রোববার, ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

সিরাজগঞ্জে যমুনার তীর রক্ষা বাঁধে ধস

মেঘনায় নির্মাণাধীন বাঁধের ওপর জোয়ারের পানি
যাযাদি ডেস্ক
  ০৮ জুলাই ২০২৩, ০০:০০
সিরাজগঞ্জে যমুনার তীর রক্ষা বাঁধে ধস
সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে নদীর তীর রক্ষা 'সলিড স্পার' বাঁধের ভাঙন রোধে ফেলা হচ্ছে জিও ব্যাগ ও সিসি বস্নক -যাযাদি

উজান থেকে নেমে আসা পানির চাপে দেশের বিভিন্ন নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে নদীর তীর রক্ষায় করা 'সলিড স্পার' বাঁধের অন্তত ৩০ মিটার এলাকা ইতোমধ্যে ধসে গেছে। এতে উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে রয়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা। এদিকে লক্ষ্ণীপুরে মেঘনা নদীর নির্মাণাধীন তীররক্ষা বাঁধের ওপর দিয়ে গত কয়েকদিন ধরে জোয়ারের পানি গড়াচ্ছে। এতে বাঁধ টেকসই হওয়া নিয়ে শঙ্কিত নদী তীরের বাসিন্দারা তীররক্ষা বাঁধের কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

আমাদের কাজীপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, শুক্রবার সকালে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান বিপস্নব বলেন, 'যমুনা নদীতে গত কয়েকদিন ধরে পানি বাড়ছে। পানি বাড়ার ফলে শুক্রবার ভোর ৫টা থেকে মেঘাই ১ নম্বর সলিড স্পার এলাকায় ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়ে ধসে যেতে শুরু করে। অল্প সময়ের ব্যবধানে স্পারের প্রায় ৩০-৩৫ মিটার নদীগর্ভে চলে যায়।'

তিনি আরও বলেন, 'এ স্পারটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে কাজিপুর থানা, খাদ্য গুদাম, রেজিস্ট্রি অফিস, কাজিপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ ভবনসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে পড়বে।'

কাজিপুর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মো. অনিক ইসলাম বলেন, 'স্পার ধসে যাওয়ার বিষয়টি জানার পর বিষয়টি দ্রম্নত পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবগত করেছি। এর মধ্যে পাউবোর লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন।'

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, 'খবর পেয়ে আমরা দ্রম্নত ঘটনাস্থলে এসেছি। সলিড স্পারের অন্তত ৩০ মিটার এলাকা ধসে গেছে। আপাতত জিও ব্যাগ ফেলে ধস ঠেকানোর চেষ্টা চলছে।'

যমুনা নদীর ভাঙন থেকে কাজিপুর উপজেলা রক্ষায় ১৯৯৭ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিমের প্রচেষ্টায় মেঘাই খেয়াঘাট এলাকায় এই ৩০০ মিটার সলিড স্পারটি নির্মাণ করা হয়েছিল।

২০১২ ও ২০১৩ সালে স্পারটির মূল অংশের ১৫০ মিটার এলাকা ধসে যায়। পরবর্তীতে স্পারের মাটির অংশটুকু রক্ষায় সিসি বস্নক দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল।

এদিকে লক্ষ্ণীপুরে মেঘনা নদীর নির্মাণাধীন তীররক্ষা বাঁধের একটি অংশের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জেলার কমলনগর উপজেলার পাটওয়ারীহাট রাস্তার মাথার দক্ষিণ অংশের নির্মাণাধীন বাঁধের ওপর দিয়ে গত কয়েকদিন ধরে জোয়ারের পানি গড়াতে দেখা গেছে। এতে বাঁধ টেকসই হওয়া নিয়ে শঙ্কিত নদীর তীরের বাসিন্দারা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, 'লক্ষ্ণীপুরে মেঘনা নদীর বড়খেরী, লুধুয়াবাজার এবং কাদিরপন্ডিতের হাট বাজার তীররক্ষা প্রকল্প নামে ৩৩.২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকল্পটি ২০২১ সালের ১ জুন পাস করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮৯ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। ২০২২ সালের ৯ জানুয়ারি কমলনগরে মাতাব্বর হাট এলাকায় দুটি লটের কাজ উদ্বোধন করেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক। এরপর থেকে তীররক্ষা বাঁধের কাজ চলছে।'

তথ্য অনুযায়ী, কমলনগর উপজেলার পাটওয়ারীর হাট ইউনিয়নের পাওয়ারীর হাট রাস্তার মাথায় দক্ষিণ অংশে এবং উত্তর অংশে দু'টি লটের কাজের দায়িত্বে রয়েছে ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সাব ঠিকাদারের মাধ্যমে এ দু'টি লটের কাজ করাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। লট দু'টির আওতাধীন কাজের মধ্যবর্তী অংশটি উত্তর এবং দক্ষিণ অংশের তুলনায় একেবারে নিচু। এছাড়া নির্মাণাধীন ওই বাঁধের পাশেই রয়েছে একটি পুকুর। ফলে খুব সহজে জোয়ারের পানি বাঁধের ওপর দিয়ে গড়াচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই অংশটিতে নিম্নমানের কাজ হয়েছে। বাঁধের মাটির নিচে দেওয়া হয়েছে গাছের গুঁড়ি। এছাড়া পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ ড্রাম্পিং করা হয়নি। ফলে চলতি বর্ষা মৌসুমে ওইস্থান দিয়ে নদীর জোয়ারের পানি অনবরত প্রবাহিত হচ্ছে। যার ফলে নির্মাণাধীন বাঁধের ওই স্থানটি দুর্বল হয়ে পড়েছে। জোয়ারের পানির সঙ্গে বাঁধের মাটি ধুয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, 'কাজ একেবারেই ধীরগতিতে চলছে। বর্ষা শুরুর আগেই এ স্থানটিতে পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ ড্রাম্পিং করা হলে জোয়ারের পানি ঢুকত না। জোয়ারের পানি আসা-যাওয়ার কারণে বাঁধের এ অংশটি হুমকির মুখে পড়েছে।'

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা হারুন পাটওয়ারী বলেন, 'বাঁধের পাশের বিশালাকৃতির একটি পুকুর ভরাট না করায় নির্মাণ কাজ ঝুঁকিতে পড়েছে। এছাড়া এ এলাকাটি নিচু, তাই জোয়ারের পানি খুব সহজে উঠে যাচ্ছে।'

কাজে ধীরগতির বিষয়ে ঠিকাদারকে দ্রম্নত কাজ করতে তাগাদা দিচ্ছি উলেস্নখ করে লক্ষ্ণমীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মানজুর এলাহী বলেন, 'আমাদের উপস্থিতিতে কাজ হচ্ছে। তাই কাজের মান খারাপ হবে না। তবে ওই লটে ৬৯ হাজার ৪১১টি জিও ব্যাগ ড্রাম্পিং করার কথা। কিন্তু এ পর্যন্ত ৩১ হাজারের মতো জিও ব্যাগ ড্রাম্পিং করা হয়েছে। সবগুলো জিও ব্যাগ ড্রাম্পিং করা হলে জোয়ারের পানি ঢুকতে পারত না।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে