গাজীপুরের কালীগঞ্জে গত কয়েক বছর ধরে স্থবির হয়ে পড়েছিল জমি কেনাবেচা। আর এর কারণ ছিল জমি হস্তান্তর উৎস কর সংক্রান্ত জটিলতা। অবশেষে স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আখতারউজ্জামানের হস্তক্ষেপে নিরসন হলো জমি হস্তান্তর উৎস কর সংক্রান্ত জটিলতার। এ বছরের ১ জুলাই থেকে কাটাপ্রতি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণে কার্যকর করা হবে। এ খবরে স্থানীয় জমি ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
জানা গেছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, আয়কর আইন ২০২৩ এর ১২৫ ধারায় গেল বছরের অক্টোবরে এক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে বাংলাদেশের কয়েকটি জেলা-উপজেলার জমিকে পাঁচটি শ্রেণিতে ভাগ করে নাল জমির কাঠা প্রতি উৎস কর নূ্যনতম এক লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। পরে জাতীয়ভাবে আইনটি সংশোধনের দাবি তোলা হলে ওই বছরেরই নভেম্বরে কিছু কিছু জায়গায় উৎস কর কমানো হয়। এর মধ্যে ছিল গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলাও, যা পরে ৫০ হাজারে নামিয়ে আনা হয়। কিন্তু তাতেও ভোগান্তি কমছিল না স্থানীয়দের। উৎস কর আরও নিচে নামিয়ে আনা ছিল কালীগঞ্জবাসীর সময়ের দাবি।
সূত্র আরও জানায়, উৎসকর বৃদ্ধির পর থেকে প্রায় ৮ মাস ধরে এভাবেই চলতে থাকে কালীগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কার্যক্রম। এতে প্রায় দুই সহস্রাধিক সাব-কবলা দলিল কম হয়েছে। তা ছাড়া বাড়তে থাকে আম-মোক্তারনামা, হেবা, বিলএওয়াজ হেবা, দানপত্র দলিল রেজিস্ট্রি। ফলে সরকার হারাতে থাকে শত শত কোটি টাকার রাজস্ব। এভাবে চলতে থাকলে মুখথুবড়ে পড়ত রাজস্ব সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন কর্মকান্ড। অন্যদিকে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল জমি কেনাবেচা সংশিষ্ট সবাই।
স্থানীয়রা জানান, বিভিন্ন আবাসনের বালির নিচে পরে তাদের কৃষকের জমি। এদিকে উৎসকর বাড়ানোর কারণে তাদের জমি বিক্রি করতেও পারছেন না। আবার চাষাবাদও করতে পারছেন না। ফলে হজে গমন, চিকিৎসাসেবা, ছেলেমেয়ের উচ্চ শিক্ষা, বিয়ে কিংবা বিদেশে পাঠানোর মতো বিশেষ প্রয়োজনেও বিক্রি করতে না পারায় জমি ছিল কৃষকের গলার কাঁটা। দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
কালীগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রার জাহিদুর রহমান বলেন, জমি রেজিস্ট্রি কম হওয়ায় কমেছে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের আয়। তাই ব্যাহত হচ্ছিল অবকাঠামোগত উন্নয়ন। সেই সঙ্গে বিপাকে পড়েছিল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও। উৎস কর আইন সংশোধনের দাবি ছিল স্থানীয় সর্ব মহলে। প্রথম দফায় তা অর্ধেকে নেমে আসলেও তা কাজে আসছিল না। অবশেষে স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আখতারউজ্জামানের হস্তক্ষেপে নিরসন হলো জমি হস্তান্তর উৎস কর সংক্রান্ত জটিলতার। এ বছরের ১ জুলাই থেকে কাটাপ্রতি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণে কার্যকর করা হবে। এতে স্থানীয় জমি ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে স্বস্তি নেমে এসেছে।
এ ব্যাপারে বীর মুক্তিযোদ্ধা আখতারউজ্জামান এমপি বলেন, স্থানীয় মানুষের জমি হস্তান্তরে উৎসকর সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের বিষয়টি উলেস্নখ করে এ বছরের ২ ফেব্রম্নয়ারি জাতীয় সংসদে বক্তব্য দেই। পরে ১২ মার্চ অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে এ বিষয়ে ডিও লেটার দেই। যার পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যাচাই-বাছাইপূর্বক জমির উৎসকর পুনর্নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে ২৯ মে এটি একটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। সিদ্ধান্তটি শিগগিরই কার্যকর হবে।