শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১

ভাঙ্গায় কালো সোনা চাষে কৃষকদের মুখে সাদা হাসি

ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
  ১৯ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় চাষ হওয়া পেঁয়াজ বীজ -যাযাদি

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় মাঠে মাঠে কদম ফুলের মতো ফুটে রয়েছে পেঁয়াজ বীজের ফুল। মনোমুগ্ধকর এ দৃশ্য দেখতে অনেকেই ভিড় জমাচ্ছেন মাঠে। 'কালো সোনা' নামে খ্যাত পেঁয়াজের বীজের চাষিদের মুখে এ বছর আনন্দের হাসি বিরাজ করছে।

অগ্রহায়ণ মাসে পেঁয়াজ বীজের চাষ শুরু হয়। ফুল পাকে চৈত্র মাসে। কিছুদিন পরই পাকতে শুরু করবে এ ফুলের বীজ। এখন মাঠে গেলে দেখা যায় বাতাসে দুলছে পেঁয়াজ দানার সাদা রঙের ফুলগুলো। এগুলো পেকে গেলে ভেতরে কালো রঙের বীজ পাওয়া যাবে। এ বীজ কৃষকরা কালোসোনা বলে থাকেন। ১ কেজি পেঁয়াজ দানা সর্বোচ্চ ৫০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন কৃষকরা। পেঁয়াজ বীজের দাম, উৎপাদন ও চাহিদা ভেদে মণপ্রতি ৮০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

ভালোমানের পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনে জেলার মধ্যে ভাঙ্গা দেশব্যাপী প্রসিদ্ধ। অন্য কোনো জেলায় পেঁয়াজ দানা তেমন উৎপাদন হয় না। তাই পেঁয়াজের দানা কিনতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভাঙ্গায় আসেন কৃষকরা। হরেক রকমের পেঁয়াজের চাষ হয় এ উপজেলায়। এর মধ্যে দানা পেঁয়াজ, মুড়িকাটা পেঁয়াজ ও হালি পেঁয়াজ অন্যতম।

ভাঙ্গায় এ বছর রেকর্ড পরিমাণ পেঁয়াজ বীজের আবাদ হয়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ৪৪৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ করা হয়েছে। আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৩০ হেক্টর জমি। ভালো আবহাওয়া, সুষ্ঠু পরিচর্যা, কৃষি বিভাগের পরামর্শ, উন্নত জাতের বীজ, সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগের ফলে এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

অন্যদিকে গত বছর পেঁয়াজের আকাশচুম্বী দাম এবং পেঁয়াজ বীজের ব্যাপক চাহিদা থাকায় কৃষকরা পেঁয়াজ চাষের প্রতি এ বছর ব্যাপক আগ্রহী হয়েছেন। দাম ভালো হওয়ায় এ ফসলের বীজ যেন কৃষকের কাছে সোনার মতো মূল্যবান পণ্যে পরিণত হয়েছে। এলাকার কৃষকরা এবং তরুণরাও এ বীজ চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। এলাকার বিস্তীর্ণ মাঠ ভরে উঠেছে পেঁয়াজ ফুলে।

ভাঙ্গা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার আলগী ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজের আবাদ হয়। অন্যদিকে দানা পেঁয়াজ বেশি উৎপাদন হয় ঘারুয়া ইউনিয়নে। এ দুই ইউনিয়ন ছাড়াও হামিরদী, তুজারপুর, চান্দ্রা, মানিকদহ ও নাসিরাবাদ এলাকায় ব্যাপক পরিমাণে পেঁয়াজের চাষ করা হয়।

উপজেলার ঘারুয়া ইউনিয়নের চৌকিঘাটা গ্রামের পেঁয়াজ বীজ চাষি শফিউদ্দিন মোলস্না বলেন, তিনি এ বছর ৫ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজ আবাদ করেছেন। গত বছর সফলতার পর এ বছরও চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।

ঘারুয়া গ্রামের কৃষক মোস্তফা মোলস্না বলেন, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, পাংশা, পাবনাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এখানে পেঁয়াজ চাষিরা পেঁয়াজ দানা কিনতে আসেন। তাদের পেঁয়াজ দানা গুণে ও মানে দেশের অন্য অঞ্চলের তুলনায় অনেক ভালো।

তিনি আরও বলেন, পেঁয়াজ দানা উৎপাদনে লাভ হলেও খরচ অনেক বেশি। এক বিঘা জমিতে দিনমজুর, পানি, সারসহ অন্য খরচ মিলিয়ে প্রায় ৬০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। ভালো ফলন হলে তিন থেকে চার মণ পেঁয়াজ দানা পাওয়া যায়। উৎপাদনের ওপর ভিত্তি করে পেঁয়াজ বীজের দাম নির্ধারিত হয়। গত বছর এক মণ পেঁয়াজের দানা ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও পরে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। অনেক সময় চাহিদা কম হলে এক মণ পেঁয়াজ দানা ৫০ হাজার টাকায়ও বিক্রি হয়।

ভাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জীবাংশু দাস বলেন, পেঁয়াজের বীজ এ এলাকায় কালোসোনা নামে খ্যাত। কৃষকরা ফসলটি করে লাভবান হয়েছেন বিধায় এ বছর উৎপাদন বাড়িয়েছেন। সেই সঙ্গে সার্বক্ষণিক উৎপাদন কৌশল, রোগ, পোকামাকড় দমন এবং সেচ ব্যবস্থাপনাসহ অন্য আন্তঃপরিচর্যা বিষয়ে তাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে