বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
walton

ঈশ্বরদীতে নামসর্বস্ব কীটনাশকে বাজার সয়লাব, হতাশ কৃষক

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি
  ২১ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
পাবনার ঈশ্বরদীতে ফসলের মাঠে কীটনাশক ছিটাচ্ছেন কৃষক -যাযাদি

সোনা ফলানো মাটি খ্যাত ঈশ্বরদীর সুনাম দেশজুড়ে। ঈশ্বরদীর উর্বর মাটিতে যা রোপণ করা হয় তারই সর্বোচ্চ ফলন পান কৃষক। ঈশ্বরদীর গাজর, টমেটো, পেঁপে, মুলা, ওলকপি, বাঁধা ও ফুলকপি, শিম, ধনেপাতাসহ দেশের বাজারে ঈশ্বরদীর সবজির বাড়তি চাহিদা রয়েছে। বাড়তি এই চাহিদা মেটাতে কৃষক ১২ মাসই ব্যস্ত থাকেন মৌসুমি ফসল ফলাতে। কিন্তু কৃষকের এই কঠোর পরিশ্রম আর সোনার মাটিতে চুনকালি মেখে দিচ্ছে বাজারের দোকানগুলোতে বিক্রীত নাম সর্বস্ব কীটনাশক। রুটিন করে সকাল বিকাল জমিতে কীটনাশক স্প্রে করেও ছত্রাক দমন করতে ব্যর্থ হচ্ছেন কৃষক। এতে করে সময় এবং আর্থিক উভয় দিক দিয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। অথচ কৃষকের এমন ক্ষতি এবং বাজারে এসব নামসর্বস্ব কীটনাশক ভরপুর থাকলেও অজ্ঞাত কারণে নীরব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা।

উপজেলার সবচেয়ে ভালোমানের এবং সর্বোচ্চ সবজি উৎপাদন হয় ভাড়ইমারী অঞ্চলে। এই এলাকার সবজি চাষি নাসির হোসেন বলেন, এবারও ছয় বিঘা জমিতে গাজর চাষ করেছেন। ওলকপি, বাঁধাকপি ও ফুলকপির চাষ করেছি কয়েক বিঘা। সামান্য কিছু পেঁয়াজ এবং রসুনের চাষও রয়েছে। সব কিছু মিলে সারা দিন তাকে কাজের লোকদের সঙ্গে মাঠেই থাকতে হয়। তবে বাজারে পাওয়া কীটনাশকের প্রতি তার অভিযোগের শেষ নেই।

তিনি বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার কীটনাশকের ডোজ দ্বিগুণেরও বেশি দিতে হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সকাল-বিকাল নিয়ম করেই জমিতে ছিটানো হচ্ছে কীটনাশক। তবুও ছত্রাক ও পোকা দমনের কোনো বালাই নেই। কারণ জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করে বলেন, বাজারে নামি বেনামি কীটনাশকের ছড়াছড়ি। দেখার কেউ নেই তাই যার যা ইচ্ছা তাই বিক্রি করে। মাঝে বিপদে পড়ি আমরা কৃষকরা।

জগন্নাথপুর এলাকার কৃষক আলীম বলেন, 'বাজার থেকে যে কোম্পানির কীটনাশকই আনি, কোন কাজ হয় না। খরচের বেলায় ডবল হলিও কামের বেলায় নেই। আর এগুলো দেখারও কেউ নেই।'

নওদাপাড়া গ্রামের কৃষক আল-আমিন, মিরকামারীর দুলাল, দাঁদপুরের মানিক ও বিপস্নব, মুলাডুলির বাবুল, বাঘহাছলার আজিবারসহ অন্যান্য কৃষকদেরও গল্প একই রকম।

কৃষকদের অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলার দাশুড়িয়া, মুলাডুলি, আনন্দ বাজার, ঢুলটি, সিলিমপুর, জয়নগর, মুন্নার মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা কীটনাশকের দোকনগুলোতে নামসর্বস্ব কীটনাশক বিক্রির প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে সংশ্লিষ্টদের সঠিক নজরদারিতে এসব ভেজাল কীটনাশক বাজার থেকে বিলুপ্ত হোক এটাই কৃষকদের চাওয়া।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতারানী সরকার বলেন, কীটনাশকের দোকানগুলোতে ভেজাল এবং মানহীন পণ্য রাখার অভিযোগে কয়েকদিন আগে মুলাডুলিতে অভিযান পরিচালনা করে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। তবে কৃষকদের অভিযোগ আমাদের সরাসরি জানালে সুবিধা হয়। তবুও আমরা আমাদের অভিযান অব্যাহত রাখব। প্রমাণ পেলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
shwapno

উপরে