সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

আজমিরীগঞ্জে বিষমুক্ত সবজি ও পাহাড়ে ব্রোকলি চাষে সাফল্য

স্বদেশ ডেস্ক
  ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে বিষমুক্ত সবজি হাতে কৃষক -যাযাদি

হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে বিষমুক্ত সবজি চাষ করে সফলতা পেয়েছেন কৃষক। এদিকে রাঙামাটির লংগদুর পাহাড়ি এলাকায় ব্রোকলি চাষে সাফল্য পেয়ে কৃষকদের মধ্যে তা চাষে আগ্রহ বাড়ছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-

আজমিরীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, আজমিরীগঞ্জের বাসিন্দা উপজেলার তোফাজ্জল হোসেনের পেশা কৃষি। অভাব-অনটনের সংসারে জন্ম তার। প্রাইমারি গন্ডি পেরিয়েই বাবার সঙ্গে নেমে পড়েন জীবন সংগ্রামে। ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় প্রতিবছরই চাষ করেন বোনা আমান ধান, যার আয় দিয়ে তার কোনো রকম জীবিকা নির্বাহ করত তার পরিবার।

তোফাজ্জল হোসেন ২০০৪ সালে ৩৬ বিঘা বোনা আমন আবাদ করেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ পানি বেড়ে যাওয়ায় অন্য কৃষকদের সঙ্গে তারও জমি তলিয়ে যায়। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েন। অবশেষে বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ধানের ফসল বাদ দিয়ে সবজি চাষে মনোযোগী হন। এতে ধরা দেয় সফলতা। পরিবারে ফিরে আসে সচ্ছলতা।

তোফাজ্জল হোসেন আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শিবপাসা ইউনিয়নের পশ্চিমবাগ কদমতারা গ্রামের আব্দুর রহমান মিয়ার ছেলে। বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করে তিনি দারিদ্র্যকে জয় করেছেন। তার জমিতে হওয়া ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, কাঁচামরিচ, বেগুন ও মুলা লাউ যাচ্ছে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। তোফাজ্জল হোসেনকে অনুসরণ করে এলাকার ইস্টার মিয়া, আল আমিন, নাসির উদ্দিন ও মতিউর রহমানসহ অনেকেই বিষমুক্ত সবজি চাষে সফলতা পেয়েছেন।

তোফাজ্জল হোসেন জানান, ২০০৪ সালের ৩৬ বিঘা বোনা আমন ধান চাষের লোকসান গোনার পর সবজি চাষ করেন। প্রথম বছরেই ব্যাপক উৎপাদন হয়। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

তিনি আরও জানান, চলতি বছর ৮৪ শতক জমিতে ফুলকপি, ২৮ শতক জমিতে বাঁধাকপি, ৫৬ শতক জমিতে মুলা, মালচিং পদ্ধতিতে ২১ শতকে বেগুন, ৫৬ শতকে টমেটো এবং একই পরিমাণ জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। এসব জমির ইজারা বাদে খরচ হয়েছে প্রায় ৪ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখ টাকার সবজি বিক্রি করেছেন। আরও ৬-৭ লাখ টাকার সবজি বিক্রি হবে বলে আশা করছেন।

আজমিরীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফে আল মুঈজ জানান, এ উপজেলা মূলত ধান প্রধান অঞ্চল। তবে এবার ৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা মিলে আলু, মিষ্টি আলু, বেগুন, কাঁচামরিচ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটোসহ নানা জাতের সবজি চাষ হয়েছে প্রায় ১৯০ হেক্টর। সফল কৃষক তোফাজ্জল হোসেন প্রসঙ্গে কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ওই সবজি চাষির আগ্রহ দেখে তাকে প্রদর্শনীর আওতায় আনা হয়েছে। তাকে দেখে এলাকার অন্য কৃষকও সবজি চাষে আগ্রহী হয়েছেন উঠছেন।

লংগদু (রাঙামাটি) প্রতিনিধি জানান, অন্য ফসলের চেয়ে খরচ কম এবং বেশি লাভজনক হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে ব্রোকলি চাষ করে সাফল্য পাচ্ছেন পাহাড়ের কৃষকরা। এজন্য দিন দিন পার্বত্য জেলার রাঙামাটিতে অন্য সবজির পাশাপাশি ব্রোকলি চাষের দিকে ঝুঁকছেন অনেক কৃষক। কৃষকদের আগ্রহ দেখে ব্রোকলির উৎপাদন সম্প্রসারণে কৃষি বিভাগ এরই মধ্যে নিয়েছে নানা উদ্যোগ।

