সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকা দিয়েও চাকরি না পাওয়া ১৪ প্রার্থীর আহাজারি

আলোর মুখ দেখেনি কমিটির তদন্ত রিপোর্ট
জোবায়েদ মলিস্নক বুলবুল, টাঙ্গাইল
  ৩০ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকা দিয়েও চাকরি না পাওয়া ১৪ প্রার্থীর আহাজারি

টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে চাকরির জন্য ১৪ প্রার্থী ৪৯ লাখ টাকা বিশ্ববিদ্যালয় গেস্ট হাউসের সহকারী রেজিস্ট্রারের কাছে দিয়েও চাকরি না পেয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। এ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা ও অঘটন ঘটায় বিষয়টি নিষ্পত্তির লক্ষ্যে প্রকৃত ঘটনা জানতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আলোর মুখ দেখেনি।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছোটখাট পদে জনবল নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় গেস্ট হাউসের সহকারী রেজিস্ট্রার মুহা. মুজাম্মেল হোসাইন, গেস্ট হাউসের বাবুর্চি জাহিদ কাজী এবং হিসাব অফিসের উপ-পরিচালক সত্য সাহার সমন্বয়ে চক্রটি বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে ৪৯ লাখ টাকা সংগ্রহ করেন। পরে ওই টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেন। যাদের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ১৪ জনের নাম পাওয়া গেছে। এর মধ্যে শফির কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা, সাগরের কাছ থেকে আট লাখ, রাসেলের কাছ থেকে পাঁচ লাখ, ফেরদৌসীর কাছ থেকে সাড়ে তিন লাখ, হানিফার কাছ থেকে সাড়ে তিন লাখ, নাজমার কাছ থেকে আড়াই লাখ, মিতুর কাছ থেকে দুই লাখ, লাল মিয়ার কাছ থেকে ছয় লাখ, শাহনাজের কাছ থেকে দেড় লাখ, ফারুকের কাছ থেকে চার লাখ, হাসানের কাছ থেকে দুই লাখ, মামুনের কাছ থেকে চার লাখ, হৃদয়ের কাছ থেকে এক লাখ এবং এতিমখানার জনৈক খালার কাছ থেকে এক লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও চাকরি না হওয়ায় প্রার্থীরা তাদের টাকা ফেরত চাইতে চাপ দেন। ব্যাপক অসন্তোষের মধ্যে চাপে পড়ে তিন ব্যক্তিকে কিছু অংশ ফেরত দেওয়া হয়। চাপ সৃষ্টি করায় শফিকে পাঁচ লাখের মধ্যে চার লাখ, সাগরকে আট লাখের মধ্যে ছয় লাখ এবং ফেরদৌসীকে সাড়ে তিন লাখের মধ্যে দুই লাখ টাকা ফেরত দেওয়া হয়। কয়েক ব্যক্তি বিক্ষুব্ধ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউসের বাবুর্চি জাহিদ কাজীকে মারধর করে। বাধ্য হয়ে গেস্ট হাউসের বাবুর্চি জাহিদ কাজী বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের পরিচালকের মাধ্যমে গত বছরের ২২ অক্টোবর রেজিস্ট্রারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রক্টর প্রফেসর ডক্টর মীর মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করে। দীর্ঘদিনেও ওই কমিটির তদন্তের রিপোর্ট এখনো আলোর মুখ দেখেনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক হোসেন জানান, তার বোন আছমাকে চাকরি দেওয়ার জন্য চার লাখ টাকা গেস্ট হাউসের সহকারী রেজিস্ট্রার মুজাম্মেল হোসাইনকে দেন। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি হলেও কমিটি শুধুমাত্র তদন্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটোকপি মেশিন অপারেটর ফেরদৌসী আক্তার জানান, তার ছোট বোন শাহিদা সুলতানাকে অ্যাডহকভিত্তিতে উচ্চমান সহকারী পদে চাকরির জন্য ১২ লাখ টাকার চুক্তিতে প্রথম পর্যায়ে পাঁচ লাখ এবং তার ভাগ্নি জামাই আবদুলস্নাহকে পিয়ন পদে চাকরির জন্য সাত লাখ টাকার চুক্তিতে প্রথম পর্যায়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা দেন। টাকাগুলো তার কাছ থেকে সহকারী রেজিস্ট্রার মুজাম্মেল হোসাইন নেন। চাকরি না দেওয়ায় বোন শাহিদার পাঁচ লাখ এবং ভাগ্নি জামাই আবদুলস্নাহর জন্য নেওয়া টাকা থেকে দুই লাখ টাকা ফেরত দিয়েছেন। তিনি এখনো দেড় লাখ টাকা ফেরত পাননি।

তিনি জানান, এ বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি গত ডিসেম্বরে তাকে সাক্ষাৎকারে ডাকলে তিনি কমিটির সামনে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন।

টাঙ্গাইল পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূরুল ইসলাম রকি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের পিয়ন-আয়াসহ নানা ছোটখাট পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে গেস্ট হাউসের সহকারী রেজিস্ট্রার মুজাম্মেল হোসাইন, বাবুর্চি জাহিদ কাজীসহ একটি চক্র অনেকের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এখন চাকরি না পেয়ে অনেকেই জনপ্রতিনিধি হিসেবে প্রতিকার পেতে তার কাছে আসছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউসের বাবুর্চি জাহিদ কাজী জানান, সব টাকা গেস্ট হাউসের সহকারী রেজিস্ট্রার মুজাম্মেল হোসাইন নিয়েছেন। প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে তিনি অনেকের বাসায়ই তাকে নিয়ে গিয়েছেন। অনেক সময় তাকে দিয়ে টাকা আনিয়েছেন। এখন চাকরি দিতে না পেরেও টাকা ফেরত দিচ্ছেন না। ৩-৪ জনের টাকা ফেরত দিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় গেস্ট হাউসের সহকারী রেজিস্ট্রার মুজাম্মেল হোসাইন জানান, তিনি কাউকে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন না। কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে কাউকে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশও করেননি। তিনি বাবুর্চি জাহিদ কাজীর কাছে পাঁচ লাখ টাকা পাওনা রয়েছেন। ওই টাকা যাতে না দিতে হয় সে জন্য তিনি নানা ধরনের উদ্ভট কথা বলে বেড়াচ্ছেন।

তদন্ত কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ খাদেমুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। চলমান বিষয়ে আগেই কোনো বক্তব্য দেওয়া সমীচীন নয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর ফরহাদ হোসেন জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। তবে কারও যদি টাকা বেশি হয় এবং কাউকে দিয়ে দেয়- তাহলে তার কিছু করার নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে