সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
সন্ত্রাসীদের নির্মূল করার দাবি পার্বত্যবাসীর

পার্বত্য জেলার দুর্গম অঞ্চলে চিকিৎসা দিচ্ছে সেনাবাহিনী

লংগদু (রাঙামাটি) প্রতিনিধি
  ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০

'শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়ন' এই মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বিশেষ করে তিন পার্বত্য জেলার দুর্গম এলাকাগুলোতে চিকিৎসার অভাবে দিনাতিপাত করা মানুষের পাশে সব সময়ই দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। যে কোনো মহামারির সময়ও দুর্গমবাসী সেনাবাহিনীকে কাছে পায়।

তবে দুর্গমবাসীদের কাছে আতঙ্কের নাম হলো চাঁদাবাজ। জেএসএস (মূল), জেএসএস (সংস্কার), ইউপিডিএফ (মূল), ইউপিডিএফ (সংস্কার) এই চার সংগঠনের সন্ত্রাসীরা নিয়মিত তাদের কাছ থেকে চাঁদা তোলেন। চাঁদা না দিলে তাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। গভীর রাতে এসে বাড়িতে হানা দিয়ে চালায় নির্যাতন।

এসব সন্ত্রাসী চাঁদাবাজদের নির্মূল করার দাবি জানিয়ে দুর্গম এলাকায় বসবাসকারী পাহাড়ি-বাঙালিরা বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে পাহাড়ে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। আমরাও এর সুবিধা ভোগ করছি। তবে চাঁদাবাজদের নির্মূল করা গেলে আমরা অনেক শান্তিতে বসবাস করতে পারব। আমরাও এ দেশের নাগরিক। কেন তাদের চাঁদা দিতে হবে সরেজমিন পাহাড়ের দুর্গম এলাকায় গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছেন।

বর্তমান সরকারের আমলে তিন পার্বত্য জেলায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তবে এখনো কিছু কিছু এলাকা রয়েছে দুর্গম। এসব এলাকায় বসবাসকারীরা চিকিৎসাসেবাসহ অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত। বর্তমানে শীতের আবহাওয়ায় শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশি-জ্বর ছাড়াও নানা রোগব্যাধি দেখা দিয়েছে। তবে সেনাবাহিনী নিয়মিত মেডিকেল টিম তাদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে। হার্টসহ সব ধরনের রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া বিজিবিও দুর্গমবাসীর চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে।

রাঙামাটির জুরাছড়ি এলাকা এখনো দুর্গম। করোনার সময় হেলিকপটারে করে সেখানকার মানুষের চিকিৎসাসেবা দিয়েছিল সেনাবাহিনী। কাপ্তাই উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন রয়েছে দুর্গম। বিলাইছড়িও দুর্গম এলাকা। বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে কয়েকটি এলাকা রয়েছে দুর্গম। সেনাবাহিনী দুর্গমবাসীদের চিকিৎসা সেবায় সবসময় পাশে রয়েছেন।

পাহাড়ি-বাঙালিরা পার্বত্যাঞ্চলে সেনাবাহিনীর ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, জনগণের সব ধরনের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। পাড়া-মহলস্নায় মেডিকেল টিম গঠন করে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে। নিরাপত্তার পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যদের কাছে সংবাদ পৌঁছে দেন, কিন্তু তাদের সেবা পেতে দেরি হয় না। পাহাড় ধস, ঝড়বৃষ্টি, তুফানসহ যেকোনো দুর্যোগের সময় তাদের কাছে পায়।

বিলাইছড়ি জোনের মেডিকেল টিম সরেজমিনে রোগীকে পরীক্ষা করে এবং রোগীর চিকিৎসা শুরু করে। রোগীর উন্নত চিকিৎসার জন্য মেডিকেল টিম চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগ এবং পরে বার্ন ও পস্নাস্টিক সার্জারি বিভাগে রোগীর ডেব্রাইডমেন্ট ও স্কিন গ্র্যাফটিং সম্পন্ন করে। বিলাইছড়ি জোনের মেডিকেল টিম অস্ত্রোপচার করা অংশের নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও পরিচর্যার মাধ্যমে দীর্ঘ চার মাস পর গরিচাং চাকমাকে তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হয়।

গরিচাং চাকমার মতো প্রতি মাসে এই ধরনের জটিল রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে সেনাবাহিনী। যাদের দুর্গম এলাকা থেকে গিয়ে কোনো মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাসেবা নেওয়া সম্ভব নয়, সেনাবাহিনী এদের চিহ্নিত করে জটিল রোগীদের চিকিৎসার জন্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। অনেকে চিকিৎসাসেবা পেয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন। চিকিৎসাসেবা ছাড়াও দুর্গম এলাকায় নিম্নবিত্ত, গরিব, অসহায় এবং দুস্থ জনগোষ্ঠীদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণও অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে