে বোঝা যায় এটা নদী। বর্ষাকালে এর রূপ হয় ভয়ংকর। কিন্তু নদীর এ অবস্থা হলেও ঘোড়াঘাটের এই 'মইলা' নদীর সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা রকম জনশ্রম্নতি বা ইতিহাস।
নদীটিতে পানি না থাকার কারণে হারিয়ে গেছে স্থানীয় জেলেদের জীবনযাত্রা, দেখা দিয়েছে দেশি মাছের অভাব। ভুলে গেছে এক সময় কিছু মানুষের জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম ছিল এই নদীটি।
জানা যায়, এ নদীর উৎপত্তিস্থল পাশের নবাবগঞ্জ আশুড়ার বিল। সেখান থেকে আঁকাবাঁকা পথে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে দাউদপুর হাটের উত্তর পাশ দিয়ে হেয়াতপুর, খোদাইপুর, মালদহ ও ঈশ্বরপুর মৌজার মাঝ দিয়ে চলে গেছে দারিয়া। তারপর আরও দক্ষিণে মোগরপাড়ার পাশ দিয়ে ঘোড়াঘাটের বুলাকীপুর ইউনিয়নে প্রবেশ করে। বলগাড়ীহাটের নিকট দিয়ে দক্ষিণ দিকে চলে গেছে। সাতপাড়া গড় স্পর্শ করে ঋষিঘাটের আগে বাকপাড়া লালমাটিতে বড় করতোয়া নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। তবে এটা মরা করতোয়া নামেও পরিচিত।
কথিত আছে এ নদী পথেই বেহুলা তার মৃত স্বামীকে উজানের দেবঘাটে (নবাবগঞ্জে) নিয়ে গিয়েছিলেন জীবন ফিরে পাওয়ার ইচ্ছায়। সিংড়া ইউনিয়নে এ নদীর তীরে (নদীর দক্ষিণ দিকে) সাতপাড়া মৌজায় একটি প্রাচীন দুর্গের চিহ্ন আছে। সুলতানী আমলে দুর্গটি বারপাইকের গড় নামে খ্যাত হয়। প্রাচীন এ নদীতে এখন সারা বছর পানি থাকে না। বর্ষাকালে নদীটির দু'কূল ভরে ওঠে। দু-এক মাস পরেই আবার পানি শুকিয়ে যায়। এ নদীর তীরে অনেক আগেই গড়ে ওঠা ঋষিঘাট তীর্থ ক্ষেত্র যা হিন্দু নর-নারীদের নিকট পবিত্র। এই তীর্থস্থানে প্রতি বছর বারুনী স্নান হয়। এ উপলক্ষে একদিনের মেলাও বসে। আশপাশের হিন্দু নর-নারী ছাড়াও অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকেরাও এ মেলায় আসে। স্নানঘাট ঘেঁষেই চারকোণী একচূড়াবিশিষ্ট প্রদক্ষিণ পথওয়ালা একটি মন্দির ও ২০০ গজ দক্ষিণ-পূর্ব দিকে আর একটি নির্মাণাধীন মন্দির রয়েছে।
সিংড়া ইউপি চেয়ারম্যান সাজ্জাত হোসেনসহ কয়েকজন জানান, মইলা নদীতে এখন পানি না থাকায় জেলেরা তাদের পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে। আবার কেউ অন্যত্র চলে গেছে। আবার নদীতে পানি না থাকায় হারিয়ে যাচ্ছে দেশি প্রজাতির অনেক মাছ। তবে বর্ষাকালে নদীর আকার বড় আকার ধারণ করে। এ কারণে নদীতে বড় একটি ব্রিজ নির্মাণ হচ্ছে।