বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
হাবিপ্রবি শিক্ষকের আবেদন

দিনাজপুরে হচ্ছে 'লিচু চত্বর'

হাবিপ্রবি প্রতিনিধি
  ১৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
দিনাজপুরে হচ্ছে 'লিচু চত্বর'

দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) এক শিক্ষকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে 'লিচু চত্বর' বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ। লিচু চত্বর নির্মাণের জন্য শহরের প্রবেশমুখ দিনাজপুর সরকারি কলেজ মোড়কে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

জানা যায়, আদিকাল থেকে বাংলাদেশের মধ্যে দিনাজপুরে প্রথম লিচু চাষ শুরু হয়। তবে নির্দিষ্ট কোনো তারিখ বা সন জানা যায়নি। জনশ্রম্নতি রয়েছে ব্রিটিশ আমলে কোনো একসময় সদর উপজেলার ৬নং আউলিয়াপুর ইউনিয়নের মাশিমপুর গ্রামের আব্দুল হক ভারতের বোম্বাই থেকে বেদানা লিচুর চারা নিয়ে এসে রোপণ করেন। সেই থেকে দিনাজপুরে লিচু চাষ শুরু হয়। একে একে বোম্বাই, মাদ্রাজি, হারিয়া বেদানা, কাঁঠালি, চায়না-থ্রি, গোলাপিসহ বিভিন্ন জাতের লিচু চাষ শুরু হয়। দিনাজপুরের লিচু দেশ-বিদেশে কদর অর্জন করলেও লিচু নিয়ে তেমন কোনো গবেষণা বা কাজ হয়নি। অথচ এ জেলায় লিচু চাষে রয়েছে দেড়শ' বছরের ইতিহাস। সারাদেশে লিচু চাষ হলেও দিনাজপুরের লিচুর কদর আলাদা। দেশের মানুষ দিনাজপুরের লিচুকে 'প্রাকৃতিক রসগোলস্না' হিসেবেও আখ্যায়িত করেন।

কৃষিপ্রধান এ দেশের একেকটি জেলা একেকটি পণ্য উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। দিনাজপুর জেলার জন্য একটি লোগো তৈরি করেছে প্রশাসন। যেখানে স্স্নোগান দেওয়া হয়েছে- 'চাল লিচুতে ভরপুর, জেলার নাম দিনাজপুর।' লোগোটি জেলা-উপজেলাসহ সব প্রশাসনিক দপ্তরে শোভা পাচ্ছে। তবে চাল, লিচু চাষের জন্য বিখ্যাত হলেও এ জেলায় নেই কোনো চাল বা লিচু চত্বর।

গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর জেলায় লিচু চত্বর স্থাপনের জন্য আবেদন করেন জেলার পার্বতীপুর উপজেলার কৃতীসন্তান হাবপ্রবি'র ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্স অনুষদের এনাটমি অ্যান্ড হিস্টোলজি বিভাগের প্রফেসর ডক্টর নাজমুল হাসান পারভেজ। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আবেদনের সঙ্গে তিনি দিনাজপুর সরকারি কলেজ মোড়ে লিচু চত্বরের একটি নকশা সংযুক্ত করে দেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক লিচু চত্বর বাস্তবায়নের জন্য ২৯ নভেম্বর ডাকযোগে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন। এর আগেও বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে দীর্ঘদিন থেকে দিনাজপুরের মানুষ লিচু চত্বর স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছেন।

লিচু চত্বরের আবেদনের ব্যাপারে প্রফেসর ডক্টর নাজমুল হাসান পারভেজ বলেন, 'নিজের এলাকার তথা দেশের জন্য ভালোবাসার অনুভূতি থেকেই আমার এই উদ্যোগ। দিনাজপুর জেলা চাল ও লিচুর জন্য বিখ্যাত। কিন্তু এই জেলায় প্রাপ্ত লিচুফলের কোনো ভাস্কর্য নেই। বাংলাদেশের রাজশাহীতে যেমন রয়েছে আম চত্বর এবং টাঙ্গাইলের মধুপুরে আনারস চত্বরের মতো আমাদের দিনাজপুরে এমন লিচু চত্বর তৈরি করা বিশেষ প্রয়োজন, যা আমাদের দিনাজপুর জেলাকেও বাংলাদেশ তথা সারাবিশ্বে লিচুর জন্য আরও নতুন করে পরিচিত করে তুলবে।'

লিচু চত্বর স্থাপনের ব্যাপারে দিনাজপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলওয়ার হোসেন বলেন, 'দিনাজপুরে একটি লিচু চত্বর করার সিদ্ধান্ত ছিল। শিক্ষকের আবেদন আমাদের কাজকে আরও ত্বরান্বিত করবে। প্রাথমিকভাবে দিনাজপুর সরকারি কলেজ মোড়ে লিচু চত্বরটি করার প্রস্তুতি চলছে। তবে এর থেকে আরও ভালো জায়গা যদি পাওয়া যায় সেখানেও এটি করা যেতে পারে।'

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নূরুজ্জামান বলেন, 'জেলায় পাঁচ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। এ বাগানগুলোতে লিচু উৎপাদন হয় প্রায় ৪৫ হাজার মেট্রিক টন। যা দিনাজপুরের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে। আমরাও চাই দিনাজপুরে লিচু চত্বর স্থাপিত হোক।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে