বুধবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
walton
টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ ও ঘোনাপাড়া মহাসড়ক

ঢিলেঢালা কাজে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের

এস এম নজরুল ইসলাম, গোপালগঞ্জ
  ২৬ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০

টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ-ঘোনাপাড়া ৪৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণের কাজ চলছে ঢিমেতালে। ঢিলেঢালা কাজ চলায় ও সড়কটির বিভিন্নস্থানে খানাখন্দ ও ধুলাবালিতে অন্ধকার থাকায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় এ সড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের। প্রতিনিয়ত ধুলাবালি নাকে মুখে গিয়ে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন ওই ৪৪ কিলোমিটার এলাকার অসংখ্য বাসিন্দা। এ অবস্থায় সড়কে চলাচলকারীরা দ্রম্নত সড়ক সম্প্রসারণের কাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছেন।

গোপালগঞ্জ সড়ক বিভাগ সূত্র জানায়, ২০২০ সালের জুনে ৬শ' ১২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে এ সড়কটি জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণের জন্য অনুমোদন দেয় একনেক। কিন্তু দরপত্র আহ্বানসহ নানা জটিলতায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। এরপরই ২০২২ সালের শেষের দিকে শুরু হয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজ। সড়কটির বর্তমান প্রশস্থতা ধরা হয়েছে ৩৪ ফুট। কিন্তু ঢিলেঢালাভাবে সড়কের কাজ চলায় প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়েন চলাচলকারী যাত্রীরা। সড়কটির বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ আর বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় চলাচলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন পরিবহণ চালক ও যাত্রীরা। প্রতিদিনই ঘটছে কোনো না কোনো দুর্ঘটনা।

স্থানীয়রা জানায়, কাজের বর্তমান যে গতি কাজ চলছে তাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা যাবে না। ১নং প্যাকেজ এবং ২নং প্যাকেজের নিজস্ব পস্ন্যান্ট এবং পর্যাপ্ত ইকুইপমেন্ট থাকায় তারা বিরতিহীনভাবে কাজ করে কার্পেটিংয়ের কাজও প্রায় শেষ করে ফেলেছে। মানুষ ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে ওই পাকা অংশ দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করছে। বাকি ৪টি প্যাকেজের ঠিকাদারদের কাজের সাইটে যথোপযুক্ত ইকুইপমেন্ট, দক্ষ জনবল, টেকনিশিয়ান না থাকা এবং হয়তোবা তাদের এ ধরনের বড় কাজ করার অভিজ্ঞতা না থাকায় এই ৪টি প্যাকেজের কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ হবেনা বলে দৃঢ় বিশ্বাস স্থানীয় বাসিন্দাদের।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ও যানবাহন চালকরা জানান, গোপালগঞ্জ থেকে টেকেরহাট যেতে যেখানে সময় লাগার কথা ১ ঘণ্টা সেখানে বর্তমানে সময় লাগছে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। এছাড়া পণ্য ও কৃষিপণ্য পরিবহণ চলাচল করতে না পারায় ক্ষতির মুখে পড়ছেন ব্যবসায়ী ও কৃষকরা। তাদেরকে অনেক পথ ঘুরে, অনেক সময় ও অর্থ ব্যয় করে পণ্য পরিবহণ করতে হচ্ছে। দ্রম্নত এ সড়কটির কাজ শেষ করার দাবি পরিবহণ চালক ও যাত্রী সাধারণের।

নির্মাণাধীন ওই সড়কের স্থানীয় উলপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম বাবুল, বৌলতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুকান্ত বিশ্বাস ও সাতপাড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাপ্পি বিশ্বাস সড়কের কাজের মান ও গতি নিয়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, বাড়ি থেকে বের হতে হলে প্রস্তুতি নিয়ে টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ সড়কে বের হতে হয়। ধুলাবালিতে অন্ধকার হয়ে দিনের বেলা লাইট জ্বালিয়ে রাস্তায় গাড়ি চালাতে হয়। শ্বাসকষ্টে ভুগছে স্থানীয় হাজারও পথচারী। সওজ প্রকৌশলীরা সার্বক্ষণিক মাঠে থেকেও ঠিকাদারদের কাজের গতি বাড়াতে পারছে না। অফিস থেকে বারবার চাপ দেওয়া হচ্ছে পুরনো রাস্তা স্কেরিফাই করে পুরো রাস্তা এক করে বেশি বেশি পানি দিয়ে চলাচলের স্বাভাবিক গতি ঠিক রাখতে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। ৪৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সড়কটিতে যাতায়াতকারী লোকজনের ঈদযাত্রা একবারেই সুখকর হবে না। এই তিন চেয়ারম্যান সড়কটিতে তিনবেলা পর্যাপ্ত পানি দিয়ে মানুষের ঈদযাত্রা স্বাভাবিক রাখার দাবি জানিয়েছেন।

এসব কাজের ঠিাকাদাররা নানা প্রশ্নের জবাবে বলছেন, নানা প্রতিকূলতাসহ কাজের বিপরীতে যথেষ্ট বরাদ্দ না থাকা, ইকুইপমেন্ট স্বল্পতা, স্থানীয় ভূমি মালিকদের কাজে বাধা দেওয়া, নতুন অ্যালাইমেন্ট টিকমতো বুঝে না দেওয়া, পানির গাড়ির স্বল্পতা, শ্রমিক সংকট ও মালামালের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা কারণে তাদের কাজে একটু বেশি সময় লাগছে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের পূর্ণাঙ্গ কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন ঠিকাদাররা।

গোপালগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদ হোসেন বলেন, আশা করছি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে পুরো ৪৪ কিলোমিটার রাস্তার কার্পেটিংয়ের কাজ শেষ করতে পারব। এরপর চলবে সড়কের অন্যান্য প্রতিরক্ষা ও সজ্জিতকরণের কাজ। ৬টি প্যাকেজের মধ্যে ৪টি প্যাকেজের ঠিকাদাররা আন্তরিক হলে কাজের গতি স্বাভাবিক থাকত এবং স্থানীয় জনগণ শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, শ্বাসকষ্ট, সড়ক দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেত বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাহী প্রকৌশলী।

সড়ক বিভাগের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ-ঘোনাপাড়া সড়কটির সম্প্রসারণ কাজ শেষ হলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ হবে। সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, গোপালগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা ঢাকা, চট্টগ্রামগামী যানবাহনসমূহ গোপালগঞ্জ-কাশিয়ানী-মুকসুদপুর-ভাঙ্গা সড়ক ব্যবহার না করে গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট-বরইতলা-ভাঙ্গা সড়ক ব্যবহার করবে। এতে ঢাকার সঙ্গে দূরত্ব কমবে ২০ কিলোমিটার, সময় ও জ্বালানি সাশ্রয় হবে যানচালকদের। তাছাড়া সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, বেনাপোল, যশোর, গোপালগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রামগামী পরিবহণসমূহ টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ-ঘোনাপাড়া সড়ক ব্যবহার করে আগের চেয়ে অনেক কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
shwapno

উপরে