বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

চিতলমারীতে বস্ন্যাংক চেকের ফাঁদে ফেলে হয়রানি

ভুক্তভোগীদের সংবাদ সম্মেলন
ইসরাত জাহান, বাগেরহাট
  ১৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
চিতলমারীতে বস্ন্যাংক চেকের ফাঁদে ফেলে হয়রানি

অসুস্থ স্বামীর মৃতু্যর আগে চিকিৎসার জন্য স্ত্রী নিলীমা রানী হালদার সুদ কারবারি সবুরের কাছ থেকে ৮ হাজার টাকা সুদে নিয়েছিলেন। স্বামীর মৃতু্যর পর সুবর শেখকে আসল ও সুদসহ পরিশোধ করেন ২০ হাজার টাকা। লেনদেন ভালো দেখে সবুর শেখ নিলীমাকে কৃষিকাজসহ নানা কারণে আরও লোন দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট করতে বলেন। এক পর্যায়ে সবুর নিলীমাকে নিয়ে ব্যাংকে গিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়ে চেক বইয়ের দুইটি খালি পাতায় (বস্ন্যাংক চেক) স্বাক্ষর করিয়ে পাতা ছিঁড়ে নেন। এর কয়েক মাস পর নিলীমাকে নোটিশ পাঠিয়ে তার কাছে সাড়ে ৪ লাখ টাকা পান বলে দাবি করেন। যা নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার চিহ্নিত সুদ কারবারি সবুর শেখ নিলীমা রানীর মতো অসংখ্য নিরক্ষর কিংবা স্বল্প শিক্ষিত মানুষকে এমন ফাঁদে ফেলেছেন বলে অভিযোগ আছে। সবুরের ফাঁদে পড়ে ইতোমধ্যে একজন আত্মহত্যাও করেছেন। গত বৃহস্পতিবার বিকালে চিতলমারী উপজেলা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এমনই অভিযোগ উত্থাপন করেন নিলীমা রানীসহ ৩ জন ভুক্তভোগী। ভুক্তভোগী অন্য দুইজন হলেন শ্রীকান্ত মজুমদার এবং কার্তিক মজুমদার।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন শ্রীকান্ত। তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, 'একান্ত ঠেকায় পড়ে আমি সবুর শেখের কাছে ৩০ হাজার টাকা সুদ নিয়েছিলাম। বিনিময়ে তাকে দেড় লাখ টাকা দিয়েছি। টাকা নেওয়ার সময় সবুর আমার থেকে বস্ন্যাংক চেক নিয়েছিল। আমি আইন-কানুন না জানায় চেকে সই করি। এখন আমার নামে ৪ লাখ ২৭ হাজার টাকার মামলা করেছে। আমি ১৫ দিন জেলও খেটেছি। সবুর শেখ এভাবে মামলা করতে পার্শ্ববর্তী গোপালগঞ্জে বসবাস করা এক আত্মীয়ের সাহায্য নিয়ে থাকেন। কখনো তিনি নিজে বাদী হন, কখনো ওই আত্মীয়কে বাদী করান।'

শ্রীকান্ত বলেন, 'সবুর শেখের কারেন্ট সুদের খপ্পরে পড়ে আমার এলাকার একজন আত্মহত্যা করেছে। অনেকে দেশ ছেড়েছে, কয়েকজন নিঃস্ব হয়ে পথে পথে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বর্তমানে আমরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভয়ে আছি।'

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, সবুর শেখের শক্তিশালী আদায়কারী বাহিনী ও মামলাবাজ চক্র রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আরেক ভুক্তভোগী উপজেলার শিবপুর গ্রামের লাল বিহারী মজুমদারের ছেলে কার্তিক মজুমদার বলেন, 'আমি উপজেলার বারাশিয়া গ্রামের ফহম উদ্দিন শেখের ছেলে আব্দুস সবুর শেখের কাছ থেকে ভাইপোর বিদেশে যাওয়ার জন্য এক লাখ ৬০ হাজার টাকা সুদে নিয়েছিলাম। এ টাকার সুদ হিসাবে তাকে আমি এ পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ টাকা পরিশোধ করি। এ টাকা নিয়েও সে খ্যান্ত হয়নি। সে আমার দেওয়া বস্ন্যাংক চেক ফেরত না দিয়ে আমার বিরুদ্ধে ১৫ লাখ টাকার মামলা করেছে।'

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সবুর শেখ সাংবাদিকদের বলেন, 'টাকা পাওনা না থাকলে কি কেউ চেক দেয়? আপনারা আপনাদের কাজ করেন, তারা তাদের কাজ করুক। আমি আমার কাজ করব।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে