রোববার, ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

বগুড়ায় মুজিবের 'আঙুলে শাপলা ফোটালেন' উপজেলা প্রকৌশলী

ইমরান হোসাইন লিখন, বগুড়া
  ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
বগুড়ায় মুজিবের 'আঙুলে শাপলা ফোটালেন' উপজেলা প্রকৌশলী
বগুড়ায় মুজিবের 'আঙুলে শাপলা ফোটালেন' উপজেলা প্রকৌশলী

এডিপির অর্থ হরিলুটের উদ্দেশে সোনাতলা উপজেলা চত্বরে জয়বাংলা ফোয়ারা তৈরির নামে যে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়েছিল তা নানা জটিলতা পেরিয়ে অবশেষে শেষ হয়েছে। তবে ফোয়ারা তৈরিতে ইস্টিমেট অনুযায়ী যে ডিজাইন ছিল তা বাস্তবায়ন হয়নি। হরিলুটের এই বরাদ্দে যতগুলো কাজ ছিল তার সবগুলোতেই দেওয়া হয়েছে শুভাঙ্করের ফাঁকি। অর্থাৎ নানা অনিয়মের মাধ্যমে ৫০ ভাগ কাজ না করেই সম্পূর্ণ অর্থ উঠিয়ে ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টরা।

জয়বাংলা ফোয়ারা নামের এই লুটপাটের প্রকল্পের শুরুতে শেখ মুজিবুর রহমানের উঁচুকৃত তর্জনী আঙ্গুল তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ৫ তারিখে মুজিবের ওই আঙ্গুলটি ভেঙে দেওয়া হয়। পরে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার নিজের পকেটে ওঠানো অর্থ জাহির করতে মুজিবের এই আঙ্গুলের স্থানে একটি শাপলা ফুল তৈরি করেন। অর্থাৎ নিয়মবহির্ভূতভাবে তৈরিকৃত এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের মূল লক্ষ্য ছিল লুটপাট।

চলতি বছরের ২৩ আগস্ট দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার শেষ পৃষ্ঠায় 'উপজেলা চেয়ারম্যান ও প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে এডিপির অর্থ লুটের অভিযোগ' শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর থেকেই নড়েচড়ে বসে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তোড়জোর শুরু হয় অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করতে। কিন্তু এডিপির নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে মধ্যে বরাদ্দের কাজ শেষ করে বিল তুলবার নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখানো হয়। অসমাপ্ত কাজগুলোকে মিথ্যাভাবে সম্পন্ন দেখিয়ে বরাদ্দের টাকা তুলে উপজেলা প্রকৌশলীর কাছেই রেখে দেন। পরে সুযোগ বুঝে ইঞ্জিনিয়ার ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টরা ভাগবাটোয়ারা করে নেন। এ অনিয়ম এখন পর্যন্ত ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে। এডিপির এসব প্রকল্পের মধ্যে কিছু প্রকল্পের কাজ না করেই বিল উঠানোর সত্যতা পাওয়া গেছে। কিন্তু বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আনলেও এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

এডিপি প্রকল্পের নির্দেশিকা বইটিতে উপজেলা উন্নয়ন তহবিলের অর্থ দ্বারা যে ধরনের কাজ করা যাবে না উলিস্নখিত পৃষ্ঠার ২২টি নির্দেশনার ১৫ নম্বরে উলেস্নখ আছে যে, পৌর-এলাকায় কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে না। তবে জনস্বার্থে অতি জরুরি হলে উপজেলা পরিষদের সিদ্ধান্তক্রমে পৌর এলাকায় প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে। কিন্তু উপজেলা চত্বরে জয় বাংলা ফোয়ারা তৈরির নামে যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়েছে তা মোটেও জরুরি ছিল না। এছাড়া বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কলেজের ভবন মেরামত, গেইট নির্মাণ, বিভিন্ন স্থানে ছোট রাস্তা মেরামতসহ নানা ধরনের কাজ হয়েছে পৌর এলাকাতেই। এছাড়া এই বরাদ্দ থেকে বিভিন্ন সময় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কলম বিতরণ, ছাতা, মগ, ফাস্ট এইড বক্স, সেলাই মেশিন, গামবুট, কিটনাশক সিটানোর স্প্রে-মেশিনসহ নানা ধরনের সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। সব সামগ্রীর ওপরেই দলীয় মনোগ্রাম ও নেতাদের ছবি প্রিন্ট করে তা বিতরণ করা হতো- যা এডিপি প্রকল্পের নিয়ম পরিপন্থি।

এ সব বিষয়ে সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বীকৃতি প্রামাণিক বলেন, 'উপজেলা প্রকৌশলীর রেজুলেশনে নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে কাজটি করা হচ্ছে। ফোয়ারার বরাদ্দ থাকলেও তা না করে শুধু টাইলস লাগিয়ে কাজ সমাপ্ত করা হচ্ছে, এতে করে অনেক টাকা বেচে যাবে। যেহেতু এ কাজের সময় তিনি ছিলেন না, তাই এসব বিষয়ে প্রকৌশলী ভালো বলতে পারবেন বলে তিনি জানান।

এ বিষয় জানতে উপজেলা প্রকৌশলী মাহবুবুল হকের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে