শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অশান্ত হয়ে উঠছে মহম্মদপুর

আড়াই মাসে ৫টি হত্যাকান্ড
মহম্মদপুর (মাগুরা) প্রতিনিধি
  ১৯ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

কোনোভাবেই যেন স্বস্তি ও শান্তির সুবাতাস বইছে না। তুচ্ছ ঘটনা ও আধিপত্য বিস্তারকে ঘিরে আগ্রাসী ও হিংস্র হয়ে উঠছেন মানুষ। রাজনৈতিক ও সামাজিক বিরোধের কারণে গ্রাম-গ্রামান্তরে তাপ-উত্তাপ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে। অশান্ত ও রক্তাক্ত জনপদে পরিণত হচ্ছে মাগুরার মহম্মদপুর।

গত আড়াই মাসে উপজেলার বালিদিয়া, রাজাপুর ও পলাশবাড়ীয়া ইউনিয়নে পাঁচটি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। গত ২ জানুয়ারি থেকে গত ১৬ মার্চ পর্যন্ত; এই আড়াই মাসে এসব খুনের ঘটনা ঘটে। গড় হিসেব ও পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি দুই সপ্তাহে একটি করে খুনের ঘটনা ঘটছে। এ অবস্থায় উপজেলায় ক্রমশ: আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। এসব খুনের ঘটনায় সচেতন মহলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও বাড়ছে।

তথ্যমতে, গত ২ জানুয়ারি রাত ১১টার দিকে উপজেলার বালিদিয়া ইউনিয়নের বালিদিয়া গ্রামে প্রতিপক্ষের লোকজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে মোশারফ হোসেন মৃধা (৫৫) নামের এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করে। তিনি ওই গ্রামের নুরোল ইসলাম মৃধার ছেলে। বালিদিয়া গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা ইউনুস শিকদার এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মফিজুর রহমান মিনার সমর্থকদের মধ্যে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধের জেরে এ খুনের ঘটনা ঘটে।

গত ১২ জানুয়ারি উপজেলার পলাশবাড়ীয়া ইউনিয়নের যশোবন্তপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম মোল্যা (৬০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। তিনি ওই গ্রামের মাজেদ মোল্যার ছেলে। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর জমি সংক্রান্ত বিরোধে প্রতিপক্ষরা তার উপর হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করে। টানা ১৩ দিন মৃতু্যর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে গত ১২ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

গত ২৯ জানুয়ারি উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের রাজপাট গ্রামে পাওনাদারসহ তার লোকজনের হামলায় রতন বসু (৫২) নামের এক ফল ব্যবসায়ী নিহত হন। তিনি ওই গ্রামের নির্মল বসুর ছেলে। গত ২৮ জানুয়ারি রাতে তার উপর হামলার পর তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরদিন ২৯ জানুয়ারি মাগুরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

গত ৭ মার্চ রাত আটটায় উপজেলার বালিদিয়া ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামের আল-আমীন ওরফে আমীন (২৭) নামের এক যুবককে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তিনি ওই গ্রামের শামছুর রহমানের ছেলে। পারিবারিক ও নারী ঘটিত বিষয়কে কেন্দ্র করে চাচাতো ভাই সোহেল রানা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। ঘাতক সোহেল ওই গ্রামের নওশের শেখের ছেলে। নৃশংস এ ঘটনার পর পুলিশ নড়েচড়ে বসেন। মাগুরার পুলিশ সুপার মশিউদ্দৌলা রেজা জেলার চারটি থানার পুলিশকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন। থানায় থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয় ঘাতক সোহেল রানার ছবি। ঘাতক সোহেল রানাকে গ্রেপ্তারের জন্য বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে তলস্নাশি চালাতে থাকে পুলিশ সদস্যরা।

মাগুরা-ঢাকা মহাসড়কের ওয়াপদা নামক এলাকা থেকে সোহাগ পরিবহণের একটি বাসে তলস্নাশি করেন শ্রীপুর থানার এসআই ইন্দ্রজিৎসহ সঙ্গীয় ফোর্স। এ বাসে তলস্নাশি করে ঘাতক সোহেলকে খুনের ঘটনার তিন ঘণ্টার মধ্যেই গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার দেওয়া তথ্যমতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ধারালো দা উদ্ধার করা হয়।

সর্বশেষ গত ১৬ মার্চ উপজেলার পলাশবাড়ীয়া ইউনিয়নের কালিশংকরপুর গ্রামে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই গ্রম্নপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের জেরে আরিফুল মোল্যা (৩৫) নামের এক যুবককে ধারালো সড়কি দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষ। তিনি ওই গ্রামের হাসান মোল্যার ছেলে। পলাশবাড়ীয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এমডি গোলজার রহমান এবং এই ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ নেতা রবিউল ইসলামের সমর্থকদরে মধ্যে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধের জেরে এ হত্যাকান্ড ঘটে।

এ সব ঘটনার বিষয়ে মহম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অসিত কুমার রায় বলেন, 'বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। বালিদিয়া ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামের আল-আমীন ওরফে আমীন হত্যার ঘাতককে ঘটনার তিন ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যান্য খুনের ঘটনার বিষয়ে জোর তদন্ত চলছে। সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ যথেষ্ট তৎপর রয়েছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে