রোববার, ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

ঠকছেন আমচাষি : সাপাহারে ৫৩ কেজিতে হয় এক মণ আম!

সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধি
  ০৮ জুলাই ২০২৩, ০০:০০
ঠকছেন আমচাষি : সাপাহারে ৫৩ কেজিতে হয় এক মণ আম!

নওগাঁর সাপাহার বর্তমানে আম উৎপাদনে শীর্ষস্থান দখল করে দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছে। অন্যান্য জেলার চেয়ে বরেন্দ্র এই এলাকার আম সুমিষ্ট হওয়ায় দেশের সর্বত্রই এর চাহিদাও অনেক। এ ছাড়া এই এলাকার উৎপাদিত আম বিদেশেও রপ্তানি হয়ে থাকে। ফলে ইতোমধ্যে নওগাঁ জেলা সারা দেশে আমের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবেও পরিচিতি লাভ করতে শুরু করেছে। চলতি মৌসুমে তীব্র খরায় সেচ ব্যবস্থা, কীটনাশকের মূল্যবৃদ্ধি, শ্রমিকের মজুরিসহ নানাবিধ কারণে আম উৎপাদনে খরচ বিগত বছরের তুলনায় অনেক বেশি হয়েছে বলে এখানকার আমচাষিরা জানিয়েছেন। এমতাবস্থায় হাটে আম বিক্রির ক্ষেত্রে নানাবিধ অনিয়ম ও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে চাষিদের।

সরেজমিন গত মঙ্গলবার জেলার বৃহত্তম এই আমের হাটে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিদিনের মতো সকাল থেকেই আম বেচাকেনা শুরু হয়ে চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। উপজেলার জয়পুর ফিলিং স্টেশনের মোড় থেকে জিরো পয়েন্ট হয়ে দিবরের মোড় পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রাস্তার পাশে আম বেচাকেনা করছে। আর এসব আমচাষি হাটের অব্যবস্থাপনার কারণে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগও তুলেছে।

পার্শ্ববর্তী পোরশা উপজেলা থেকে আম বিক্রি করতে আসা জাহিদ হাসান জানান, গত কয়েক বছর সাপাহারে আমের ওজন সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও এবার পুরোটাই আলাদা, ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে আমচাষিরা। ওজনে ৫৩ কেজিতে মণ ছাড়া কথাই শুনছেন না ব্যবসায়ীরা, তারা কখনো ৫১ কেজি কখনো ৫২ কেজি আবার কখনো ৫৩ কেজিতে ১ মণ হিসেবে আম ক্রয় করছেন। এ ছাড়া ওজনের সময় নানা কায়দায় ক্যারেট থেকে আম নিয়ে নিচ্ছে তারা, প্রতিবাদ করতে গেলে আবার অকারণেই বাছাই করছে ঝুড়ির আম, এ ছাড়া স্বেচ্ছাসেবক নামে লাঠি হাতে প্রতিটি গাড়ির ক্যারেট থেকে আম তুলে নিচ্ছে কিছু শ্রেণির লোক।

হয়রানির শিকার পত্নীতলা উপজেলার আম বিক্রেতা সোহেল রানা বলেন, সাপাহার উলস্নাস সিনেমা হলসংলগ্ন ঢাকা ফল ভান্ডারে আম বিক্রয়ের সময় ওজনের অনিয়ম ৫৩ কেজিতে মণ এরপরও নানাভাবে আম তুলছে প্রতি ক্যারেট থেকে। যা কোনোভাবেই ৫৫ কেজির কম হবে না। তাছাড়া অনেক সময় টাকা দিতে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা ঘুরিয়ে হাতে বিক্রি স্স্নিপ দিয়ে পরের দিন আসতে বলছেন তারা।

এ ছাড়া আম বিক্রি করতে আসা মাসুদ, আরিফ, নুর আলমসহ অনেক চাষিই একইভাবে এসব অনিয়মের কথা এ প্রতিনিধিকে জানান। তারা বলেন, দরদাম ঠিক হওয়ার পর আড়তে গিয়ে হয়রানি করছেন আম ব্যবসায়ীরা। যেখানে এক মণ আমে তাদের বেশি দিতে হচ্ছে ১০-১২ কেজি পর্যন্ত তারপরও লেনদেন নিয়ে ঝামেলা করে টাকার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘোরাচ্ছে চাষিদের।

এ বিষয়ে সাপাহার আম বাজার আড়তদার সমিতির সভাপতি কার্তিক সাহা বলেন, আমরা ওজনে বেশি নিতে কখনো চাই না। কৃষকরা ছোট-বড় আম একসঙ্গে করে নিয়ে বাজারে বিক্রি করতে এসে ব্যবসায়ীদের সব আম নেওয়ার জন্য দুই কেজি বেশি নিতে বলে। আর যাদের আম ভালো এক সাইজের তাদের কাছ থেকে ৪৮ কেজিতে মণ হিসেবে কেনা হয়।

তিনি আরও বলেন, পার্শ্ববর্তী কানসাট ও রহনপুরে ক্যারেট ছাড়ায় ৫২ কেজিতে মণ নেওয়া হয়। আর আমাদের এখানে ৪৮ কেজিতে আম কেনা হয়। এর প্রভাবে সাপাহারে ব্যবসায়ীরা কম আসছে, ওজন সব জায়গায় সমান হলে আমের দাম আরও বেশি হতো।

অনিয়মের বিষয়ে সাপাহার বাজার আমচাষি সমিতির সহ-সভাপতি খন্দকার হাবিবুর রহমান বলেন, কৃষকদের কষ্টের ফসল এভাবে ওজনে বেশি নেওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। এ ছাড়া আম বাজারে নানাবিধ অনিয়মের ব্যাপারে তিনি প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এবং পাশাপাশি বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা আরও জোরদার করার দাবিও জানিয়েছেন।

বর্তমানে এই হাটে মানভেদে প্রতি মণ আমরুপালি ২২শ' থেকে ৩ হাজার ৩২শ' টাকা, ফজলি ১২শ' থেকে ১৬শ' টাকা, মলিস্নকা এবং ল্যাংড়া আম ৪ হাজার টাকায় কেনাবেচা হতে দেখা গেছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, এবার সাপাহারে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে এবং প্রতি হেক্টরে ১৫ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে মতে এবারে সাপাহার বৃহত্তর এই আমের হাট থেকে প্রায় শতকোটি টাকার আম কেনাবেচা হতে পারে।

সাপাহারের আমচাষিরা ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন ধরনের হয়রানি থেকে মুক্তি পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ ও সহযোগিতা কামনা করেছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে