শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
খরচের চিন্তায় হাসি ম্স্নান

ডানা মেলেছে চর্মকার পিতার ছেলে অপুর ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর
  ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
বাবা-মায়ের পাশে মেডিকেলে চান্স পাওয়া যশোরের অপু দাস -যাযাদি

কঠোর দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রাম করেও সন্তানকে চিকিৎসক বানানোর স্বপ্ন ছিল চর্মকার অসিত দাসের। সেই স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপে ছেলে অপু দাস উত্তীর্ণ হয়েছেন এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায়। ৭৫ নম্বর পেয়ে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিনি। শত বাধা-বিপত্তিকে জয় করে অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর কঠোর পরিশ্রমের কাছে হার মেনেছে দরিদ্রতা। কিন্তু তারপরও চিন্তিত অসিত দাস। ছেলেকে ডাক্তারি পড়ানোর খরচ যোগাবেন কীভাবে

যশোরের মণিরামপুর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা খানপুর ঋষি পলস্নীর অসিত দাস ও সাধনা দাসের ছেলে অপু দাস চলতি শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। অসিত দাস চরম দরিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে সড়কের পাশে চটের ওপর বসে জুতা সেলাই ও কালির কাজ করেন। জুতা সেলাইয়ের প্রতিটি বুবনে লুকিয়ে রাখতেন ছেলেকে চিকিৎসক বানানোর স্বপ্ন। আজ সেই চিকিৎসক হওয়ার প্রথম সোপান ভর্তিযুদ্ধে উৎরে গেছে ছেলে অপু দাস।

অপুর বাবা অসিত দাস জানান, দুই ছেলের মধ্যে অপু দাস ছোট। বড় তিতাস দাস কেশবপুর সরকারি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ছে। পাশাপাশি মণিরামপুর পৌরশহরের একটি ইলেকট্রিক দোকানে মেকানিকের কাজ করে। আর ছোটবেলা থেকেই অদম্য মেধাবী অপু দাস। পড়ালেখার প্রতি প্রবল আগ্রহ দেখে বাবা-মা রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা হাড়ভাঙ্গা খাটুনি করে ছেলেকে লেখাপড়া শেখাচ্ছেন।

অপুর বাবা ছোটবেলা হতেই জুতা সেলাই আর কালির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রায় ৪০ বছর আগে চরম দরিদ্রতার কারণে কাজের সন্ধানে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা হতে মণিরামপুরের বালিয়াডাঙ্গা খানপুর গ্রামে আসেন। সাধনা দাসকে বিয়ে করে এই গ্রামেই থেকেই যান। রাজারহাট-চুকনগর মহাসড়কের পৌরশহরের রাজগঞ্জ মোড়ের পাশে চটের ওপর বসে জুতা সেলাই ও কালির কাজ করেন। শাশুড়ির দেওয়া তিন শতক জমির ওপর কোনো রকম ঘর বেঁধে বসবাস করছেন।

অপুর বাবা অসিত দাস বলেন, 'জুতা সেলাই ও কালি করে যা আয় হয়, তা দিয়েই চলে সংসার। তারপর ছেলেদের পড়ালেখা শিখাচ্ছি। শুনেছি ডাক্তারি পড়তি মেলা (বেশি) খরচ। এহন এই টাহা কোনে পাবানে, তাই নিয়ে চিন্তায় আছি।'

অপু দাস বলেন, 'ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হব। দুঃখী-অসহায় মানুষের সেবা করব। ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু সামনের দিনগুলো কীভাবে যাবে। দরিদ্র বাবা-মা কীভাবে আমার ডাক্তারি পড়ার খরচ জোগাড় করবে, তা নিয়ে মহাচিন্তায় আছি।'

অপুর শিক্ষক অধ্যাপক মোহাম্মদ বাবুল আক্তার বলেন, কঠোর অধ্যবসায় আর ইচ্ছা শক্তি দিয়ে সব কিছু জয় করা যায়, তার উদাহরণ অপু দাস। ডাক্তারি পড়তে তার সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে