শীতের আগমনে লেপ-তোষক তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। বিভিন্ন স্থানে লেপ-তোষক তৈরির দোকানগুলোতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। প্রতিনিধিদের পাঠানো বিস্তারিত খবর-
শায়েস্তাগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় সর্বত্রই গত কয়েক দিন থেকে একটু একটু করে শীত আসতে শুরু করেছে। শীতের আগমনে প্রত্যন্ত পলস্নী এলাকায় থেকে শুরু করে শহরের বিভিন্ন এলাকায় লেপ-তোষক তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কারিগররা। এবার একটু আগে থেকেই শীত নামতে শুরু করেছে। আগাম শীতে ধুনকর আর লেপ-তোষকের ব্যবসায়ীরা বেজায় খুশি। শায়েস্তাগঞ্জ পৌর শহরের বিভিন্ন হাট-বাজার ও দোকানে ব্যবসায়ীরা বিক্রির জন্য লেপ-তোষক মওজুদ করে রেখেছেন।
জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে ঠান্ডা বাতাস ও ঘন কুয়াশা পড়ছে। দিনে সূর্যের আলো থাকলেও সন্ধ্যার পর বৃষ্টির মতো কুয়াশায় চারদিকে ঢেকে যাচ্ছে। অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শায়েস্তাগঞ্জে শীত নামতে শুরু করেছে। আগাম শীতের কারণে বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় বেজায় খুশি ধুনকর আর গরম কাপড় ব্যবসায়ীরা। লোকজন নিজের পরিবারের সদস্যদের জন্য লেপ-তোষক সংগ্রহ করেছেন। তেপ-তোষাক তৈরির অগ্রিম বায়না নিচ্ছেন কারিগররা। টেইলারগুলোতেও ভিড় করছে মানুষ। বিভিন্ন ধরনের শীত বস্ত্র তৈরির পাশাপাশি কোট-প্যান্ট তৈরির চাহিদাও বেড়ে গেছে।
গত কয়েকদিন বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শায়েস্তাগঞ্জ দাউদনগর বাজার, পুরান বাজর, সুতাংবাজার ও আলীগঞ্জ বাজার লেপ-তোষক কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়েছে। এ দিকে খোলা বাজারে লেপ-তোষক তৈরির তুলার দাম ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। শায়েস্তাগঞ্জ পৌর শহর এলাকার লেপ-তোষক তৈরির কারিগর জানান, বাজারে প্রতি কেজি গার্মেন্ট তুলা ৫০ টাকা থেকে ৭০ টাকা, শিমল তুলা ৪০০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা, কার্পাস তুলা ও শিশু তুলা ১৭০ টাকা থেকে ১৯০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর তুলার মূল্য অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে পৌর এলাকা ও গ্রামাঞ্চলের গৃহবধূরা শীতের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে পুরান কাঁথা, কম্বলগুলো জোড়াতালী দিয়ে মেরামত করেছেন। শায়েস্তাগঞ্জে একটি লেপ বানাতে প্রকারভেদে ১২০০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে।
পৌর শহরের দাউদনগর বাজার এলাকার একজন ব্যক্তি জানান, গত বার ১০০০ টাকায় যে লেপ বানানো হয়েছিল এবার সেটা ১২০০ টাকা খরচ পড়ছে। শায়েস্তাগঞ্জ বালস্না রোড এলাকার এক ব্যক্তি একই কথা জানান, লেপ-তোষক প্রকারভেদে গত বছরের চেয়ে এবার ২০০-৩০০ টাকা বেশি খরচ হচ্ছে।
গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি জানান, দেখতে দেখতে চলে আসছে শীতকাল। আর কিছুই দিনের মধ্যেই স্পর্শ করবে শীতের ঠান্ডা হিমেল হাওয়া। শীত মানেই প্রশান্তির ঘুমের জন্য সবচেয়ে উপযোগী ঋতু। দিনে প্রচন্ড গরম আর ভোর রাতে বইতে শুরু করে হিমেল হাওয়া। সেভাবে শীতের সকাল শুরু না হলেও জলবায়ুর পরিবর্তনে অনুভূত হচ্ছে শীতের আমেজ।
আর এই প্রচন্ড শীতের মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি হিসেবে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে হিড়িক পড়েছে লেপ-তোষক বানানোর।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, লেপ-তোষক বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছে কারিগররা। উপজেলার মহিমাগঞ্জে কারিগর রশীদ ও মিদুল বলেন, প্রতিদিন তারা ২টা থেকে ৪টা লেপ-তোষক বানাতে পারেন। আর একটি লেপ-তোষক বানানোর মজুরি হিসেবে পারিশ্রমিক পান ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। তবে সাইজ অনুসারে প্রতিদিন ৬শ' থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত রোজগার হয়। সেই টাকা দিয়েই সংসার চালান।
লেপ কিনতে আসা মকবুল হোসেন বলেন, 'আসছে প্রচন্ড শীত, এখন দিনে গরম থাকলেও রাতে একটু একটু শীত অনুভব হয়। আর আমাদের এই জেলায় শীত বেশি হয়, তাই আগে ভাগে লেপ তৈরি করে নিতে এসেছি।'
এদিকে লেপ-তোষক দোকানদার সাইফুল ইসলাম শফিক বলেন, এখনো ঠিকমতো শীত পড়েনি। তবে রাতে হালকা হালকা শীত অনুভব হয়। তাই লোকজন শীত নিবারণের জন্য শীতবস্ত্রের প্রতি ঝুঁকছেন। উপজেলা শহরে অন্য অনেক দোকান থাকা শর্তেও প্রতিদিন তার দোকানে প্রায়ে ৭ থেকে ১০টি লেপ-তোষক অর্ডার পান।
তিনি আরও জানান, 'অন্য বছরের তুলনায় দামের এবার কাপড় ও তুলার দাম বেশি। যেমন শিমুল তুলা ৪৫০ থেকে ৫শ' টাকা প্রতি কেজি, সাদা (গার্মেন্টস তুলা) ৬০ থেকে ৭০ টাকা, প্রতি কেজি কালো রঙিন হলুদ লাল লীল রংগের গার্মেন্টস তুলা ৩৫ থেকে ৪০ টাকা প্রতি কেজি। কার্পাস তুলা ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি করি। বিভিন্ন কাপড়ের মান অনুসারে প্রতি গজ ৩৫ টাকা থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। তবে প্রতি লেপ ৫৫০ থেকে ১৫শ' টাকা এবং তোষক ৮শ' টাকা হতে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করি।