জানা গেছে, ক্যানসার প্রতিরোধী এই সবজি উন্নত বিশ্বে জনপ্রিয় হলেও দেশে এখনো পর্যন্ত খুব একটা জনপ্রিয় নয়। তবে ধীরে হলেও খাদ্য তালিকায় স্থান করে নিচ্ছে সবজিটি। প্রথম দিকে এই সবজি চাষে কৃষকদের তেমন আগ্রহী না থাকলেও স্থানীয় কৃষি বিভাগের উদ্যোগে গত বছর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে চাষের পর মিলেছে সাফল্য। এ বছর রাঙামাটির লংগদুতে বাণিজ্যিকভাবে পাহাড়ি জমিতে ব্রোকলির চাষ করা হয়েছে।

এই সবজি চাষে কৃষি বিভাগের সহায়তায় কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ ও প্রয়োজনীয় সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন লংগদু উপজেলা কৃষি অফিসার জাহিদুল ইসলাম ও গাউসপুর-রাঙ্গীপাড়া বস্নকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রওশন জাহান বিপাশা।

উপজেলার বগাচতর ইউনিয়নের গাউসপুর এলাকার ব্রোকলি চাষি মোশতাক আহমেদ দুলন বলেন, ইউটিউব দেখেই ব্রোকলি চাষে উদ্বুদ্ধ হন। যদিও এ অঞ্চলে এটা খুব বেশি পরিচিত সবজি না। তাই ব্রোকলির বাজার নিয়ে প্রথম দিকে সন্দেহ ছিল। এক একর জমিতে ৪ হাজার ব্রোকলির চারা লাগান। এতে ৪০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে, তবে চাহিদা বাড়ায় এবং ভালো দাম পাওয়ায় লাখ টাকার ওপর বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।

তিনি আরও বলেন, ৯০ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যায়। রোগ বালাই ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় এটি অনেকটাই কীটনাশকমুক্ত। বিঘাপ্রতি উৎপাদন খরচ ৩০ হাজার টাকার মতো। যা প্রতি কেজি ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি করে আয় হয় ৮০ হাজার টাকার অধিক।

অন্য সবজিতে সফলতা পাওয়ার পর বাণিজ্যিকভাবে ব্রোকলির চাষ করেছিলেন কৃষক জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, প্রথমদিকে ব্রোকলিতে কাঙ্ক্ষিত সফলতা পাননি। তারপরও হাল ছাড়েননি। এ সময় পাশে এসে দাঁড়ায় উপজেলা কৃষি বিভাগ। এরপরই আসে সফলতা। তা দেখে উদ্বুদ্ধ হন স্থানীয় কৃষকরা। এরপর থেকেই এখানে বাণিজ্যিকভাবে ব্রোকলির চাষাবাদ শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, পার্বত্যাঞ্চলে কৃষকের মধ্যে সম্ভাবনাময় এবং নতুন সবজি হিসেবে সাড়া ফেলেছে ব্রোকলি। অনেক কৃষকই এই সবজি চাষের জন্য আমার কাছে আসছেন পরামর্শ নিতে। ভোক্তা পর্যায়ে এর চাহিদা যেমন বেড়েছে এবং কৃষকরা যেভাবে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন তাতে আগামীতে এ সবজি চাষে বিপস্নব ঘটবে।

উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা রতন চৌধুরী বলেন, হ্রদ ও পাহাড় বেষ্টিত লংগদুর মাটি ও আবহাওয়া ব্রোকলি চাষের জন্য উপযোগী। কৃষকদের এই সবজি চাষে উদ্বুদ্ধকরণসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হচ্ছে। আর নতুন সবজি হিসেবে এর বাজারজাতকরণেও নেওয়া হয়েছে যথাযথ উদ্যোগ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, এ সবজি চাষ একদিকে চাষিদের জন্য যেমন ইতিবাচক, তেমনি পুষ্টির চাহিদা পূরণেও সহায়ক। আমাদের প্রত্যাশা আগামীতে এ সবজির চাষ যেমন বাড়বে তেমনি এই সবজির চাষ সম্প্রসারণই এখন আমাদের কার্যক্রম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে