বুধবার, ০৭ মে ২০২৫, ২৪ বৈশাখ ১৪৩২
বরাদ্দের টাকা জলে যাওয়ার আশঙ্কা

পূর্বধলায় মুখ থুবড়ে পড়ে আছে 'ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন প্রকল্প'

পূর্বধলা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
  ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
পূর্বধলায় মুখ থুবড়ে পড়ে আছে 'ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন প্রকল্প'

পুরো উপজেলাজুড়ে রাস্তার পাশদিয়ে পোল পুঁতে লাইন টানানো হয়েছে। পোলের গায়ে বস্নকের মাধ্যমে লেখা বিটিসিএল হাওড় বাওর প্রজেক্ট। কোনো কোনো জায়গায় বিদু্যতের পিলারকেই ওই প্রজেক্টের পোল হিসেবে ব্যবহার করতে দেখা গেছে। পোলে টানানো লাইনের তার স্থানে স্থানে ঝুলে পড়ে আছে। আবার কোথায়ও তার চুরি হয়ে গেছে।

দীর্ঘদিন :ধরে এমন হযবরল অবস্থায় পড়ে থাকলেও কাজের কোন অগ্রগতি নেই এই প্রজেক্টের। কারা করছে কেন করছে এর কার্যক্রম কি হবে কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে প্রকল্পের বরাদ্দ কত ইত্যাদি জানতে চেষ্টা করলেও উপজেলা বা জেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কেউ কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন।

নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলায় এমন এক প্রজেক্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। স্থানীয়রা এ প্রজেক্টকে 'বেওয়ারিশ প্রজেক্ট' অবাহিত করে বলছেন এর মাধ্যমে একটি মহল হয়ত কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রজেক্টটি কোনো দিন আলোর মুখ দেখবে না বলে তারা ধারনা করছেন। সেই সঙ্গে এই প্রকল্প ব্যয়ের টাকাও জলে যাওয়ার সংশয় প্রকাশ করছেন।

খোঁজ নিতে গেলে পূর্বধলা টেলিফোন ভবনে কর্মরত কর্মচারীরা জানান, 'এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না।' ইউএনও খবিরুল আহসান জানান, 'পূর্বধলায় এমন প্রজেক্ট বাস্তবায়নের বিষয়ে কেউ আমাকে জানায়নি। তাই বিষয়টি নিয়ে কিছুই বলতে পারব না।' নেত্রকোনা জেলা বিটিসিএল সহকারী ব্যবস্থাপক টেলিকম জাকারিয়া সোলায়মান অংকনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পূর্বধলায় হাওড় বাউর প্রজেক্টের কোনো প্রকল্পের কাজ চলছে কিনা তা তাদের জানা নেই। ময়মনসিংহ বিভাগের বিভাগীয় প্রকৌশলী টেলিকম কার্যালয় (বিটিসিএল) উপ-ব্যবস্থাপক (অ. দা.) হানিফ উদ্দিন জানান, 'প্রজেক্টগুলো আমাদের আওতাধীন না। এই প্রজেক্টের বিষয়ে তথ্য জানতে বিটিসিএল এমডি অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন।' পরে টেলি যোগাযোগ সুবিধা সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এ এম আব্দুলস্নাহ পাটওয়ারীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, 'এই প্রকল্পের আওতায় নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলায় ১৭৮টি পয়েন্টে ওয়াইফাই হটস্পট স্থাপন করা হবে। যার বেশির ভাগ হবে স্থানীয় বাজার ও ইউনিয়ন পরিষদে। প্রকল্পের উপকারভোগীরা হবেন এলাকার সাধারণ জনগণ। এর মধ্যে একটি কলেজ ও একটি মাদ্রাসাও রয়েছে। প্রকল্পটি ২০২৫ সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্পের আওতাধীন পোল স্থাপন, অপট্যিাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপন এতদসংক্রান্ত কাজগুলো বর্তমানে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে চলমান রয়েছে। কাজ শেষ হলে আমাদের কাছে হস্তান্তর করার পর বিস্তারিত বলা যাবে।'

অনলাইনে খোঁজ নিতে গিয়ে ২০২২ সালের ২৭ জুন, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বিএসএস) অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে- 'টেলিযোগাযোগ সুবিধা বঞ্চিতহাওড়, দ্বীপ ও দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে ডিজিটাল সংযোগ স্থাপনে দুই হাজার ২৬ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের আওতাধীন বিটিআরসির সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল (এসওএফ) এ প্রকল্পের অর্থায়ন করছে। এর মধ্যে আইসিটি বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল ৫০৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে টেলিযোগাযোগ সুবিধাবঞ্চিত এলাকাগুলোতে ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটি স্থাপন, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে দ্বীপ এলাকায় ৪৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নেটওয়ার্ক স্থাপন, টেলিটকের মাধ্যমে ৩শ' ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে হাওড় ও দ্বীপাঞ্চলে ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক স্থাপন, টেলিটকের মাধ্যমে হাওড়-বাওরের দ্বিতীয় স্তরের প্রকল্প সম্প্রসারণ এবং বিটিসিএলের মাধ্যমে ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে হাওড়-বাওর ও প্রত্যন্ত এলাকায় ব্রডব্যান্ড ওয়াইফাই সম্প্রসারণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে।'

এসব প্রকল্পের আওতায় নেত্রকোণার পূর্বধলায় হাওড় বাওর প্রজেক্টের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে আছে। চুরি হয়ে যাচ্ছে তার। প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশয় প্রকাশ করছেন এলাকাবাসী।

উপজেলার সদর বাজারের কম্পিউটার ব্যবসায়ী কেবিএম নোমান শাহরিয়ার বলেন, প্রকৃত পক্ষে এই প্রকল্পগুলো মানুষের কোন কাজে আসবে বলে মনে হচ্ছে না। যারা এই প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন তারা এর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লুটে নিয়েছেন বলে তিনি ধারণা করছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে