সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

'আব্বা টাকা পাঠাও, নাইলে আমাকে ওরা মার্ইযা ফেলবে'

সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
  ২৬ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের রামকান্তপুর গ্রামের টিটুল মিয়া জমি বিক্রিসহ ধার-দেনা করে ১২ লাখ টাকাসহ ছেলেকে দালালের হাতে তুলে দেন ইতালি পাঠানোর জন্য। দুই মাস ঘুরতে না ঘুরতেই তার মোবাইল ফোনের ইমোতে কল আসে। ফোনে ওপার থেকে ছেলের আর্তনাদ-'আব্বা আরও ১৫ লাখ টাকা দিতেই হবে, আর নাইলে আমাকে মার্ইযা ফেলবে! আব্বা কবে টাকা দিবা? ওরা আমাকে খাবারও দেয় না।'

গত ১২ দিন ধরে দু-এক দিন পরপর এভাবে মোবাইল ফোনে ইমো নম্বরে কল দিয়ে কৃষক টিটুল মিয়ার কাছে ছেলের মুক্তিপণ হিসাবে টাকা দাবি করছে প্রতারক চক্র। এমন পরিস্থিতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি। বলা হচ্ছে তার ছেলে লিবিয়ায় রয়েছে। আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে, টাকা না দিলে একমাত্র ছেলেকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে জানাচ্ছে ভুক্তভোগী ওই পরিবারটি।

সোমবার সরেজমিনে জানা যায়, ফরিদপুরের সালথা উপজেলার রামকান্তপুর গ্রামের টিটুল মিয়ার একমাত্র ছেলে শাকিল মিয়া (২৪)। একই গ্রামের বাসিন্দা প্রবাসী মুকুল ঠাকুর নামের এক মানব পাচারকারীর প্ররোচনায় ইতালি যাওয়ার পরিকল্পনা করেন শাকিল। পরে তার পরিবার জমি বিক্রিসহ উচ্চহারে সুদের বিনিময়ে ঋণ নিয়ে মুকুলকে ১২ লাখ টাকা দেন। এরপর শাকিলকে সঙ্গে নিয়ে ইতালির উদ্দেশে পাড়ি জমান মুকুল।

শাকিলের বড় বোন বৃষ্টি আক্তার জানান, গত ৪ জানুয়ারি প্রথমে শাকিলকে ভারতে নেওয়া হয়। পরে দুবাই হয়ে ১৪ জানুয়ারি লিবিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে একটি ক্যাম্পে রাখা হয়েছিল বলে জানানো হয়েছিল। কয়েক দিন স্বাভাবিক কথাবার্তাও হয়েছে। কিন্তু গত ১২ দিন ধরে অমানবিকভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। এমনকি খাওয়া-দাওয়া বন্ধ রেখেছে চক্রটি। নির্যাতনের সময় কল দিয়ে শোনানো হচ্ছে বাড়িতে। নির্যাতনকারীরা বাংলায় কথা বলছেন। এখন তার মুক্তিপণ হিসেবে ১৫ লাখ টাকা দাবি করছে চক্রটি।

ভুক্তভোগী শাকিলের বাবা টিটুল মিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, 'আমি এত টাকা কই পাব! যা ছিল শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে, চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ১২ লাখ টাকা জোগাড় করে আগেই তো পাচারকারী মুকুলের হাতে তুলে দিয়েছি। এখন আমি কই যাব?'

এদিকে অভিযুক্ত মানব পাচারকারী মুকুল ঠাকুরের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। মুকুলের ঘরে তালা মারা দেখা যায়। প্রতিবেশীরা জানান মুকুলের বউ ঘরে তালা মেরে কোথায় গেছে আমরা জানি না। এ বিষয়ে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বালী বলেন, 'বিষয়টি আমি জেনেছি। এখন তাকে উদ্ধারের জন্য পরিবার যদি কোনো সহযোগিতা চায়, তাহলে সহযোগিতা করা হবে। ঢাকায় অ্যাম্বাসিতে যোগযোগের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'ওই পরিবার যদি অভিযোগ দেয়, তাহলে দালাল চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

সালথা থানার ওসি মোহাম্মদ ফায়েজুর রহমান বলেন, শাকিলের পরিবারের সঙ্গে পুলিশের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে। ভুক্তভোগীর পরিবার থেকে অভিযোগ দিলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে