বগুড়ার শেরপুরে কেলস্নাপোষী মেলায় কোনো প্রকার টোল বা খাজনা আদায় করা যাবে না মর্মে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু সেটি মানছেন না মেলা আয়োজক কমিটির নেতারা। এমনকি আদালতের সেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের কাছে অবৈধভাবে খাজনা আদায় করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবৈধ খাজনা আদায়ের নামে অর্ধকোটি টাকা চাঁদাবাজির মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে সংঘবদ্ধ একটি অসাধু চক্র। এরই ধারাবাহিকতায় মেলার একাধিক মহাল মোটা অঙ্কের টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে। তবে এসব ইজারার একটি কানাকড়িও সরকারি কোষাগারে জমা না করে চক্রটি পকেটস্থ করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা সদর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে কুসুম্বী ইউনিয়নের কেলস্নাপোষী নামকস্থানে ৪৬৮ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে প্রতিবছরের ন্যায় এবারো গত রোববার থেকে মেলা শুরু হয়েছে। তিন দিনব্যাপী মেলা হলেও সপ্তাহব্যাপী চলে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মেলার প্রধান আকর্ষণ বিভিন্ন ধরনের কাঠের আসবাবপত্র, মিষ্টি-ফলমূল, নানা জাতের বড় বড় মাছ, কুটির শিল্পসামগ্রী, মহিষ ও খাসির মাংস, রকমারি মসলা। দূর-দূরান্ত থেকে আগত বিক্রেতারা এখানে দোকান সাজিয়ে বসেছেন। অসংখ্য ক্রেতা চাহিদা অনুযায়ী পণ্য কিনছেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এভাবেই কেনাকাটা চলছে।
এছাড়া মেলায় একাধিক সার্কাস, নাগোরদোলা, যাত্রা বিচিত্রা, হোন্ডাখেলাসহ বিনোদনের নানা প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে। তবে সেসব প্যান্ডেলে এখনো কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। রাত থেকে অশ্লীল-নাচ-গান চালানো হবে বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন। সেইসঙ্গে মেলার বিভিন্ন স্থানে মেলা দেখতে আসা সহজ সরল সাধারণ মানুষকে জুয়ার নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার আয়োজন দেখা যায়। পাশাপাশি ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছে খাজনার নামে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করছিলেন স্থানীয় একদল যুবক।
খাজনা আদায়কারী ওইসব যুবক জানান, 'মেলার বিভিন্ন মহাল আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে ইজারা দেওয়া হয়েছে। এসব মহাল লাখ লাখ টাকা ডাক হয়েছে। সে অনুযায়ী তাদের কাছে ইজারা নেওয়া মহাল থেকে টাকা আদায় করছেন। তবে মেলার প্রধান মহাল কাঠপট্টি মেলা কমিটি তাদের লোকজন দিয়েই খাজনার নামে চাঁদা আদায় করছে।'
মামলার বাদি বাগড়া চকপোতা গ্রামের বাসিন্দা ওমর ফারুক বলেন, প্রায় পাঁচশ' বছরের প্রাচীন এই কেলস্নাপোষী মেলা। সরকারিভাবে মেলাটি ইজারা দেওয়া না হলেও প্রতিবছরই মেলা কমিটি তাদের ইচ্ছেমাফিক ডাক দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। তাদের এই অবৈধ কর্মকান্ডের জন্য বেশ কয়েক বছর আগে আদালতের দ্বাড়স্থ হই। সম্প্রতি ওই মামলার রায় হয়েছে। আদালত মেলায় যেকোনো ধরনের টোল বা খাজনা আদায়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। আদালতের সেই নির্দেশ অমান্য করেই এবার খাজনার নামে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মেলা কমিটির সদস্য গোলাম মোস্তফা লিটন বলেন, মেলা আয়োজনের জন্য খরচের জন্য কিছু টাকার প্রয়োজন হয়। মূলত সেটি আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু পরবর্তীতে মেলার মহাল হাতবদল হয়ে খাজনা আদায় করা হয়ে থাকে বলে স্বীকার করলেও এখানে চাঁদাবাজির কোনো বিষয় নেই বলে দাবি করেন তিনি।
শেরপুর থানার ওসি রেজাউল করিম রেজা বলেন, তিন দিনের জন্য মেলা বসানোর অনুমতি পেয়েছেন। এর বাইরে আর কোনো কিছুর অনুমতি নেই।
ইউএনও সুমন জিহাদী বলেন, খাজনা আদায়ের বিষয়টি তার জানা নেই। তবে মেলায় সার্কাস-যাত্রার নামে অশ্লীল নাচ-গান ও লটারি চলতে দেওয়া হবে না। এরপরও কোনো প্যান্ডেলে অশ্লীল নাচ-গান করা হলে সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বন্ধ করা হবে।