সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১

'সাইলেজ' উৎপাদন করে সফল গৌরীপুরের শামীম

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
  ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
'সাইলেজ' উৎপাদন করে সফল গৌরীপুরের শামীম

ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর শহরে কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করে জীবিকা নির্বাহ করতেন যুবক শামীম আলভী। কিন্তু করোনকালে কোচিং বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেকার হয়ে পড়েন তিনি। বেকার শামীম হঠাৎ একদিন ইউটিউবে (পশু খাদ্য) সাইলেজ উৎপাদন দেখে যোগাযোগ করেন স্থানীয় উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস ও ভেটেনারি হাসপাতালে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়ে ভুট্টা চাষ করে কর্ন সাইলেজ (পশু খাদ্য) উৎপাদন শুরু করেন তিনি। ভুট্টা উৎপাদন শুরুর দিকে কঠিন হলেও এখন তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজ উপজেলাসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় একটি পরিচিত নাম।

২০২২ সালে উপজেলায় ১৭ একর জমি লিজ নিয়ে ভুট্টা আবাদ শুরু করেন শামীম আলভী। ভুট্টার চারা জমিতে রোপণের ৮০ থেকে ৯০ দিনের মাঝে ভুট্টা গাছ কর্ন সাইলেজ করার উপযোগী হয়ে ওঠে। পরে ক্ষেত থেকে ভুট্টা গাছ কেটে খামারেই মেশিনের সাহায্যে প্রক্রিয়াজাত করে প্যাকেটিংয়ের মাধ্যমে বাজারজাত করেন 'সাফিনা সাইলেজ' নামে।

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে সাফিনা সাইলেজের খামার। সেখান থেকে ভুট্টার কর্ন সাফিনা সাইলেজ প্রতি প্যাকেট খুচরা ৬শ' টাকা ও পাইকারি ৫৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়। অনলাইনেও বিক্রি হয় পশুর সুষম খাদ্য এ সাইলেজ। গবাদি পশুর খাদ্য হিসাবে সাইলেজের চাহিদা থাকায় ২০২২ সালে প্রথমবার ভুট্টা চাষ করে ছয় মাসের মধ্যেই বিনিয়োগের ১২ লাখ টাকা উঠিয়ে লাভের মুখ দেখেন শামীম আলভী। এ বছর সাইলেজ উৎপাদনের জন্য ভুট্টা আবাদ করেছেন ৫০ একর জমিতে। স্থানীয় খামারিদের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি এখন তিনি অনলাইনে সারাদেশে সাইলেজ বিক্রি করে বিশাল অংকের টাকা আয় করছেন। তিনি প্রতি মাসে ২০ থেকে ২৫ টন সাইলেজ বিক্রি করে থাকেন।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. হারুন-অর- রশিদ বলেন, সাইলেজ মূলত সবুজ ঘাস সংরক্ষণ করার প্রক্রিয়া। এ অঞ্চলে শামীম আলভী প্রথমবার বাণিজ্যিকভাবে ভুট্টার সাইলেজ তৈরি করে অনলাইনে বিক্রি করে লাভের মুখ দেখছেন। সাইলেজ গবাদি পশুর দুধ ও মাংস বৃদ্ধি করে। তার দেখাদেখি অন্য বেকার যুবক এবং উদ্যোক্তারা সাইলেজ তৈরিতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। কেন্দুয়ার জান্নাত ডেইরি এন্ড ফ্যাটেনিংয়ের পরিচালক রোকন বলেন, অনেক উদ্যোক্তা পণ্যের মানের চেয়ে ব্যবসার চিন্তা করেন বেশি। তবে শামীম ব্যবসা করার চেয়ে পণ্যের (সাইলেজ) গুণগত মান ভালো রেখেছেন। তার সাইলেজের মান অত্যন্ত ভালো। এটা পশুকে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রম্নত খেয়ে শেষ করে ফেলে।

গৌরীপুর পৌর শহরের খামারি মীম বলেন, 'বোরো মৌসুমে আমাদের জমিতে ধান চাষ হওয়ায়, মাঠে গরু চড়ানো সম্ভব হয় না এবং ঘাসের সংকট দেখা দেয়। এ সময় পশুর সুষম খাদ্য হিসেবে শামীমের খামার থেকে আমরা সাশ্রয়ী মূল্যে সাইলেজ কিনি।'

উদ্যোক্তা শামীম আলভী বলেন, 'করোনায় কোচিং সেন্টার বন্ধ হলে ব্যাপক অর্থ সংকটে পড়ি। তবে সাইলেজ বিক্রি করে এখন আমি স্বাবলম্বী। গত ছয় মাসে কয়েক ধাপে সাইলেজ বিক্রি করে বিনিয়োগের টাকা বাদে বেশ লাভ হয়েছে আমার।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে