সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঘাটাইলে কৃষি জমির মাটি ও বনের কাঠ যাচ্ছে ইটভাটায়

ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
  ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে ইটভাটায় পোড়ানোর জন্য কেটে এনে রাখা হচ্ছে বনের গাছ -যাযাদি

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার বনের ভেতর, আবাসিক এলাকা, স্কুল-মসজিদের পাশে তিন ফসলি জমিতে গড়ে ওঠা ইটভাটা নিয়ে চলছে শুভঙ্করের ফাঁকি। প্রভাবশালী মালিক পক্ষ লাইসেন্স না করেই উচ্চ আদালতে রিট করে বছরের পর বছর এসব অবৈধ ইটভাটা পরিচালনা করে আসছে। ফলে তারা আইন না মানায় একদিকে বনের গাছ ও কৃষকের আবাদি ফসল নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে ইটভাটার নানামুখী গাড়ির চাপে গ্রামীণ রাস্তাঘাট ভেঙে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পরছে। সেই সঙ্গে ইটভাটার মালিকরা জমির উর্বর মাটি কেটে ফসল চাষ ও পরিবেশ দূষণে ব্যাপকহারে ক্ষতি করছে।

সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, ঘাটাইল উপজেলায় ৫৬টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ৫০টি পরিবেশ ছাড়পত্রহীন। যেসব ইটভাটার নিয়মবহির্ভূত লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, তাও মেয়াদোত্তীর্ণ। তিন ফসলি জমিতে ভাটা স্থাপন করার বিধান না থাকলেও স্থানীয় চেয়ারম্যান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও ইউএনও বেআইনিভাবে আপত্তি নাই মর্মে প্রত্যয়নপত্র দিয়ে ভাটা স্থাপনের সুযোগ দিচ্ছে।

এসব ভাটার মধ্যে ধলাপাড়া ইউনিয়নে বনের ভেতর গড়ে উঠেছে আটটি। রসুলপুর ইউনিয়নে বনের ভেতর ৮টি। দেওপাড়া ইউনিয়নে বনের ভেতর দু'টি। দেউলাবাড়ি ইউনিয়নে ছয়টি। জামুরিয়া ইউনিয়নের আবাসিক এলাকায় ও স্কুল-মসজিদের পাশে গড়ে উঠেছে ১৪টি। আনেহলা ইউনিয়নে চারটি দিগর ইউনিয়নে সাতটি। সংগ্রামপুর ইউনিয়নে বনের ভেতর একটি। দিঘলকান্দি ইউনিয়নে দু'টি। ঘাটাইল সদর ইউনিয়নে একটি। লোকের পারা ইউনিয়নে একটি। ঘাটাইল পৌর এলাকায় দু'টিসহ মোট ৫৬টি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। তার ২০টিই বন এলাকায় গড়ে উঠেছে। অবশিষ্ট ৪৬টির মধ্যে ৩৯টি সংরক্ষিত বনের তিন কিলোমিটারের মধ্যে ও জনবসতিপূর্ণ এলাকায় এবং টাঙ্গাইল-ময়মনসিং মহাসড়ক সংলগ্ন রাস্তায় কোল ঘেঁষে তিনটি স্থাপন করা হয়েছে।

এভাবে ৫৬টি ভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া যেমন পরিবেশ দূষণ হচ্ছে, অন্য দিকে ফসলি জমির উর্বর গভীর করে কেটে নেওয়ার জমির উর্বরতাও নষ্ট হচ্ছে। আইনের প্রয়োগ না থাকায় এভাবে যত্রতত্র ভাটা স্থাপন করায় হাইড্রলিক্স ও ট্রাক গাড়ির চাপে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ছোট ছোট রাস্তা অল্পতেই ভেঙ্গে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পরছে। সেই সঙ্গে সরকারের লোকশান হচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।

জানতে চাইলে উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি শাহজাহান আলী বলেন, 'লাইসেন্স না থাকলেও হাইকোর্টে রিট করে ভাটা পরিচালনা করা হচ্ছে।' বনের কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন ইটভাটা মালিক সমিতির পক্ষে থেকে সব মালিককে কাঠ দিয়ে ইট না পোড়ানোর জন্য বলা হলেও তার নিষেধ মানছে না।

কৃষি জমির টপ সয়েল ইট ভাটায় কেটে নেওয়ার বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলশাদ জাহান জানান, বিষয়টি ইউএনও'কে জানানো হয়েছে। অচিরেই অভিযান পরিচালনা করা হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরতিজা হাসান জানান, ইতোমধ্যে আমরা কয়েকটি ইট ভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করেছি। ভবিষ্যতে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে