উপজেলা প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় রাজশাহীর পুঠিয়ায় তিন ফসলিজমিতে অবৈধভাবে চলছে অবাধে পুকুর খনন। আর এই পুকুর খননের মাটি পরিবহণে ধ্বংস হচ্ছে কয়েক কোটি টাকা, খরচ করে নির্মিত সরকারি সড়ক-মহাসড়ক। প্রশাসনের নাকের ডগায় এই ধ্বংসযজ্ঞ চলায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। বার বার অভিযোগ করেও ফল পাচ্ছে না তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলার শীলমাড়িয়া ইউনিয়নের কাত্তিকপাড়া বিলে অবাধে দিন-রাত চলছে পুকুর খননের মহাযজ্ঞ। আর পুকুরের খননের সেই মাটি যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। এই মাটি পরিবহণে ব্যবহৃত হচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকায় নির্মিত মহাসড়ক, সড়ক ও গ্রামীণ পদ। ফলে মাটিবাহী ভারী যান চলাচলের কারণে সড়ক দেবে গিয়ে ভেঙে যাচ্ছে এসব সড়ক। এ ছাড়া পরিবহণের সময় মাটি পড়ে সড়কগুলো চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। এসব নিয়ে এলাকাবাসী একাধিকবার অভিযোগ করলেও উপজেলা প্রশাসন নীরব রয়েছে। প্রশাসনের রহস্যজনক ভূমিকায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
স্থানীয় একাধিক সূত্রমতে, আব্দুল লতিফ নামে বাগমারা উপজেলার রামগুয়া গ্রামের এক প্রভাবশালী পুকুর খনন সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। তার নেতৃত্বেই এই এলাকায় চলছে কয়েকটি পুকুর খননের মহাযজ্ঞ। বিশেষ করে স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এই পুকুর খনন সিন্ডিকেট। ফলে আদালত বা দেশর প্রচলিত কোনো আইন-কানুনকে তোয়াক্কা করেন না আব্দুল লতিফ ও তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা। এমনকি জমির মালিককে না জানিয়ে জোরপূর্বক রাতারাতি পুকুর খনন করছেন আব্দুল লতিফ।
মোসলেম নামে এক কৃষক জানান, যেখানে ১০ জনের জমি আছে সেখানে ছয়-সাতজনের কাছ থেকে লিজ নিচ্ছে। বাকিরা জমি দিতে রাজি না হলেও রাতারাতি তাদের জমিতেও পুকুর খনন হয়ে যাচ্ছে। বাধা দিতে গেলে পিস্তল ধরে ভয় দেখানো হয়। ফলে ভয়ে কেই কিছু বলতে সাহস পায় না।
এ ব্যাপারে জানতে আব্দুল লতিফের সঙ্গে কথা বলতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার একেএম নূর হোসেন নির্ঝর বলেন, অবৈধভাবে পুকুর খননের বিরুদ্ধে অভিযোগ অব্যাহত রয়েছে। যখন যেখানে পুকুর খননের খবর পাওয়া যাচ্ছে সেখানে অভিযান করা হচ্ছে। এর আগে কয়েকটি অভিযান করে খননকারীদের জরিমানাও করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
পুঠিয়া (রাজশাহী) প্রতিনিধি জানান, রাজশাহীর পুঠিয়ার পূর্ব বিলামাড়িয়া মাঠে ফসলির জমিতে অবৈধভাবে ভেকু মেশিন দিয়ে পুকুর খনন করা হচ্ছে। এক শ্রেণির দালাল এই পুকুর খনন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গোপন চুক্তি থাকার কারণে প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
জানা গেছে, রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলার জিউপাড়া ইউনিয়নের পূর্ব বিলমাড়িয়া মাঠে বেলালেরসহ প্রায় ১০০ বিঘা ফসলি জমিতে জমির শ্রেণি পরিবর্তন না করেই এই পুকুর খনন করছে দালালরা। পুঠিয়া দুর্গাপুর আসনের সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী আব্দুল ওয়াদুদ দারার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ফসলি জমিতে পুকুর খনন করা যাবে না। তবে পুকুর খননকারীরা পুকুর খনন করছে। আর পুকুর খননের মাটি ট্রাক্টর দিয়ে আনা নেওয়ার ফলে এলাকার রাস্তাঘাট নষ্ট হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে ধুলাবালিতে এলাকার পরিবেশ। এলাকাবাসীকে চরম দুর্র্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি এলাকাবাসীর।
বিলামড়িয়ার বেলাল জানান, 'আমি প্রথমে পুকুর খনন শুরু করি। পরবর্তীতে মোস্তাক ও ফারুক এই পুকুর খননের কাজ করাচ্ছে।'
এ ব্যাপারে পুঠিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি দেবাশিস বসাক জানান, 'আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।