গতকাল সারাদেশে একযোগে প্রকাশিত হয়েছে এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল। এবারের ফলাফলে দেখা যায় ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা ভালো করেছে। গত সাত বছর ধরে মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে ভালো করছে। অন্যদিকে এবার সার্বিকভাবে ফলাফল ভালো করেছে শিক্ষার্থীরা। তবুও সারাদেশে ৫১ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কেউ পাশ করতে পারেনি। অন্যদিকে অনেক শিক্ষার্থীও ফল খারাপ করেছে। ফল খারাপ করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১২ জন আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এর মধ্যে ৮ জন মারা যায়। বাকীরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নোয়াখালী, নীলফামারি, ঠাকুরগাঁও, ময়মনসিংহ, ঝিনাইদহ, গোপালগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মাগুরা জেলায় এসব ঘটনা ঘটেছে। একই ঘটনায় আরও ৪ শিক্ষার্থী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।
আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদে বিস্তারিত :
নোয়াখালী থেকে স্টাফ জানান, জেলার সদর উপজেলায় এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করায় এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। রোববার (১২ মে) দুপুর সোয়া ১টার দিকে উপজেলার নোয়াখালী পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সল্যা ঘটাইয়া গ্রামের কালিতারা বাজার-সংলগ্ন আলী আজম বেপারী বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। একই দিন রাতে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।নিহত তানজিনা আক্তার ঝুমি (১৬) নোয়াখালী পৌরসভার সল্যা ঘটাইয়া গ্রামের মো. আব্দুল করিমের মেয়ে। তিনি স্থানীয় কালিতারা মুসলিম গার্লস একাডেমি থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন।
নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, জেলার সৈয়দপুরে রাফসান জানি এমিল (১৬) নামের এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার (১২ মে) দুপুরে উপজেলার বাঙালিপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রাফসান একই এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে। এ বছর স্থানীয় লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় রাফসান। পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ার আশা করেছিল সে। কিন্তু প্রকাশিত ফলাফলে জিপিএ ৪ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট আসায় কান্নাকাটি করতে থাকে। একপর্যায়ে সে ঘরে গিয়ে গলায় ফাঁস দেয়।
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান, জেলার হরিপুরে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় মিতু (১৫) নামের এক স্কুল ছাত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। রোববার (১২ মে) দুপুরে নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। তিনি উপজেলার কামারপুকুর গ্রামের মুসা আলীর মেয়ে ও কামারপুকুর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী। মিতুর পিতা মুসা জানান, ৩ ছেলে মেয়ে মধ্যে মিতু তাদের দ্বিতীয় সন্তান। পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর সে আত্মহত্যা করে।
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, জেলার হরিণাকুন্ডু উপজেলার সাবেক বিন্নী গ্রামে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় নুপুর আকতার (১৬) নামের এক কিশোরী আত্মহত্যা করেছেন। তিনি ওই গ্রামের আসাদুল ইসলামের মেয়ে। এবার উপজেলার দুর্লভপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। দুর্লভপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেন বলেন, ‘মেয়েটি শান্ত প্রকৃতির ছিল। তার আত্মহত্যার খবর শুনে শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা মর্মাহত।’
ময়মনসিংহ ব্যুরো জানায়, জেলার ধোবাউড়া উপজেলায় এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে শোহেদা আক্তার (১৭) নামের এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এ ঘটনায় তার সহপাঠী ও পরিবারের স্বজনদের মধ্যে আহাজারি সৃষ্টি হয়েছে। রোববার (১২ মে) দুপুরে উপজেলার পুরাকান্দলিয়া ইউনিয়নের বতিহালা গ্রামে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। শোহেদা আক্তার স্থানীয় বতিহালা গ্রামের ছমেদ আলীর মেয়ে। তিনি বতিহালা উচ্চবিদ্যালয়ের ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন।
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, এসএসসি পরীক্ষায় এক বিষয়ে ফেল করায় প্রিন্স হাসান মাহাতী নামে এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। রোববার (১২ মে) পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গোপালগঞ্জ শহরের মোহাম্মদ পাড়ায় বোনের বৈশাখী বেগমের ভাড়া বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। প্রিন্স সদর উপজেলার মেরী গোপিনাথপুর গ্রামের শরীফ মহসিন আলী বেল্টুর ছেলে। তিনি এ বছর মেরী গোপিনাথপুর খন্দকার শামসুদ্দিন স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন।
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, জেলায় এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় এক কিশোরী বিষ পান করে আত্মহত্যা করেছেন। একই কারণে পৃথক ঘটনায় বিষ পান করে হবিগঞ্জ জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি আছেন আরও দুই কিশোর। হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের চিকিৎসক বিভারবী দাস জানান, রোববার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার পর বিষ পান করার ঘটনায় তিন কিশোর-কিশোরীকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন পরিবারের সদস্যরা। এর মধ্যে মাইশা আক্তার (১৭) নামে এক কিশোরীকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। আর অপর দুই কিশোরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদেরকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
অপরদিকে, বাহুবল উপজেলার মহব্বতপুর গ্রামের কিশোর মেহেদী হাসান স্থানীয় একটি মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয়। সে একটি বিষয়ে ফেল করায় বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়।
মাগুরা প্রতিনিধি জানান, এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় কথা সাহা (১৬) নামের এক শিক্ষার্থী চতুর্থতলা থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেছে। রোববার (১২ মে) দুপুরে মাগুরা জেলা শহরে রিমপি সাহা নামে এক আত্মীয়ের বাসায় বসবাসরত চতুর্থতলার ছাদ থেকে সে লাফিয়ে পড়ে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে, পরে ফরিদপুর মেডিকেলে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ বিকেল চারটার দিকে সে মারা যায়। কথা সাহা মাগুরার মহম্মদপুরের বিনোদপুর গ্রামের রাজেশ সাহার মেয়ে। সে মাগুরার মহম্মদপুরের বিনোদপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশ নিয়েছিল। রোববার প্রকাশিত ফলাফলে জানা যায় সে অংক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে।
যাযাদি/ এস